ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সেন্সরের আগে সিনেমার গান, ট্রেইলার প্রকাশ কতটা আইনসম্মত?

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সেন্সরের আগে সিনেমার গান, ট্রেইলার প্রকাশ কতটা আইনসম্মত?

ছবির কোলাজ

করোনা মহামারির কারণে সবাই এখন ঘরবন্দি। সিনেমা হল বন্ধ গত দুইমাস ধরে। দর্শক এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছেন। এদিকে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই চলচ্চিত্রের গান, ট্রেইলার, পোস্টার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।

সিনেমার একটি গান, টিজার, পোস্টার ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করার পরপরই কোটি কোটি দর্শক তা দেখে থাকেন। সিনেমাটি মুক্তি পেলেও এত সংখ্যক বাংলাদেশি দর্শক হলে গিয়ে এটি দেখেন না। সে হিসাবে অনলাইনে দর্শক এখন অনেক বেশি।

সিনেমার প্রচারের অংশ হিসেবে শুটিং থেকে শুরু করে মুক্তি পর্যন্ত অসংখ্য স্থিরচিত্র, পোস্টার, গান, টিজার, ট্রেইলার, বিহাইন্ড দ্য সিন ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে আসছে সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। এমনো দেখা গেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে সিনেমার প্রচার চালানো হয়েছে কিন্তু সেন্সর বোর্ডে সিনেমাটি প্রদর্শিত হওয়ার পর তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সিনেমার একটি গান ও টিজার ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে দর্শক হলমুখী হন। সিনেমা মুক্তির পর অনেক সময় দেখা যায়, এসব গান বা টিজারের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ সেন্সর বোর্ডে কর্তনের পর তা পরিবর্তন করা হয়। এতে করে দর্শক প্রতারিত হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ড একটি সিনেমার গান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি দৃশ্য যত্নসহকারে দেখে থাকেন। এমনকি সিনেমার পোস্টার দেয়ালে সাঁটানোর আগে সেন্সর বোর্ড থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেন্সর বোর্ড কোনো দৃশ্য নিয়ে আপত্তি করলে সে দৃশ্য কর্তন করে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যায়, সিনেমার গান, টিজার, ট্রেইলার, পোস্টার সেন্সর বোর্ডের অনুমতি পাওয়ার পূর্বেই ইউটিউব, ফেসবুকে প্রকাশ করে সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া এসব গান, টিজার ও ট্রেইলার দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোও অহরহ খবর প্রকাশ করে থাকে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ডের নজরদারি কতটা রয়েছে? সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়া সিনেমার গান ও ট্রেইলার প্রকাশ কতটা আইনসঙ্গত?

এ বিষয়টি জানতে চাইলে সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সেন্সর বোর্ডের অনুমতি বিহীন সিনেমার প্রচারণা সেন্সর বোর্ডের নিষেধ আছে। সেন্সর না হওয়ার আগে কোনো প্রচার করা যাবে না। সেন্সর বোর্ডের অনুমতি পাওয়ার আগে প্রচার চালানো নিয়ম বহির্ভূত। যদিও আমরা বিষয়টি শিথিল করার জন্য বলেছিলাম। যেহেতু সেন্সর বোর্ড থেকে বিষয়টি শিথিল করা হয়নি সেহেতু এটা অনিয়ম। সেন্সর বোর্ডের অনুমতি ছাড়া পোস্টার, ব্যানারসহ কোনোরকম প্রচার করা যাবে না বলে একটি ধারায় উল্লেখ আছে।’

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি, মধুমিতা সিনেমা হলের স্বত্ত্বাধিকারী ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার আগে প্রচারে যাওয়া সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। ধরেন, একটা যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। ভারত সিনেমাটির টিজার, গান ইউটিউবে প্রকাশ করল। সেটা কিন্ত ‍বাংলাদেশের মানুষও অনায়াশে দেখতে পারবেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ঠিক নয়। দেখা গেল, সেন্সর বোর্ডে গানের দৃশ্য কর্তন করা হলো। কিন্তু এর আগেই তো ইউটিউবে গানটির প্রচার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সেন্সর বোর্ডের অ্যাকশনে যাওয়া উচিত। সেন্সর বোর্ড থেকে যদি নোটিশ দিয়ে দেওয়া হয় যে, সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার আগে ইউটিউবে গান প্রচার করলে আমরা ছাড়পত্র দেব না। তা হলে এই বিষয়গুলো আর ঘটবে না।’

চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সেন্সরের আগে আমরা তো হার্ড কপি প্রকাশ করতে পারছি না। পোস্টার দেয়ালে লাগাতে পারছি না, প্রেক্ষাগৃহে ট্রেইলার প্রদর্শন করতে পারছি না। সেন্সরের পরে এগুলো করতে হচ্ছে। ইউটিউবে সিনেমার প্রচারে কোনো বাধা নেই। ইউটিউব তো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। ইন্ডিয়াতে কিন্তু সেন্সরের আগেই পোস্টার লাগাতে পারে কিন্তু আমরা পারছি না।’

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই নাজুক অবস্থায় প্রচারণা অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয়। অনলাইনসহ সকল মাধ্যমে এর প্রচারণা খুবই দরকার। সেক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার আগে প্রচারে আসা যাবে না এই নিয়মটি শিথিল করা প্রয়োজন বলে অনেক চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মত দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র হাতে পেয়েও দীর্ঘ সময় প্রচার করতে পারে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। গাফলতি আর নোংরা প্রতিযোগিতার কারণে সিনেমা মুক্তির আগেই সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়া সিনেমার প্রচার চালানো হচ্ছে।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়