ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘নয়া দামান’ রচয়িতার নাম নিশ্চিত হতে পারিনি: তসিবা  

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১১, ১৪ মে ২০২১   আপডেট: ০১:০১, ১৫ মে ২০২১
‘নয়া দামান’ রচয়িতার নাম নিশ্চিত হতে পারিনি: তসিবা  

তসিবা বেগম

সিলেট অঞ্চলের লোকগীতি ‘নয়া দামান’। কয়েক মাস আগে এ গানে কণ্ঠ দেন সিলেটের তরুণী তসিবা বেগম ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তরুণ মুজা। সম্প্রতি গানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। গানটি এখন মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গানটির কথা ও মূল গীতিকার নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এসব বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়েছেন গানটির অন্যতম কণ্ঠশিল্পী তসিবা বেগম। আলাপচারিতায় ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শান্ত।

রাইজিংবিডি: আপনার নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তারকা খ্যাতি কীভাবে উপভোগ করছেন?

তসিবা: আমাকে সবাই চিনে না, কিন্তু আমার সাউন্ডটা মানুষ ব্যববহার করছেন। এটি আমার কাছে অনেক বেশি আনন্দের। আমাকে নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে খবর প্রকাশ হচ্ছে— এসব ব্যাপার ভালো লাগছে। তবে আনন্দের পাশাপাশি মন অনেক খারাপও!

রাইজিংবিডি: কী কারণে মন খারাপ?

তসিবা: আসলে আমি এক কথা বলছি, মানুষ বুঝে নিচ্ছেন অন্য অর্থ। এক ভিডিওতে আমি বলেছিলাম, গানটি আমার। আমার বলতে গানটি আমি গেয়েছি। কিন্তু এই গান অনেক পুরোনো তা তো কারও অজানা নয়! আমি বলিনি, গানটি আমি লিখেছি কিংবা সুর করেছি। কিন্তু মানুষ অন্য  অর্থ করে বিতর্ক তৈরি করছেন। 

রাইজিংবিডি: ঈদুল ফিতর কীভাবে উদযাপন করবেন?

তসিবা: পরিবারের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো। ঘুরে বেড়ানোরও ইচ্ছা রয়েছে। 

রাইজিংবিডি: এখন কী সেলফি তোলার জন্য মানুষ বেশি আবদার করছেন?

তসিবা: হ্যাঁ  (হাসি)। গানের ভিডিও সম্পাদনার কাজে বের হয়েছিলাম। আমার মুখে মাস্ক ছিল। তারপরও একজন এসে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি তসিবা আপু না?’ মাস্ক পরে থাকলেও অনেকেই চিনে ফেলছেন। এসব ছোট ছোট বিষয়গুলো খুব ভালো লাগছে।

রাইজিংবিডি: ‘নয়া দামান’ গানটি তৈরির পেছনের গল্প জানতে চাই।

তসিবা: দুই-তিন মাস আগে টিকটকের জন্য গানটি প্রথম গাই। টিকটকের জন্য বেশ কিছু গান গেয়েছি। এসব গান শুনে মুজা ভাই আমার সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ করেন এবং ওনার সঙ্গে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমিও গাইতে রাজি হয়ে যাই। পরে দুটি গান রেকর্ড করে পাঠাই। কিন্তু মুজা ভাই পছন্দ করেন না। পরে আরও কয়েকটি গান দিই। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘নয়া দামান’। এ গানটি চূড়ান্ত হওয়ার পর স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করে মুজা ভাইকে পাঠিয়ে দিই। তার তিন দিন পর গানটি তার ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেন। পরের দিন গানটি আমি আমার টিকটকে পোস্ট করি। দুই দিনে গানটির ভিউ দাঁড়ায় ২০ লাখ। গানটি এখন দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভারত-পাকিস্তানেও এটি ছড়িয়ে পড়েছে।

রাইজিংবিডি: কণ্ঠশিল্পী মুজা তার ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশ করেছেন। এ গানে কণ্ঠ দেওয়ার আগে তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি করেছিলেন?

