ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ২ ঘণ্টায় সমাধান করতে পারে: কচি

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ২ ঘণ্টায় সমাধান করতে পারে: কচি

কচি খন্দকার

আমিনুল ইসলাম শান্ত: জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা কচি খন্দকার। প্রায় আড়াই শ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। কেরাম কবি-এর মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন নাটকের রচয়িতাও তিনি। খসরু + ময়না, বাইসাইকেল, ভূগোল, অব দ্য ফুটবল-এর মতো দর্শকপ্রিয় নাটক নির্মাণ করেও ঢের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে নীরিক্ষাধর্মী নাটক নির্মাণে বেশি আগ্রহী। সম্প্রতি রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়েছিলেন কচি খন্দকার। এ সময় নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। এ আলাপচারিতার বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

রাইজিংবিডি: দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে জ‌ড়িত। বর্তমান মঞ্চনাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

কচি খন্দকার: মঞ্চনাটক সামাজিক একটি অঙ্গীকার। সামাজিক দায়বদ্ধতা, দেশের প্রতি প্রেম, টান …। গ্রুপ থিয়েটারের আগে থেকেই থিয়েটার করি। কিন্তু তখন এর শক্তিটা বুঝতে পারিনি। থিয়েটার করতে করতে এর মূল শক্তিটা উপলব্ধি করতে পারলাম। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখনই থিয়েটার দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৮০ সালের পর থেকে গ্রুপ থিয়েটারের চর্চা শুরু হয়। তারপর বুঝতে পারলাম— রং মেখে সং সেজে অভিনয় করাই থিয়েটার নয়। বরং এর মধ্যে একটা বক্তব্য আছে, একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। এসব বিষয়গুলো তখন মাথায় ঢুকলো। তারপর আস্তে আস্তে গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম।

রাইজিংবিডি: মঞ্চনাটকে সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে বললেন। বর্তমানে মঞ্চনাটকে এ বিষয় কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে?

কচি খন্দকার: সময়ের সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়ে থাকে। সমাজ বদলের হাতিয়ার নাটক— এ বিষয়ে আমি খুবই সজাগ ছিলাম। কারণ নাটক এত বড় শক্তি না। নাটক সমাজকে এক ধরনের ইন্সপায়ার করতে পারে। কিন্তু সমাজ বদলে দিতে পারে না। সমাজ বদল করবে রাজনৈতিক শক্তি। নাটক মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাংস্কৃতিক বোধ তৈরি করবে বা তার ভেতরে পরিচ্ছন্নতা আনবে, তাকে রুচিবান মানুষ হিসেবে তৈরি করবে। থিয়েটার মানুষকে বিপ্লবী করবে কিংবা বিপ্লবের আগুন ঢেলে দিবে এত বেশি অতি ব্যাপারটা নেই। মঞ্চনাটকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকবে। কিন্তু নাটকে মেসেজ থাকতেই হবে বিষয়টা তা নয়।

রাইজিংবিডি: ‌বলা যায়, টে‌লি‌ভিশন নাটকের গল্প থেকে প‌রিবার উ‌ঠে গে‌ছে। এর কারণ কী?

কচি খন্দকার: আসলে সবই আছে শুধু মস্তিষ্কটাই নেই। যারা নাটক বানাচ্ছেন, যারা নাটক লিখছেন তারা মস্তিষ্ক দিচ্ছেন না। এটাও সত্য আমাদের অনেক মেধাবী রয়েছেন। এই মেধাবীরা হয়তো দূরে সরে যাচ্ছেন, হয়তোবা তাদের সুযোগ আসছে না। হয়তোবা তারা করছেন না। আরেকটি কথা বলবো, কন্ডিশন মাথায় নিয়ে নাটক দেখা যাবে না। মানে— নাটকে এটা এটা থাকতে হবে, এটা এটা হতে হবে। কারণ নাটক যেকোনো বিষয় নিয়েই হতে পারে। গল্পে বাবার চরিত্র নাও থাকতে পারে। আবার আমাদের সমাজ তো পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন না। তাহলে পরিবারের গল্প থাকবে না কেন?

