ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘করোনা কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখবো’

শামীম হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘করোনা কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখবো’

এখন অনলাইনে পোশাক বিক্রি অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে নারীদের বিভিন্ন রকমের পোশাকের বেশ বড় বাজার এখন অনলাইন। কিন্তু এখন থেকে আরও ৮-১০ বছর আগে অনলাইনে পোশাক কেনাকাটার ধারণা তেমন ছিল না বললেই চলে। ওই সময় যে ক'জন উদ্যোক্তার হাত ধরে এই অনলাইন ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন মারুফা ইসলাম মৌ।

তার প্রতিষ্ঠিত 'আর জে এইচ এম ক্রিয়েশন' ও 'বি স্টাইলিশ বাই মৌ' সেই থেকে এখন পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতিও। ২০১৯ সালে পেয়েছেন 'লিডিং বাই এক্সাম্পল' অ্যাওয়ার্ড।  

রাইজিংবিডির আয়োজনে আজকে থাকছে সেই এগিয়ে থাকা এই নারী উদ্যোক্তার উঠে আসা, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ।

রাইজিংবিডি: আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন।
মৌ: নিজেকে নিয়ে নিজের মত দেওয়াটা খুবই টাফ। তবু বলতে গেলে বলবো, আমি খুবই সিম্পল একজন মানুষ ও ইমোশনাল। সব সময় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করি। আর আমার এ বিজনেসের মূল ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস ও সততা।

রাইজিংবিডি: আপনার ফ্যাশন পণ্য নিয়ে কাজের শুরুটা কিভাবে?
মৌ: ফ্যাশন পণ্য নিয়ে আমার কাজের শুরুটা ২০১২ সালে। তখনো ঠিক ওইভাবে অনলাইন প্লাটফর্মটা দাঁড়ায়নি। হাতেগোনা মাত্র দু-তিনটা পেজ ছিল। সেখানে নারীদের পোশাক বিক্রি হতো। তখন আমার জার্নিটা শুরু। ওই সময়ের জার্নিটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি মাত্র  ২৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম এই 'স্বপ্ন যাত্রা'। এখন আমার ঢাকা শহরে তিনটি শোরুম আছে। আমার ' আর জে এইচএম ক্রিয়েশন' নামে যে ফেসবুক পেজ, তাতে ফলোয়ার আড়াই লাখের মতো। আর আমার প্রতিষ্ঠানে ৩৫ জনের মতো কর্মী কাজ করছেন।

রাইজিংবিডি: করোনাকালে কিভাবে চলছে বিক্রি?
মৌ: চলতি বছরের মার্চ মাস থেকেই বলতে পারেন আমাদের অনলাইন এবং শোরুমের সেল মোটামুটি অফ হয়ে গেছে। তারপরও আমি পুরো মার্চ-এপ্রিল ও মে; তিন মাসের সম্পূর্ণ বেতন কর্মীদের দিয়েছি। আমার ইচ্ছা আছে, যতদিন পর্যন্ত এ করোনা পরিস্থিতি আমরা কাটিয়ে না উঠবো, ততদিন আমি কর্মীদের সব সুযোগ-সুবিধা দেখবো। কারণ সুসময়-দুঃসময় তারা সবসময় আমার পাশে ছিল। আমার প্রতিষ্ঠান যেমন আমার পরিবার, তেমনি তারাও এই পরিবারের সদস্য। এ দুঃসময়ে আমি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
 


রাইজিংবিডি: আপনার কাজের সেরা স্বীকৃতি কোনটি
মৌ: ২০১৯ সালে আমি ‘পোশিয়ান কনফারেন্স আওয়ার্ড’ সেরেমোনিতে 'লিডিং বাই এক্সাম্পল' হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়ে প্রথম হয়েছি। এজন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এটা আমার কাজের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তার বাইরে মৌ’র আর কী কী গুণ আছে?
মৌ: আমি ভালো রান্না করতে পারি, বলতে পারেন এটা আমার সবচেয়ে ভালো গুণ। এর পাশাপাশি নাচও করতে পারি।

