চঞ্চল চৌধুরীর বিনীত অনুরোধ
মা দিবসে তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মায়ের সঙ্গে একটি ছবি পোষ্ট করেন চঞ্চল চৌধুরী। এতে তার মায়ের মাথায় সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা পরা দেখা যায়। এরপর জনপ্রিয় এই অভিনেতার ধর্মীয় পরিচয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। কেউ কেউ কটুক্তিও করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ মে) ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। এই অভিনেতা জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি শুধু বিব্রতই নই, সেই সঙ্গে মানসিকভাবে খুব অস্বস্তিকর সময় পার করছেন। পাশাপাশি এই বিষয়টাকে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
চঞ্চল চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নিয়ে গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। এতে আমি শুধুই বিব্রত নই, সেই সাথে মানসিকভাবে খুব অস্বস্তিকর সময় পার করছি। এখন নিশ্চয়ই আমার পরিচয় নিয়ে কারো কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে নতুন করে আমার পরিচয় জানার জন্য কেউ আগ্রহী হলে ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে ইনবক্স করলে ধন্য হবো। তবে পরিচয়ের নামে, এরকম পরিস্থিতি কাম্য নয়। গুটি কতক মানুষ যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন, ধর্ম পরিচয় জানতে চাওয়াটা কি কোন অপরাধ? তাদের জন্য বলছি অপরাধ নয়, এটা যেমন ঠিক, আবার বার বার এই পরিচয়টা জানতে চাওয়ার মধ্যেও তেমন কোন বাহাদুরী বা পৌরুষত্ব নেই।'
তিনি আরো লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাকে ভালোবাসে,আমার কাজ পছন্দ করে, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যারা আমাকে ভালোবেসে আমার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন, সকল ধর্মের মানুষ আমার মাকে মা ডেকেছেন, আমার পরিচিত জন, শুভানুধ্যায়ী, সহকর্মীসহ দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষ খোঁজ নিয়েছেন, আমি এ হেন পরিস্থিতিতে কেমন আছি। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আর সামান্য সংখ্যক মানুষ নানান বিব্রতকর প্রশ্ন করে ও গালি গালাজ করে বা আমাকে বর্জন করেও, পরবর্তীতে তাদের কমেন্টগুলো ডিলিট করে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও আমার ভালোবাসা রইলো। কারণ তারা এক পর্যায়ে বাস্তব পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছেন। যে কারণে অনেকেই পরবর্তীতে আমাকে দেয়া গালিগুলো আর খুঁজে না পেয়ে উল্টো অভিযোগ করেছেন, বলেছেন। কই আমার বিরুদ্ধে তো কেউ তেমন কিছুই লেখেনি। এ নিয়েও আর কোন বিতর্কের দরকার নেই।'
সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ করে তিনি লেখেন, ‘আপনাদের সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, এই বিষয়টাকে কেউ ধর্মীয় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউই কাউকে অসম্মান করে কিছু লিখবেন না। পারলে গঠনমুলক কিছু লিখুন। সেটাই হবে সভ্য মানুষের কাজ। শুধু একটি কথা সবাইকে বলতে চাই, আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, যে পেশারই হোন না কেন, আপনার কর্ম দিয়ে দেশের জন্য কতটুকু মঙ্গল করছেন, সেটাই আসল কথা। সব ধর্মেই ভালো মানুষ,মন্দ মানুষ রয়েছে। আমার মনে হয় সকল মানুষের পরিচয়টা কর্ম,সহনশীলতা,আর ধর্মীয় উদারতা দিয়ে হোক। আমাকে নিয়ে অতিঃসত্বর এই আলোচনারও পরিসমাপ্তি হোক। আমার পরিচয় আমি মানুষ, আমি বাংলাদেশি, আমি বাঙালি। আর ধর্ম পরিচয়টা প্রত্যেকের মতই জন্মগত । এতে কারো কোন আপত্তি থাকলেও, আমার কোন সমস্যা নেই।’
এই অভিনেতার ভাষায়, ‘আর সবচেয়ে বড় যে পরিচয়ে আপনারা আমাকে চেনেন সেটা হলো, আমি একজন শিল্পী। আমার কাছে হিন্দু,মুসলমান,বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই সমান এবং আপন। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক। সারা পৃথিবী জুড়ে যে করোনা সংকট চলছে, এই দুঃসময়ে সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। আসুন, আমরা অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। মানবতার জয় হোক। সবার জন্য ভালোবাসা।’
ঢাকা/রাহাত সাইফুল/মারুফ
আরো পড়ুন