ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত স্মরণে গৌতম ঘোষ-প্রসেনজিৎ

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ১০ জুন ২০২১  
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত স্মরণে গৌতম ঘোষ-প্রসেনজিৎ

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা ও সাহিত্যিক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মারা গেছেন। তার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে। ওপার বাংলার বর্ষীয়াণ নির্মাতা গৌতম ঘোষ, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ‌্যমে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন গৌতম ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ধরে খালি খারাপ খবর। প্রিয়জনদের চলে যাওয়ার খবর। আজকে এই যে খবরটা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত…। এটা আমার কাছে শকিং। প্রথমত ভারতীয় সিনেমার একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন চলচ্চিত্রকার চলে গেলেন। কবি ছিলেন, সাহিত্যিক ছিলেন। আর আমার ৫০ বছরের বন্ধু। ফলে কত যে স্মৃতি, ভাবতে পারছি না।’

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নির্মিত চলচ্চিত্রের খানিক ব‌্যাখ‌্যা করে গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আমি খুবই মর্মাহত। আমার বলার কোনো ভাষা নেই। আমি জানতাম, ওর শরীর ভালো নেই, ডায়ালাইসিস চলছে। তার মধ্যেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিল। ‘উড়োজাহাজ’ ওর শেষ সিনেমা। পরের দিকে আস্তে আস্তে ম্যাজিক রিয়ালিজমে চলে গিয়েছিল। তা নিয়েও আমার সঙ্গে তর্ক হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, তুমি বেশি স্টাইলাইজড হয়ে যাচ্ছো। ও বলেছিল, ‘না, আমি একটা নতুনের মধ্যে দিয়ে বিচরণ করছি।’ একজন চলচ্চিত্রকারের এটা হতেই পারে। স্টাইলাইজড হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু কতরকম যে উপাদান আনার চেষ্টা করেছে, ওর বহু সিনেমায় তার সাক্ষর আমরা পাই।’’

গৌতম ঘোষ মনে করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর নির্মিত চলচ্চিত্র সংরক্ষণ করা উচিত। তা উল্লেখ করে এই নির্মাতা বলেন, ‘‘গৌতম কী যে হচ্ছে, চলো একদিন বসে আড্ডা মারি। পরিস্থিতি ভালো হলে আড্ডা দেব।’ কত যে স্মৃতি, তার শেষ নেই। দেশে-বিদেশে আমরা নানা জায়গায় একসঙ্গে ঘুরেছি। আমার মনে হয়, ও যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে, তা ভারতীয় সিনেমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো যদি প্রিজার্ভড হয়, সবথেকে ভালো হবে। কারণ বহু সিনেমা তো নষ্ট হয়ে যায়।’’

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমাদের এই সময় দাঁড়িয়ে আর একজন মাস্টার বুদ্ধদা। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের জায়গায় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নামটা ভীষণভাবে উজ্জ্বল। বাংলা সিনেমা বলব না, ভারতীয় সিনেমার একজন অন্যতম পরিচালক। ওয়ার্ল্ড সিনেমার অন্যতম এক পরিচালক চলে গেলেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, তার সঙ্গে পরপর দুটো সিনেমায় কাজ করার। এটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। আমি ইয়াসিন মধুবালার স্বপ্নের দিন। সেই অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’

প্রসেনজিৎ মনে করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বাঙালির গর্ব। বিষয়টি স্মরণ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘বুদ্ধদা যে ধারার সিনেমা করতেন বা যে ধারার সিনেমায় বিশ্বাস করতেন তা একেবারেই আলাদা একটা ধারা হলেও আন্তর্জাতিক সিনেমার নক্ষত্র ছিলেন। তার সঙ্গে টরোন্টোসহ আরো কয়েকটি বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। দেখেছিলাম ভদ্রলোকের নামে কীভাবে মানুষ রিঅ্যাক্ট করেন। তাকে দেখে নয়। সেই জায়গাটা তিনি তৈরি করেছিলেন। আমি গর্ববোধ করি, তিনি একজন বাঙালি এবং প্রচুর ভালো বাংলা সিনেমা আমাদের উপহার দিয়েছেন।’

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) ভোর ৬টায় দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তার ডায়ালাইসিস চলছিল।

লচ্চিত্র অঙ্গনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরির মধ্য দিয়ে পরিচালনায় হাতেখড়ি তার। এরপর ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘উড়োজাহাজ’ইত্যাদি সিনেমা নির্মাণ করেছেন।

তার পরিচালিত ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘কালপুরুষ’ ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। পরিচালক হিসেবেও তিনি দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হাতে তুলেছেন। এছাড়া তার সিনেমা ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়