মডেল-অভিনেত্রী গ্রেপ্তার: অভিনয়শিল্পী সংঘের বার্তা

গত রোববার (১ আগস্ট) রাতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদকসহ আটক করে তিনজন মডেল-অভিনেত্রীকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি দারুণ আলোচিত। মডেল-অভিনেত্রীদের এমন কাণ্ডে বিস্মিত সাধারণ মানুষ! বলা যায়—বিষয়টি এখন ‘টক অব দ‌্য টাউন’। এ ঘটনার পর দেশের শিল্পী সমাজ নড়েচড়ে বসেছেন। কে মডেল-অভিনেত্রী, কে নন; তা নিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দু-একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কিনা সেই ভাবনাটা জরুরি হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ কোনো টাইম পাসিং সোস্যাল প্ল‌্যাটফর্মে, ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছেন, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের কোনো টেইলারের দোকানে অথবা একটা দুটো বিলবোর্ডে, সেও সোস্যাল মিডিয়াতে নিজেকে অ‌্যাক্টর বা মডেল দাবি করছেন। অথচ মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য যে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন সেসবের কিছুই তার নেই।

শোবিজ অঙ্গনে পা রেখে দ্রুত সময়ে কেউ মডেল-অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান না এমনও নয়। তা স্মরণ করে বলা হয়েছে, ‘হুট করে এসে কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠেন না তাও না। সেক্ষেত্রে শতভাগ একাগ্রতার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরো ভালো কাজের জন্য এবং শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, অভিজ্ঞ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তার আগ্রহ ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে গাইড করেন, তার মধ্যে শিল্পী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেন। কালাচারাল এক্টিভিস্ট, বিনোদন জগতের স্টেক হোল্ডার, মডেল বা অভিনেত্রী তকমা নেবার বা দেবার আগে, তার কাজ, কাজের প্রতি আগ্রহ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচ্য হওয়া জরুরি।’

সংবাদমাধ‌্যমের শিরোনামের কারণে প্রকৃত শিল্পী সমাজিকভাবে বিব্রত হচ্ছেন। তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল তাদের কাজ দিয়ে সম্মান অর্জন করেছেন, পরিবারের জন্য গর্ব হয়েছেন, পেয়েছেন মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, সামাজিক ও জাতীয় স্বীকৃতি, হয়েছেন কোটি মানুষের আদর্শ। কোথাও পুলিশি অভিযানে ধর-পাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় খবরের শিরোনাম হয়, অমুক মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী গ্রেপ্তার; যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় সংবাদ। এ ধরনের হেডলাইন; সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেলসহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত সকলের জন্য সামাজিকভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক হয়ে ওঠে। সময়ে সময়ে এই ধরনের খবরের ফলশ্রুতিতে যারা সিরিয়াসলি, প্রফেশনাল ইথিক্স নিয়ে এই কাজটা করেন তাদের প্রায়শই আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে শুনতে হয় শ্লেষাত্বক কথা। এই পেশার মানুষ সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা, অসম্মান তৈরি হয় সমাজে, যা হয়ে উঠতে পারে অপ্রত্যাশিত সোশ‌্যাল ট্যাবু।’

অভিনয়শিল্পী সংঘ মনে করছে, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ‌্যম। মডেল-অভিনেত্রী তকমা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যম কাকে অভিনেতা/অভিনেত্রী বা মডেল বলবে তার উপরই নির্ভর করে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না? এত এত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া, ভবিষ্যতে বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে উদগ্রীব নতুন প্রজন্মকে এই রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হতে হয়, সেটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিশ্চিত করার দায়িত্ব অনেকটাই আপনাদের। তাই গণমাধ্যম যখন হেডলাইন করবে, সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তার নিষ্ঠা, তার অবদান প্রভৃতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তার পেশা উল্লেখ করবেন এটাই প্রত্যাশিত।’