রাইজিংবিডি: তার মানে যে সংখ্যক নাটক নির্মিত হচ্ছে সেখানে পরিবারকেন্দ্রিক বেশ কিছু নাটক নির্মিত হতে পারে…

কচি খন্দকার: না না, সবকটা নাটকই পরিবারকেন্দ্রিক হতে পারে। আমি বারবার বলছি, সংশ্লিষ্ট মানুষের মাথাটা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। পরিবারকে কেন্দ্র করে যে গল্পটি বানাতে চাচ্ছি সেটা ট্র্যাডিশনাল হয়ে যাচ্ছে বা একই জিনিস দেখাচ্ছি কিনা। এই বিষয়গুলো যদি পরিষ্কার হয় তবে টিভি নাটক নতুন করে আসতে পারে। এখানে আর কোনো অন্তরায় দেখি না। মূল কথা: যে ব্যক্তি এটি উৎপাদন করবে তার মস্তিষ্ক পরিষ্কার থাকতে হবে, আধুনিক হতে হবে, স্বচ্ছ হতে হবে। তাকে পরিষ্কার বুঝতে হবে তাকে কী করতে হবে। এখন যারা বলেন, পুরোনো ওই নাটকটিই একমাত্র বিখ্যাত নাটক। আমি এই বিষয়টি মেনে নিতে পারি না। কারণ তখন একটি টেলিভিশনে পুরো মনোযোগ দিয়ে নাটকটি দেখতাম। সব মনোযোগ ওই একটি টেলিভিশনে ছিল। অন্যদিকে অন্য কিছু দেখার সুযোগ ছিল না। ওই সময়ের বিখ্যাত নাটকটি যদি এখন এই পরিস্থিতিতে প্রচার হতো তবে সেটারও অবস্থা বর্তমান সময়ের নাটকের পরিস্থিতির মতো হতো।

রাইজিংবিডি: ভালো নাটক নির্মাণের অন্তরায় হিসেবে বাজেটকে দায়ী করা হচ্ছে। নব্বই দশকে নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রেও বাজেট স্বল্পতা ছিল…

কচি খন্দকার: এখন অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। অনেকগুলো টেলিভিশন বেড়ে গেছে। আজকে আমাদের কাঠামো বেড়েছে। আগে নাটক নির্মাণের পাশাপাশি অন্য পেশা ছিল। কিন্তু বর্তমানে এখান থেকে সংসার, জীবন চালাতে হচ্ছে। সুতরাং বাজেট না থাকলে তো আমি এ পেশায় থাকতে পারব না। শুধু নাটকের বাজেট দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না, এখানে পরিচালকের বাজেটও থাকতে হবে। লাইটম্যান, মেকআপম্যান সহ অন্যদের বাজেট থাকছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। সবকিছু মিলিয়েই তো একটা বাজেট। আমরা ওয়েব সিরিজের বিশাল বাজেট দেখি। বাইরের দেশের টেলিভিশন নাটকের বড় বাজেট দেখি। আমাদের তো বাজেট বৃদ্ধির সুযোগ আছে। এমন তো নয় টেলিভিশন চ্যানেল নাটক থেকে আয় কম করছে! তারা ২০ টাকা আয় করে আমাদের ১৫ টাকা দিতে পারে। কিন্তু সেটা কই। সেটা তো দিচ্ছে না। তারা মনে করছে— আমি নাটক দিতে বাধ্য। আমার যেহেতু নির্মাণের যন্ত্রণা আছে, নির্মাণ আমার রক্তে মিশে গেছে সুতরাং কাজটি আমাকে করতেই হবে। যার কারণে পলিসি মেকাররা মনে করে, পরিচালকরা নাটক নির্মাণ করবেই!  আসলে ভালো নাটকের জন্য সবাইকে একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সুযোগ করে দিতে হবে ওই লোকটিকে যে ভালো গল্প লিখে, যে ভালো নির্মাণ করে, যে ভালো অভিনয় করে তাকে।

রাইজিংবিডি: আপনার দৃষ্টিতে ভালো নাটক কী?

