বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন রাবি উপাচার্য
বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এ তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে ও পক্ষপাতমূলক দাবি করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন উপাচার্য।
রোববার (২৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি৷
উপাচার্যের দাবি, তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির সব অভিযোগ অসত্য, বানায়োট ও ভিত্তিহীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান বলেন, যেকোনো আমলযোগ্য অভিযোগের তদন্ত বাঞ্ছনীয়। আমি তদন্তের বিরুদ্ধে নই। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো যথাযথ হলে তদন্তে আমার একশতভাগ সম্মতি আছে, তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে, আইনসিদ্ধ ভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন কমিটির মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। আমি আশা করেছিলাম সেই চিঠি বিবেচনায় নিয়ে চেয়ারম্যান পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু তা বাস্তবে ঘটেনি। বরং আমি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক। সুতরাং আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
উপাচার্য বলেন, আমি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকাস্থ অতিথি ভবন ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে হেকেপ প্রকল্পের সাড়ে ৩ কোটি টাকা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লাখ টাকা তছরূপের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করি। এসব অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ১৯৮৫ ও ১৯৯২ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী ২০১২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর সনাতন পদ্ধতির সঙ্গে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জিপিএ সংযোজন করে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ২০১২ সালের ১০ মে তারিখের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়। সাবেক উপাচার্য মুহম্মদ মিজান উদ্দীন দায়িত্ব গ্রহণের পর এ নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু পরে তিনি ২০১৪ সালে তার কন্যার এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-কে ভিত্তি ধরে শুধুমাত্র ইংরেজি বিভাগের নিয়ো যোগ্যতা পুনর্নির্ধারণ করেন। তার কন্যাকে ২০১৪ সালের নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার মাত্র ১০দিনের মাথায় ২০১৫ সালে সিন্ডিকেট সভায় সব বিভাগ ইনস্টিটিউটের জন্য অতি উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন নিয়োগ নীতিমালা অনুমোদিত হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করা হয়েছে।
অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রণীত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অতি উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এসব বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার জন্য প্রশাসনকে লিখিতভাবে অনুরোধ করে। তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পুনরায় নির্ধারণের জন্য ২০১৭ সালে ৭ সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভা অনুমোদনক্রমে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা প্রণীত হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দিয়ে এ নীতিমালা যথাযথ অনুসরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়নি দাবি করে উপাচার্য বলেন, ২০১৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ২৪টি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে কয়টি বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলেও নীতিমালা সম্পর্কে কোনো আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষক সমিতির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে নিয়োগ নীতিমালাকে জামাই ও মেয়েকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া যদি ইউজিসি তদন্ত কমিটি এমন মন্তব্য করে থাকে তাহলে সেই তদন্ত পক্ষপাতহীন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ।
সাইফুর/এসএম
আরো পড়ুন