ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘ঘটনাটা যৌনকর্মীদের, এতেই বিপত্তি!’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ঘটনাটা যৌনকর্মীদের, এতেই বিপত্তি!’

সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে থাকে। যে কারণে চলচ্চিত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সমাজে উপেক্ষিত কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির বিশেষ কোনো অবদানও হতে পারে চলচ্চিত্রের বিষয়। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধে যৌনকর্মীদের অবদান নিয়ে ‘লীলামন্ত্রন’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিপত্তিতে পড়েছেন পরিচালক। কারণ মুক্তিযুদ্ধে যৌনকর্মীদের অবদান তুলে ধরায় সিনেমাটির মুক্তি আটকে গিয়েছে।

দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় একাত্তরে চাষী, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, কৃষক, ডাক্তার, রাজনীতিবিদসহ সকল শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সমাজের উপেক্ষিত যৌনকর্মীরাও এই ভয়াবহতার বাইরে ছিল না। তাদেরও ছিল সমান অংশগ্রহণ। এটিই ‘লীলামন্থন’ চলচ্চিত্রের বিষয়। জাহিদ হোসেন পরিচালিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না, মৌসুমী, পপি, শাহনূর, মুক্তি, দীঘি, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, আনোয়ারা, শহিদুল আলম সাচ্চু, মিশা সওদাগর প্রমুখ।

চিত্রনায়ক মান্না সিনেমাটি অসমাপ্ত রেখে না ফেরার দেশে চলে যান। মান্নার মৃত্যুর পর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে এটি। মান্না সিনেমাটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছিলেন। বাকি ১০ শতাংশ কাজ পরিচালক ডামি চরিত্র ব্যবহার করে ২০১১ সালে কাজ শেষ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এ সিনেমায় যৌনকর্মীদের কথা বলা হয়েছে। যে কারণে এই সিনেমা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা। ইতিমধ্যে দুইবার নিষেধের গণ্ডি পেরুতে হয়েছে পরিচালককে। তবু শেষ রক্ষা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে পরিচালক জাহিদ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘ঘটনাটা যৌনকর্মীদের, এতেই বিপত্তি! ‘লীলা মন্থন’ সিনেমাটি প্রথমে সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হওয়ায় বোর্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আগে প্রদর্শন করার নির্দেশ দেয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিনেমাটি দেখে ছোট ছোট দুটি দৃশ্য পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী সংশোধন করে সিনেমাটি সেন্সরে জমা দেওয়া হয়। এর মাঝে আবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে চিঠি পাঠানো হয় সেন্সর বোর্ডে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—সিনেমাটিতে যৌনকর্মীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান দেখানো হয়েছে। তাই সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এর কারণ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্যাখ্যা দিয়েছে, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ একটি পবিত্র বিষয় তাই এতে যৌনকর্মীদের অবদান ফুটিয়ে তুললে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা হবে। তাই এটা প্রদর্শনের অযোগ্য।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এরপর আপিল বোর্ডে যাই। আপিল বোর্ড সিনেমাটি দেখেন। দেখার পরে তারা বলেন, ‘সমাজে এত বিষয় রেখে যৌনকর্মীদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন কেন?’ তখন তাদের বলি, ‘যৌনকর্মীদের অবদান মুক্তিযুদ্ধে ছিল। এটা বাস্তবতা। এটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারপরও আপিল বোর্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্দেশ বজায় রেখেছেন।’’

‘এখন আমাদের একটাই রাস্তা আইনের আশ্রয় নেওয়া। সিনেমাটি বড় আয়োজনের মাধ্যমে নির্মাণ করেছি। এখানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা অভিনয় করেছেন।’ বলেন নির্মাতা জাহিদ হোসেন।


ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়