ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভালোবাসার অনুসঙ্গ যখন মোমবাতি

নওশীন তারান্নুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসার অনুসঙ্গ যখন মোমবাতি

শুরুটা খুব অদ্ভুতভাবে। মোমবাতি ছিল প্রচণ্ড রকমের এক ভালো লাগার ও ভালোবাসার অনুসঙ্গ। ভীষণ পছন্দের। আবার যদি হয় সুগন্ধি মোমবাতি, তাহলে তো কথাই নেই। যেখানেই যাই, আমি খুঁজে খুঁজে মোমবাতি কিনি। হোক সেটা আড়ং কিংবা রাস্তার ধারের কোনো দোকান।

অনেক দিন থেকেই নির্দিষ্ট একটা সেন্টের মোমবাতি খুঁজছিলাম, কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। শেষে উদ্যোগ নিলাম নিজেই বানাবো, দোকান থেকে সব কিছু কিনে এনে পুরনো কাচের গ্লাসকে ছাঁচের মতো ব্যবহার করে তৈরি করে ফেললাম প্রথম মোমবাতি। ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করার পর অভূতপূর্ব ব্যাপক সাড়া পেলাম, ইনবক্সে প্রচুর মেসেজ আসলো যে, তাদের একইরকমভাবে তৈরি করে দিতে পারবো কি না? শুরুতে অনেককে ফ্রিতেও বানিয়ে দিয়েছি। বিজনেসের কথাটা তখনও মাথায় আসেনি।
 


এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি সবাই পোস্ট দিতে লাগলো যে, ৪ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান। তখন মনে হলো আসলেই তো, ৪ বছর পর আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই? হ্যাঁ, মেডিকেলে পড়াশুনা, ক্যারিয়ার এসব তো চলতেই থাকবে, কিন্তু নিজের মানসিক তুষ্টিটাও তো খুব দরকার। এমন কিছু একটা চাই, যেটা আমি ভালোবেসে করি! না হোক প্রফিট, না হোক অন্য কিছু। কিন্তু আমি তো এটা করে হ্যাপি আছি। সেদিনই হুট করে ফেসবুক পেজও খুলে ফেললাম।

শুরুর পরের ঘটনা

ঝামেলা তো কেবল শুরু! শখের বসে একটা’দুটো ক্যান্ডেল বানানো যায়, কিন্তু পড়াশুনা সামলে দিনে ৮/১০টা করে তৈরি করা একজন মেডিকেল স্টুডেন্টের জন্য সহজ ছিল না। তারপর আবার পার্সেল করা, সেন্ট যেন ঠিক থাকে তার খেয়াল রাখা, নতুন নতুন ডিজাইন আনা, সেন্ট কাস্টোমাইজ করা। ঝামেলা হলেও সব নিজ হাতে সামলিয়েছি, আর এ কাজটা করতেও বেশ ভালোই লাগত।
 


একটু একটু করে যখন সবকিছু কেবল ডানা মেলতে শুরু করেছে, তখন দানা বাঁধলো এই pandemic... সব কাজ বন্ধ। হাতের যে কয়টা অর্ডার ছিল, পার্সেল করে দিয়ে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকা, দীর্ঘ তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল।

মূলত কী নিয়ে আমার কাজ

আমি বরাবরই নতুন কিছু করতে চেয়েছি। আমার কাজ মূলত রঙবেরঙের বাহারি মোমবাতি নিয়ে। সাধারণত মোমবাতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে এসে নতুন কিছু। বিভিন্ন ফুল, কিংবা কিউট আকৃতির কোনো মোমবাতি, যেগুলো আমাদের দেশে সচরাচর পাওয়া যায় না, কিংবা পাওয়া গেলেও দাম বেশি। আর রঙের ব্যাপারেও কেন জানি প্রচলিত মোমগুলো একদম গতানুগতিক।
 


মূলত যে বিষয়ে ফোকাস করছি তা হলো, ‘অ্যারোমা থেরাপি’। আমার কাজ মূলত এই সুগন্ধি মোমবাতি নিয়েই। এই টার্মটার সাথে আমরা খুব বেশি পরিচিত নই। ধরেন, আপনি সারাদিন পর বাসায় ফিরে খুব ক্লান্ত, এমন সময় মাইন্ড রিফ্রেশিং কিছু চান, এমন কিছু যেটা মুহূর্তেই আপনার ক্লান্তি দূর করে দেবে! হতে পারে সেটা কোনো প্রিয় গান, প্রিয় কোনো খাবার কিম্বা কোনো সুগন্ধ।

আমার তৈরি করা সেন্টেড মোমবাতিগুলো মূলত অ্যারোমা থেরাপির উপর কেন্দ্র করে বানানো। এগুলো যেমন অ্যারোমা থেরাপিতে ব্যবহার করা যায়, তেমনি ডেকোরেশন পিস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।

এখন কী করছি

এখন আবার নতুন করে পেজের কাজ শুরু করেছি, যেহেতু তিন মাস কিছু করতে পারিনি, সে সময়টুকু বাসায় বসে রিসার্চ করেছি, কী করে সেন্ট আরও ভালো করা যায়, কীভাবে রঙ আরও ভালো করা যায়, তা নিয়ে কাজ করেছি। এখন নতুনভাবে আবার কাজ করছি। কাজ করছি, শিখছি এভাবেই চলছে।
 


আমার পরিবারের বক্তব্য

আমার প্রতিটি কাজে আমার পরিবার আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করেছে। পেজের কাজে সাহায্য করেছে, নতুন তথ্য নিতে সাহায্য করেছে আবার মোমবাতি বানাতেও কখনো সাহায্য করেছে।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু কথা

কোনো কাজ যদি করতে চান, তবে করে ফেলুন। মূলধন বড় কথা নয়, আপনার সাহস আর পরিশ্রমই আসল।
 


আমার পেজ লিংক, ক্যান্ডেল লাভাররা ঘুরে আসতে পারেন-

https://www.facebook.com/Taras-Candle-Art-109640960645589/

লেখক: শিক্ষার্থী, রংপুর আর্মি মেডিকেল কলেজ।


রমেক/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়