ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্মৃতিটুকু থাক

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ১৯ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
স্মৃতিটুকু থাক

ফ্লোর ভাঙার কাজ চলছে

চলচ্চিত্রের আঁতুর ঘর বিএফডিসি। এফডিসি ঘিরে প্রতিটি চলচ্চিত্রকর্মীর অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন শুটিং ফ্লোর শিল্পীদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের অভিযোগ তাদের সেই স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে, ফ্লোর ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।  

বিএফডিসির ৩ এবং ৪ নং ফ্লোর ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। এখানে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এটি হবে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভবন। ভবনে শুটিং ফ্লোর, সিনেপ্লেক্সও থাকবে। কিন্তু ৩ এবং ৪ নং ফ্লোরে অনেক শিল্পীর জীবনে প্রথম শুটিং হয়েছে। অনেকের ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় কেটেছে এই দুই ফ্লোরে। কেননা ফ্লোর দুটি বেশ পুরনো। বিশেষ করে নায়করাজ রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, কবরী, সুচন্দা, শাবানা, ববিতাসহ অনেকেই এই দুই ফ্লোরে অসংখ্যবার শুটিং করেছেন। এ প্রজন্মের শিল্পীদেরও এই দুই ফ্লোর ঘিরে স্মৃতি রয়েছে। ফ্লোর ভেঙে ফেলার কারণে তারা মনে করছেন- তাদের স্মৃতিটুকু একেবারেই হয়তো মুছে যাবে এখান থেকে।

এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, ‘এই এফডিসিতে বিখ্যাত নির্মাতারা কাজ করেছেন। তাদের হাত ধরে অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী তৈরি হয়েছে। তাদের দেখানো পথে এক সময় আমরা হেঁটেছি। যে কারণে এই ফ্লোরের প্রতিটি দেয়ালে আমাদের স্মৃতি রয়েছে। ফ্লোরগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে- শুনতেই খারাপ লাগছে! এগুলো ভেঙে ফেললে পরবর্তী প্রজন্ম দেখতেও পাবে না বিখ্যাত নির্মাতা ও কলাকুশলীরা কোথায় শুটিং করেছেন। আমি মনে করি, এগুলো না ভেঙেও আধুনিক ভবন তৈরি করা যেত।’

স্মৃতিময় এই স্থানগুলো সংরক্ষণ করা উচিত বলেও মনে করেন এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা। ফ্লোর ভেঙে মার্কেট করার বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে ববিতা বলেন, ‘শিল্পীদের দেখতে দর্শক টিকিট কেটে হলে যায়। একই স্থানে মার্কেট ও শুটিং ফ্লোর থাকলে শিল্পীদের প্রইভেসি নষ্ট হবে। ফলে হলে গিয়ে দর্শক সিনেমা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।’

প্রবীণ চিত্রনায়ক আলমগীরসহ এই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানসহ অনেকেই ববিতার কথার সঙ্গে একমত। এ প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ বাকি। সেগুলোতে আগে হাত দেওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে হঠাৎ শুটিং ফ্লোর ভেঙে মার্কেট ও সিনেপ্লেক্স করার যুক্তি আমি খুঁজে পাচ্ছি না। মার্কেট আমাদের দরকার নেই। আমাদের ভালো সিনেমার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দরকার। সেখান থেকে ভালো শিল্পী, নির্মাতা, কলাকুশলী বের হবে। ফ্লোর ভেঙে ফেলার পক্ষে আমি নই।’

এক সময়ের ব্যস্ততম শিল্পী শাকিল খান। নব্বইয়ের দশকে তিনি এই দুই ফ্লোরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের শুটিং করেছেন। ফলে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেখানে। শাকিল খান বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, তখন এই ফ্লোরগুলোতে পা দিলেই ভাবতাম- এখানে কিংবদন্তী শিল্পী, নির্মাতারা কাজ করেছেন। তখন এক ধরনের অনুপ্রেরণা পেতাম। আসলে এখন জরুরি হলো, শিল্পীদের কাজের ব্যবস্থা করা। ফ্লোর ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন করলে হয়তো এফডিসির লাভ হবে, কিন্তু শিল্পী বা কলাকুশলীদের কি লাভ হবে আমি বুঝতে পারছি না।’

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়