ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘কেউ আমাদের খবর রাখে না’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘কেউ আমাদের খবর রাখে না’

মোহাম্মদ ইসহাক, মোহাম্মদ রশিদ

চলচ্চিত্রের আঁতুর ঘর খ্যাত বিএফডিসিতে লাইট, ক্যামেরার ঝলকানি ছিল না। পরিচালকের কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়নি ‘অ্যাকশন-কাট’। এখনো এফডিসি নীরব, নিস্তব্ধ।

করোনা সংকটের কারণে গত দুই মাস এফডিসির সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সবাই নিরাপদে পরিবারপরিজন নিয়ে ঘরবন্দি ছিলেন। কিন্তু এফডিসির মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়মিত আজান, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া করাসহ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। ঈদের দিনটাও সিঁড়ির নিচে শুয়ে কেটেছে। এফডিসির কেউ তাদের খবরও নেয়নি। খোঁজ নিয়ে এমনটাই জানা যায়।

মোহাম্মদ ইসহাক ১৯৬৯ সালে এফডিসির মসজিদে যুক্ত হন। মসজিদ নির্মাণের শুরু থেকেই তিনি এই মসজিদের ইমামতি করে আসছেন। রাজ্জাক, জমিস, মান্না, খলিল, মিজু আহমেদ থেকে শুরু করে দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রয়াত তারকাদের জানাজা তিনিই পড়িয়েছেন।

তার ভাষ্য মতে, নিজে কাঁদামাটি টেনেছি এই মসজিদ নির্মাণের সময়। সেই শুরু থেকে মাস্টার রুলে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের সরকারিকরণ করা হয়নি। শেষ বয়েসে একটাই চাওয়া মৃত্যুর আগে যেন সরকারি করা হয়! এফডিসির সকল শিল্পীদের জন্য আমরা দোয়া করি। অনেকের জানাজা নামাজ পড়িয়েছি। কিন্তু কেউ আমাদের খবর রাখে না।

মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ রশিদ ১৯৮০ সাল থেকে এফডিসির মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশের এই দুর্যোগময় সময়ে তার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি বলে আক্ষেপ করেন রশিদ।

রশিদ বলেন, ‘যৌবন বয়স থেকে এফডিসির মসজিদে আছি। বাকি জীবনটাও এখানেই কাটাতে চাই। করোনার ভয়ে সবাই চলে গেছেন। আমরা দু-চারজন যাইনি। এখানেই আল্লাবিল্লাহ করেছি। মসজিদের কাজ চলছে বলে পুরোনো মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদের কাজ চলছে। তাই আপাতত সাউন্ড কমপ্লেক্সের সিঁড়ির নিচে আছি। ঈদও কেটেছে এই সিঁড়ির নিচে শুয়ে। ঈদের আগে জায়েদ খান কিছু টাকা দিয়েছিলেন। আর গতকাল আমাদেরকে কাপড়, গেঞ্জি, গামছা কিনে দিয়েছেন তিনি।’

করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি ছুটি গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। এফডিসির সকল অফিস অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ৩১ মে সব খুলে দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত নেই কোনো সিনেমার শুটিং। চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর সদস্যদের চায়ের টেবিলে হয় না কথার বাহাস, ক্রেতাদের অপেক্ষায় বসে নেই ঝালমুড়ি বিক্রেতা। এমনকি চলচ্চিত্রের বেকার লোকগুলো কাজের সন্ধানে এখন আর এফডিসির পার্কে অপেক্ষা করেন না। অন্যদিকে এফডিসিতে কেউ না থাকলেও নিরাপত্তাকর্মীরা এখনো নিয়ম করে জনমানবহীন এফডিসি পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়