তসিবা: না। আমি মুজা ভাইয়ের সঙ্গে কোনো চুক্তি করিনি। এ গান গাওয়ার বিনিময়ে তার কাছ থেকে কোনো টাকাও নিইনি। কোনোরকম অর্থনৈতিক লেনদেন ছাড়াই মুজা ভাই আমাকে একটি চুক্তিপত্রে সাইন করতে বলেছিলেন। পরে ভাবলাম, যেহেতু টাকা-পয়সার কোনো লেনদেন হয় নাই, তা হলে চুক্তিপত্রে কেন সাইন করবো! তবে ক্রেডিট লাইনে শুধু আমার নামের ‘তসিবা’ অংশটা ব্যবহার করেছেন। সত্যিকার অর্থে এটা নিয়ে আমার খুব মন খারাপ। কারণ আমার পুরো নামটি অন্তত ব্যবহার করতে পারতেন। তা ছাড়া গানটি কপিরাইট ফ্রি করে দিয়েছেন মুজা ভাই। এ গানের শিল্পী হিসেবে আমার কোনো মতামতও জানতে চাননি তিনি। 

রাইজিংবিডি: কণ্ঠশিল্পী মুজার কাছে আপনার কি আরও কোনো গান আছে?

তসিবা: হ্যাঁ, মুজা ভাইয়ের কাছে আমার গাওয়া আরও একটি গান দেওয়া আছে। জানি না এটি আবার মুজা ভাই তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করবেন কিনা!

রাইজিংবিডি: ‘নয়া দামান’ গান নিয়ে কোনো ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা আছে?

তসিবা: গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার পরই পরিকল্পনা করেছিলাম, এ গান নিয়ে ভিডিও তৈরি করবো। কিন্তু মুজা ভাইয়ের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে আমি একটি ভিডিও তৈরি করেছি। গত সপ্তাহে একটি ব্রাইডাল শুট ছিল। আর তখনই মূলত ভিডিও’র শুটিং শেষ করেছি।

রাইজিংবিডি: ‘নয়া দামান’ গানের রচয়িতা নিয়ে বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

তসিবা: এ গানের রচিয়তা কে তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। কেউ কেউ বলছেন, সিলেটের একুশে পদকপ্রাপ্ত দুজন কৃতিসন্তান পন্ডিত রাম কানাই দাস এবং সুষমা দাসের রত্নগর্ভা মাতা শ্রীমতি দিব্যময়ী দাস এ গান রচনা করেছেন। আবার অনেকে বলছেন এ গানের রচয়িতা হাসন রাজা। তবে দিব্যময়ী দাস হওয়ার পক্ষে যুক্তি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনো এ গানের রচয়িতার নাম নিশ্চিত হতে পারিনি।   

রাইজিংবিডি: গানটির কথা পরিবর্তনের একটা অভিযোগ উঠেছে…

তসিবা: আমি কিংবা মুজা ভাই কেউ-ই গানটির কথা পরিবর্তন করিনি। ১৫-২০ বছর আগে গানটি যেভাবে গাওয়া হয়েছে, আমরাও সেভাবে এটি গেয়েছি। ইউটিউব সার্চ করলে এমন অনেক গান পাবেন।

রাইজিংবিডি: গান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।

তসিবা: আমি ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেছি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি। আমার ইচ্ছে, দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করার। সুতরাং আমার প্রথম প্রায়োরিটি পড়াশোনা। পাশাপাশি সংগীত চর্চা করে যেতে চাই। তবে এটাকে আপাতত পেশা হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে সবকিছুই সময়ের ওপর নির্ভর করবে। আর সিলেটের ভাষার আরও কিছু মৌলিক গান নিয়ে শিগগিরই আসছি। ফকির লালনের গান নিয়ে কাজ করবো। সবাই দোয়া করবেন।

ঢাকা/শান্ত/ফিরোজ/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়