কচি খন্দকার: আসলে আমার কাছে ভালো নাটকের সংজ্ঞা এক রকম, আরেকজনের কাছে অন্যরকম। আমার ভাবনা, যে নাটক আমার মাথাটাকে একটু নাড়া দিবে, মস্তিষ্কটাকে চিন্তা করার সুযোগ তৈরি করে দিবে। সহজভাবে নয় যেটাকে একটু চিন্তা করে বুঝতে হবে। যে নাটকের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে, সত্যিকার অর্থে যেটার মধ্যে একটা গবেষণা আছে। এটা আমিও যেমন বুঝব দর্শক তেমন বুঝবেন।       

রাইজিংবিডি: গু‌টি ক‌য়েক শিল্পী নি‌য়েই নির্মাতারা বে‌শি কাজ কর‌ছেন। এ‌তে ক‌রে নতুন শিল্পী যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেম‌নি কাজও ভা‌লো হ‌চ্ছে না। বিষয়‌টি কীভা‌বে দেখ‌ছেন?

কচি খন্দকার: এটা ভয়াবহ একটা সংকট। না, এটাকে সংকট বলব না। বরং যারা এটা তৈরি করছে এবং প্রচার করছে সমস্যাটা তাদের মধ্যে। টেলিভিশন যদি আজকে বলে— সিন্ডিকেট আমি মানি না। যে ভালো গল্প নিয়ে আসবে তার নাটকটি নিবো। তাহলেই এই সমস্যা থাকে না। চ্যানেল যখন মনে করে, নাটকে এক্স, ওয়াই, জেড অভিনয় করলেই হবে আমার কোনো পরিচালক দরকার নাই। এটা একটা ভয়ংকর কথা। আর এ কথা বলার পরই সিন্ডিকেট করার সুযোগ পায় কিছু লোক। তারা ভাবতে শুরু করে— আমরা অনেক মূল্যবান। আর তখনই তারা শক্তি প্রদর্শন শুরু করে। নাটক নির্মাণের প্রধান হলো পরিচালক। সেই তো এটা চূড়ান্ত করবেন। পরিচালককে বলতে হবে— আপনি শিল্পী নির্বাচন করেন। এক্স, ওয়াই, জেড অভিনয় না করলেই নাটক চলবে না এটা ভুল থিওরি।

রাইজিংবিডি: তাহলে মূল সমস্যা চ্যানেল কর্তৃপক্ষের?

কচি খন্দকার: হ্যাঁ, শতভাগ তাই। আগামীকাল থেকে কোনো খারাপ নাটক প্রচার হবে না— এই কথা যদি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বলে এই সমস্যার সমাধান দুই ঘণ্টার মধ্যে হবে। চ্যালেঞ্জ করে বলতেছি, এটা চ্যানেল কর্তৃপক্ষের দুই ঘণ্টার সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

রাইজিংবিডি: আপনার নির্মিত বাঙ্গি টে‌লি‌ভিশন নাটকে থেকে কেমন সাড়া পা‌চ্ছেন?

কচি খন্দকার: ভালো সাড়া পাচ্ছি।

রাইজিংবিডি: ফিল্ম নিয়ে আপনার প‌রিকল্পনা জানতে চাই?

কচি খন্দকার: সব পরিচালকেরই ফিল্ম বানানোর স্বপ্ন থাকে। কারণ এটাই তো চূড়ান্ত জায়গা। তবে আমার মনে হয়— একটা সার্ভে করা দরকার। সার্ভের বিষয় হলো— আমার ফিল্ম দর্শক দেখবে কিনা। দর্শকের আমার নির্মিত সিনেমা দেখার আগ্রহ আছে কিনা। আর আমি এই সার্ভেটা এখন করছি। 

ভিডিও :

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ আগস্ট ২০১৯/শান্ত/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়