ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে সিনেমা নেই কেন?

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে সিনেমা নেই কেন?

অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এর ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে জানাতে আমরা কতটা উদ্যোগী হয়েছি?

বাংলা চলচ্চিত্রের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। অথচ দুঃখের বিষয় ভাষা আন্দোলন নিয়ে তেমন কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়নি। বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমার প্রযোজক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার কাছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। সাধারণত একটা সিনেমা নির্মাণ করতে কত টাকা লাগে? এক কোটি, দুই কোটি। একটা উপন্যাস প্রকাশ করতে কত টাকা লাগে? ২০ হ্জার থেকে ৫০ হাজার টাকা। এত বছর পরও কয়টা বই প্রকাশ হয়েছে? বই না হলে সিনেমা নির্মাণ হবে কিসের উপর ভিত্তি করে? একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই আমাদের শোক বেড়ে যায়। তখন আমরা ভাষা নিয়ে কথা বলি। এই মাসটা শেষ হলেই আমরা ‘বাংলিশ’ হয়ে যাই। বাংলার সঙ্গে ইংলিশ বলতে না পারলে ধরে নেই লোকটি অশিক্ষিত। সরকারি কাগজে-কলমেই তো এখনও বাংলা ঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ইন্টার সিটি ট্রেন, বিআরটিসি বাস- এগুলোর বাংলা কোথায়? সরকার নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে জনগণও ঠিক হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে গেলে যে তথ্য দরকার সেগুলো পাওয়া কঠিন। যে কারণে সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না বলে মনে করি। সেই সময়ের পরিবেশ তৈরি করেত যে আয়োজন দরকার সেগুলোও করা এখন কঠিন। তবে আমরা আশাবাদী এখন এই বিষয় নিয়ে সিনেমা নির্মিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলো বিষয়। যে কারণে যে কোনো বিষয় নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের বিষয় একটি। জহির রায়হান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নির্মাণ করবেন ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর করতে পারেননি।’

একুশে ফেব্রুয়ারির গানগুলো চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়নি কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘গান ব্যবহার করতে হলে সিনেমায় ভাষা আন্দোলনের আবহ তৈরি করতে হবে। এরপর গান ব্যবহার করতে হবে। সরকার এই বিষয়টি নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে পারে। এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। প্রযোজকের উপর ছেড়ে দিলে সঠিক ইতিহাস আসবে না। কারণ প্রযোজক তার ব্যবসায়িক দিক চিন্তা করবে।’

বাংলাদেশের অসংখ্য চলচ্চিত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। তবে বর্তমানে চলচ্চিত্রের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি শব্দ। এখানেই শেষ নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও ইংরেজি ও হিন্দি শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও ২০১৫ সালে বিষয়টি আমলে নেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। বাংলা চলচ্চিত্রে ঢালাওভাবে ইংরেজি নাম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে তারা  উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু  কে শুনছে সে কথা? 

চলচ্চিত্রে আইটেম গানের ব্যবহার হচ্ছে। এসব গানে অশালীন শব্দ ও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? উত্তরে স্বনামধন্য সংগীত ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, ‘অশালীন শব্দ কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর! ইংরেজি শব্দ অকারণে করলে হবে না। আমরা এক সময় ফোক সংগীতেও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে দেখেছি। প্রচলিত ইংরেজি ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এই ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ঠিক ওখানে বসে না। একবার কথায় কথায় ইংরেজি শব্দ নিয়ে একটি গান লিখেছিলাম। ‘রিটার্ন টিকেট হাতে লইয়া আইসাছি এই দুনিয়ায়, টাইম হইলে যাইতে হবে যাওয়া ছাড়া নাই উপায়।’ এখানে ‘রিটার্ন টিকেট’, ‘টাইম’ এগুলো বলতে বলতে মানুষ অভ্যস্ত। যাই লিখি না কেন এর অর্থ ও কারণ থাকতে হবে।’

চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নাম নিবন্ধন করতে হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি থেকে। নির্মাণ শেষে চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য জমা দেয়া হয় সেন্সর বোর্ডে। স্বাভাবিক কারণেই এই দুই স্তরে এ ব্যাপারে কঠিন মনিটরিং হলে ইংরেজি নাম এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। অপ্রিয় হলেও সত্যি, বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ডের নামটিও ইংরেজিতেই সমধিক পরিচিত। চলচ্চিত্রে ইংরেজি নাম বাতিল করার পাশাপাশি সেন্সর বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে বাংলায় করা উচিৎ বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়