রাইজিংবিডি: নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ...
মৌ: সমাজের সব সেক্টরে এখন নারীদের বিশেষ অবদান রয়েছে। নারীরা এগিয়ে আসুক তাদের নিজ নিজ ক্ষমতায়। সরকারের পক্ষ থেকেও পূর্ণ সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক নারীই নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলুক, এটাই আমার চাওয়া। মূলত এ বিজনেসটা অনেক বেশি মূলধন নিয়ে যে শুরু করতে হয়, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে আমরা সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো।

রাইজিংবিডি: এ পর্যন্ত আপনার অর্জন কতটুকু?
মৌ: আমি মনে করি, আমার পথচলা মাত্র শুরু। অর্জন বলতে গেলে আমি আমার পেজের অসংখ্য আপুর অনেক দোয়া ও ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের অনেক অনেক বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি, এটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া।
 


রাইজিংবিডি: অনলাইনে ব্যবসা গ্রাহকদের বিশ্বাস কতটুকু অর্জন করতে পেরেছে বলে মনে করেন?
মৌ: আসলে এমন একটা সময় ছিল, তখন অনলাইন প্রতারণা অনেক ছিল; এটা সত্যি কথা। ওই সময় থেকে আমি আমার জার্নিটা শুরু করেছি। এখন আসলে আমরা অনেক বেশি এক্সপেরিয়েন্সড। এখন অনেক অনেক পেজ আছে, অনলাইন প্লাটফর্ম আছে। তো এখন ওইভাবে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। সব অনলাইন শপ ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে থাকে। সতুরাং পণ্য দেখে-শুনে যাচাই-বাছাই করে আপনি পেমেন্ট করতে পারছেন। এটা অনেক বড় একটা অপশন। আর যেসব অনলাইন পেজ অনেকদিন ধরে এ প্লাটফর্মে কাজ করছে, তারা কখনোই চাইবে না কোনো ক্লায়েন্টকে প্রতারিত করে নিজেদের মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করতে।  তবে কিছু চক্র এখনো রয়েছে, তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।

রাইজিংবিডি: করোনা বিপর্যয় কতটুকু প্রভাব পড়েছে?
মৌ: হ্যাঁ, অবশ্যই ফেব্রুয়ারির পরে আমাদের অনেক বড় ভাবে প্ল্যান ছিল, রোজার ঈদকে টার্গেট করে অনেক বড় ভাবে আমরা আমাদের শিপমেন্ট স্টক করেছিলাম। কিছুটা না অনেকেই বদলে গেছে বলতে পারেন। তিন মাসের শোরুমগুলো বন্ধ ছিল, এখনো সীমিত পরিসরে চলছে। এ বিপর্যয় শুধ যে আমাদের দেশে, তা কিন্তু নয়। পুরো বিশ্ব আজ দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ বিপর্যয় দ্রুত কাটিয়ে উঠবো। আমি চাই এ বিপর্যয়ের কাটিয়ে ওঠার পরে আমরা নতুন উদ্যমে দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করবো, যেন এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি।

রাইজিংবিডি: করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সামনের কর্মপরিকল্পনা কী?
মৌ: পরিকল্পনা আছে আমার প্রতিষ্ঠান সার্ভিস আরও ভালো করার। ভালোর কোনো শেষ নেই, আমি চাই আমার সার্ভিস আরও বেটার হোক। আগের চাইতে এবং গোটা বাংলাদেশ আমি চাই প্রতিটি ঘরে ঘরে আমার 'বি স্টাইলিশ বাই মৌ' এর পণ্য পৌঁছে যাক। কোনো রকম অসুবিধা ছাড়া।

রাইজিংবিডি: অসহায় মানুষদের জন্য কি করছেন?
মৌ: করোনার এ ক্রান্তিকালে শুধু আমি নই, আমার পরিবারের সব সদস্য যে যার অবস্থান থেকে দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এখনো করছে। আমার স্বামী মাজহারুল ইসলাম হিমেল জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক। তিনিও এই ক্রান্তিকালে নিজহাতে ত্রাণ দিচ্ছেন দুঃস্থ মানুষের মাঝে।


এসএম/

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়