ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তারকাদের ডুবায় কারা

রাহাত সইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২৭ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২০:২২, ২৭ অক্টোবর ২০২১
তারকাদের ডুবায় কারা

যশ-খ্যাতির কারণে তারকাদের ঘিরে থাকে অনেকে। এদের মধ্যে কিছু মানুষ থাকে যারা তারকাদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নেয়। যদিও এরা অন্যদের কাছে সেই তারকার ‘কাছের মানুষ’ হিসেবেই পরিচিত। তারকারাও তাদের ছায়াতলে রাখেন। কিন্তু আসলেই কি তারা কাছের মানুষ?

এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সুপারস্টারদের কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছি। অনেকেই মনে করেন, তাদের এই কথিত কাছের মানুষদের পরামর্শ এবং ক্রমাগত উসকানির কারণেই ঘটনাগুলো ঘটেছে। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন ‘নায়করাজ’ উপাধি। তাকে এই উপাধি দিয়েছিলেন ‘চিত্রালী’ সম্পাদক আহমেদ জামান চৌধুরী। এই সাংবাদিকের সঙ্গেই ঘটে যায় এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সে সময় অনেকেই ধারণা করেছেন নায়করাজের আশপাশের লোকজনই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

পরে গুণী নির্মাতা আমজাদ হোসেন নায়করাজকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ঘটনার মিমাংসা করে নিতে। এই নির্মাতা দায়িত্ব নিয়ে আরো কিছু মানুষের সহযোগিতায় তখন আহমেদ জামান চৌধুরীর কাছে রাজ্জাকের হয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। এতে সমস্যার সমাধান হয়।

অগণিত ভক্ত দর্শকের ভালোবাসায় নিজেকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন সালমান শাহ। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তাকে বয়কট করা হয়েছিল। বয়কটের কারণ ছিল- সেই সময়ের চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শিবলী সাদিককে সালমান শাহ বাসার সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। এ ঘটনা সালমান শাহর চরিত্রের সঙ্গে না-গেলেও অনেকে মনে করেন চলচ্চিত্রে তার কাছের মানুষদের কানপড়াতেই সেদিন তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন।

নায়ক মান্নার পাশেও কিছু মানুষ ছিলেন যারা কিনা সবসময় তার সব কাজের প্রশংসা করতেন, ‘হ্যাঁ’ বলতেন। এই চাটুকারদের জন্য অনেক সময় মান্নাকে দুর্নামের ভাগিদার হতে হয়েছে। তারকাদের ডুবানোর পেছনে এ ধরনের কাছের লোকগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী থাকে।

কয়েক বছর আগে বর্তমান সুপার স্টার শাকিব খানের একটি মন্তব্যের কারণে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন তাকে বয়কট করে। ঠিক সেই সময় কিছু মানুষ নিজেদের দল ভাড়ি করার জন্য শাকিব খানের পক্ষ নিয়ে তাকে উসকে দেন। কিন্তু শাকিব খান কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারেন তিনি ভুল পথে আছেন। যে কারণে ‘মিয়া ভাই’খ্যাত নায়ক ফারুকের বাসায় গিয়ে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন এবং বিষয়টি সমাধান করেন। এই নায়কের পাশেও কিছু লোক আছে যারা তার সব কাজকেই ‘হ্যাঁ’ বলে।   

হালের ক্রেজ পরীমনি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তার পাশে থাকা মানুষদের দিকে আঙুল তুলেছেন অনেকে। তাদের বক্তব্য পরী হয়তো বন্ধু চিনতে ভুল করছেন। এ কথা উচ্চারিত হয়েছে পরীমনির মুখেও। মাদক মামলায় কারাবরণ করার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- পরীমনির কাছের মানুষগুলো তাকে সুপরামর্শ দেননি। গুণী নির্মাতা কাজী হায়াৎ সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘আর কেউ যেন পরীমনিকে মিসগাইড না করে।’

সেসময় কাজী হায়াৎ আরো বলেছিলেন, ‘পরিচালক-প্রযোজক সবারই উচিত, পরীমনির জন্য সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। পরীমনিকে সঠিক গাইডেন্স দিয়ে ধরে রাখতে পারলে চলচ্চিত্র উপকৃত হবে, পরীমনির জীবনও ভালো হবে। পরীমনির সৌন্দর্যই পরীমনির শত্রু। এ কারণেই বেশির ভাগ মানুষ তার সান্নিধ্যে গেছেন, যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কাছে যাওয়া এসব মানুষই তাকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেন। শুধু সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে যারা তার কাছে গিয়েছেন, তারা তাকে সুন্দর পথের সন্ধান দেননি।’ 

কথাটি একেবারে ভুল নয়। তারকাদের আশপাশে থাকা মানুষগুলো অধিকাংশই নিজেদের সুবিধা নেয়ায় মগ্ন থাকেন। কেউ হয়তো সেই তারকাশিল্পীকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন, আবার কেউ তার সঙ্গে অভিনয়ের বাসনা রাখেন। আবার অনেকে সুপার স্টারদের সঙ্গে থেকে বাড়তি সুবিধা নেয়ার কারণে তাদের সব কাজেই সমর্থন দেন। আর তাতেই অনেক সময় ক্ষতি হয়ে যায়। তারকারাও প্রশংসাবাক্যে গলে যান। আর তখনই ক্যারিয়ারে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা কালো ছাপ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়