করোনায় ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় দেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশু এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে।

ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর যৌথভাবে প্রকাশিত এশিয়ায় শিক্ষা খাতের ওপর ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও মোকাবিলা কার্যক্রম বিষয়ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ’ (সিটএন রিপোর্ট) শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেড় বছর পর এ বছরের ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

এখন চলতি বছর ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে অষ্টম, নবম, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একদিন করে ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমাগত স্কুল বন্ধ থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর, যার মধ্যে রয়েছে পড়াশোনার ক্ষতি; মানসিক দুর্দশা; স্কুলের খাবার ও নিয়মিত টিকা না পাওয়া; কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি; এবং শিশুশ্রম ও বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি। এই ভয়াবহ পরিণতিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ইতোমধ্যে অসংখ্য শিশুকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং অনেকগুলো আগামী বছরগুলোতে অনুভূত হতে থাকবে।

প্রতিবেদনে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউনিসেফের পরিচালক মার্কোলুইজি কোরসি বলেন, ‘শিক্ষা সেবার ব্যাঘাত শিশুদের ওপর, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা শিশুদের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। যখন স্কুল বন্ধ থাকে, তখন শিশুরা শেখার ও বেড়ে ওঠার সবচেয়ে বড় সুযোগটি হারায়।’

করোনার সময়ে বাংলাদেশে তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনের কাছেই দূরশিক্ষণ সেবা পৌঁছানো যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বলা হয়, বাংলাদেশে মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনের কাছে দূরশিক্ষণ সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, ‘১৮ মাস বন্ধ রাখার পর বাংলাদেশে এখন স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে বিনিয়োগ করার এখনই সময়।’

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এশিয়া অঞ্চলে ১ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, যা এই অঞ্চলের ২০২০ সালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫.৪ শতাংশের সমান।

প্রতিবেদনে এশিয়া অঞ্চলে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা বাজেট গড়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়।

বলা হয়, এশিয়া যদি আগামী নয় বছরে জাতিসংঘের ২০৩০ সালের এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য অর্জন করতে চায় তাহলে এ ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা বাজেট গড়ে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।