ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

এখন বেঁচে থাকাটাই জরুরি: ঐশী

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ১৬:১২, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
এখন বেঁচে থাকাটাই জরুরি: ঐশী

ফাতিমা তুয যাহরা ঐশী

এ প্রজন্মের শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাতিমা তুয যাহরা ঐশী। একক গান, কনসার্টসহ নানা প্রোগ্রাম নিয়ে বছরজুড়ে ব্যস্ত থাকলেও অন্য তারকাদের মতো তিনিও এখন ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। মহামারি করোনার প্রকোপে সৃষ্ট এই সংকটকাল কীভাবে পার করছেন তিনি? এ প্রশ্নের উত্তর যেমন দিয়েছেন, তেমনি একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হওয়ায় মানুষকে নানা পরামর্শও দিয়েছেন এই শিল্পী। তার সঙ্গে এ আলাপচারিতায় ছিলেন রাইজিংবিডির সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শান্ত।

রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?
ঐশী: আমরা এখন বড় ধরনের একটি সংকটের মুখোমুখি। তারপরও বলব, ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ। কারণ এই সময়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিযে কষ্টে সময় কাটাচ্ছেন তা বলার মতো না। এসব ভেবে খারাপ লাগলেও বলব, ভালো আছি। সুস্থভাবে, খেয়ে-পরে এই সময়টা কাটাতে পারছি সেটাই অনেক বড় বিষয়।

রাইজিংবিডি: ঘরবন্দি জীবনে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
ঐশী: বাসায়ই আছি। বাসাতেই সময় কাটছে। শুরুতে ভেবেছিলাম, কীভাবে সময় কাটাব! অন্য সময় বাইরে ব্যস্ত সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন বাসায় থেকেও সময়টা কাজে লাগাতে পারছি। এই কাজ করব, ওই কাজ করব কিন্তু সময় পাচ্ছিলাম না। এখন সেটা পারছি। অনেক কিছু এখন পরিকল্পনা করে করার সুযোগ হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাবা-মা আমাকে কিছু আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। নিজেও কিছু আইডিয়া তৈরি করেছি। সেগুলো করার চেষ্টা করছি। আর এই সময়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করার সময়। যা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমিও করছি। তাছাড়া পরিবারের সঙ্গে গল্প করছি, কখনো মুভি দেখছি, কখনো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একসঙ্গে আলাপ করছি। পাশাপাশি ইসলামিক কিছু নজরুল সংগীত কাভার করে প্রকাশ করছি। যেগুলো খুব সময়োপযোগী।

রাইজিংবিডি: নিশ্চয়ই অনেক কনসার্ট কিংবা একক গানের কাজ হাতে ছিল, যা করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে যদি বলেন—
ঐশী: ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আমার অনেকগুলো কনসার্ট ছিল। দশটি শো তো কনফার্ম বাতিল হয়েছে। আমার অনেকগুলো সলো কাজও তৈরি হচ্ছিল। যেগুলো নিয়ে বেশ বিস্তৃত পরিকল্পনা ছিল। এগুলো আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কিছু কিছু কাজ বাসা থেকে রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর অধিকাংশ কাজই আপাতত বন্ধ।

রাইজিংবিডি: কয়েক দিন আগে কয়েকজন শিল্পী মিলে করোনা সচেতনতায় একটি গান তৈরি করেছেন। লকডাউনের সময়ে গানটি কীভাবে করলেন?
ঐশী: প্রথমে গানটি করার জন্য বেলাল (বেলাল খান) ভাইয়া আমাকে প্রস্তাব দেন। আমিও গানটি করার জন্য রাজি হয়ে যাই। তারপর ডেমো পাঠান। আমার বাসায় রেকর্ডিংয়ের একটি হোম সেটআপ আছে। সেখানে রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেই। এই কাজটি আমরা প্রত্যেকে যার যার বাসা থেকে করেছি। পুরো গানের রেকর্ড শেষ হওয়ার পর ভিডিও যার যার বাসায় নিজেরা তৈরি করি। সবশেষে দেখি চমৎকার একটি গান দাঁড়িয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানুষের ভয়-ভীতি দূর করা ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য এই গান তৈরি করা হয়েছে। গানটি এটা প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ যুদ্ধ দিনগুলোতে শিল্পীরা মানুষের পাশে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলার শিল্পীরাও তাদের কণ্ঠ দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।

