ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘পিয়নকে বৃহৎ ই-কমার্স সাইটে পরিণত করব’

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘পিয়নকে বৃহৎ ই-কমার্স সাইটে পরিণত করব’

আসাদুজ্জামান জয়। তিনি একজন অনলাইনভিত্তিক তরুণ উদ্যোক্তা। ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রামের গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন চট্টগ্রামের বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে। বর্তামানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন।

ছোটবেলা থেকেই খেলার মাঠ ছিল তার প্রিয় জায়গা, কিন্তু ঢাকা আসার পর থেকে বইয়ের লাইব্রেরি হয়ে উঠেছে সবচেয়ে প্রিয়। ২০১৯ সালে পাঠকের রুচিমতো যেকোনো বই দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ‘এই পৃথিবী বইয়ের হোক’ স্লোগান নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন এই বুকশপ ‘পিয়ন’ এর তরুণ উদ্যোক্তা। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত।

আগে থেকেই প্রচুর বই পড়ার ঝোঁক ছিল জয়ের। বই নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই, যখন বইয়ের পাতাগুলো শুধু উল্টে উল্টে পড়া হতো। পড়াশোনার জন্য যখন ঢাকা আসেন, তখন একদিন ঢাকা নীলক্ষেত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একদিন মাথায় চিন্তা এলো যে, ঢাকায় যেসব বই পাওয়া যায়, তার অনেকগুলো বই অন্য শহর যেমন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না। সেই চিন্তা থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু নাফিস সাদেকীন এবং আব্দুর রহমান জীবনকে সাথে নিয়ে শুরু হলো পিয়ন পেশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এ পেশার সাথে জড়িয়ে যান তিনি।

জয়ের স্বপ্ন একসময় বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটা প্রতিষ্ঠা করবে। মানুষকে সহজে বই পড়ার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু শুরুতে লক্ষ করলেন তাদের কাছে এত টাকা পয়সা নেই, তাই যারা বই পড়তে আগ্রহী বা যারা পছন্দসই বইগুলো সহজে কিনতে পারেন না বা হাতের কাছে পান না, তাদের বই ডেলিভারি দেওয়ার পরিকল্পনা সেখান থেকেই। বই ডেলিভারি করার দায়িত্ব পড়েছে পিয়নের ওপর। তবে এবার দায়িত্ব কিছু তরুণদের কাঁধে। বইপোকাদের দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব বহন করছেন তারা। তারা তিনজনই সময়-সুযোগ পেলে নিয়মিত বই পড়েন এবং বই নিয়ে আলোচনা করেন।

পিয়ন শুরু হয় তিন বন্ধুর হাত ধরে, তবে শুরু করার পরে তাদের মতো কিছু চমৎকার মানুষ পেয়ে যান, যারা সবাই বইপোকা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বইপ্রেমি ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন পিয়ন চলছে।

নিজেদের ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা পুঁজির সংকটসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। তবুও তারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা অর্ডার নিয়ে থাকেন বইয়ের। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নিজেরাই ব্যাগে করে বই নিয়ে গিয়ে ডেলিভারি দেন, আর অন্য জেলাগুলোতে কুরিয়ার করে বই পাঠান তারা। দুই বছরের মধ্যে ৫৫ জেলাতে বই পাঠিয়েছেন তারা।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘পিয়ন নিয়ে আমাদের বেশ কিছু প্ল্যান আছে ভবিষ্যতে। শুধু অনলাইন না, অফলাইনেও বইয়ের একটি চমৎকার দোকান দেবার পরিকল্পনা আছে আমাদের৷ পাশাপাশি অনলাইনে পিয়নকে একটি বৃহৎ ই-কমার্স সাইটে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি।’

‘এছাড়া পিয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখি। আমরা চাই, বাংলাদেশের মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাটা আরও বাড়াবে। আমাদের দেশের মানুষের বই পড়ার প্রতি যে অনীহা তৈরি হয়েছে বর্তমান সময়ে, সেটির বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা সবার কাছে সহজেই সবচেয়ে কম দামে বই পৌঁছে দিতে চাই’, বলেন তিনি।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়