রাইজিংবিডি: অনেক সাধারণ মানুষ কষ্টে সময় কাটাচ্ছেন। আপনি কী ব্যক্তিগতভাবে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন? 
ঐশী: সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাকেও সেসবে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমিও সাধ্যমতো এসবে অংশগ্রহণ করেছি। এছাড়া কিছু বিষয় নিয়ে নিজেও ভাবছি। সেগুলো করব। আর খেটে খাওয়া মানুষদের এখন ঘরবন্দি থাকাটা খুব কষ্টের। কিন্তু বেঁচে থাকলে কাজ করা যাবে। এখন বেঁচে থাকাটাই জরুরি। এজন্য ঘরবন্দি থাকাও জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, না খেয়ে মানুষ মরবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। সাংসদদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাছাড়া ডিসি, ইউএনও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা করে আসছেন। ধীরে ধীরে সবার কাছে সহায়তা পৌঁছে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো—দান করে অনেকে ছবি তুলছেন। ছবি তোলা ঠিক আছে, কিন্তু যাকে দান করছেন তার ছবি যেন প্রকাশ করা না হয় এটা আমার অনুরোধ। কারণ ওই মানুষটিরও সমাজে সম্মানজনক একটি অবস্থান রয়েছে।

রাইজিংবিডি: আপনি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। এই দুঃসময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করছেন কিনা?
ঐশী: আমি এক বছর পর ইন্টার্ন করব। এখন ইন্টার্ন করলে হাসপাতালে থাকতাম। তাহলে মানুষকে সেবা দেওয়ার সুযোগ হতো। এ জায়গা থেকে প্রথমে খুব মন খারাপ হচ্ছিল। পরে চিন্তা করলাম, বাসায় বসেও তো কিছু করা যায়। কারণ এখন আধুনিক যুগ। ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েও মানুষকে সচেতন তো করতে পারি। তারই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করছি। সেগুলো আমার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে আপলোড করছি। মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ ভিডিও দেখে মানুষ অনেকটা সচেতন হচ্ছেন। পাশাপাশি কিছু বিষয়ে তাদের মনে প্রশ্নও জাগছে। যেগুলো আবার আমাকে জানাচ্ছেন। আমি আবার সেসব প্রশ্নের উত্তর করছি মেসেজ বা মন্তব্য করে। আবার দর্শকদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়েও আলাদা করে ভিডিও তৈরি করছি। আমার মনে হচ্ছে, এসব কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি।

রাইজিংবিডি: করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা দরকার। এ ক্ষেত্রে আপনার কী পরামর্শ থাকবে? 
ঐশী: সংক্রমণ রোধে প্রচুর ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এসব ভিডিও নিশ্চয়ই দেখেছেন। শুধু দেখলে হবে না, এসব মানতে হবে। হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই, দয়া করে কেউ বাসার বাইরে বের হবেন না। সবাই বাসায় থাকুন। যদি খুব জরুরি কাজে বের হয়েও থাকেন তবে ফিরেই হাত ধোয়া থেকে শুরু করে জামা-কাপড় সব পরিষ্কার করুন। আবারো বলছি, কারো সংস্পর্শে না গেলে আপনি সংক্রমিত হবেন না। ফলে আপনি ভালো থাকবেন, আপনার পরিবার ভালো থাকবে। পরিবারের জন্য হলেও ঘরে থাকুন।

 

ঢাকা/শান্ত
 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়