ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্লাজমা সংগ্রহে ঢাবি ছাত্রের অনন্য উদ্যোগ

ফারহান ইশরাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
প্লাজমা সংগ্রহে ঢাবি ছাত্রের অনন্য উদ্যোগ

করোনার প্রকোপে বিশ্বে এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটছে, আক্রান্ত হচ্ছে আরও কয়েকগুণ।

এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য। বাংলাদেশও এ যাত্রায় পিছিয়ে নেই। ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের গবেষণামূলক পরীক্ষায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ।

আশা করা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে। কিন্তু এটিও সত্য যে, এখনো পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন তাঁরা। তবে এখনো পর্যন্ত করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে ‘প্লাজমা চিকিৎসা পদ্ধতি’র মাধ্যমে।

এটি এমন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির দেহ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে আক্রান্ত রোগীর দেহে প্রদান করা হয়। এতে আক্রান্ত রোগীর দেহে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, ফলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসকেরা সফল হয়েছেন। বাংলাদেশেও এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্লাজমা সংগ্রহ করা ও রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।

এ সমস্যা নিরসনের জন্যই ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়। সারাদেশে একটি প্লাজমা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেছেন। গ্রুপের নাম ‘প্লাজমা ব্যাংক, বাংলাদেশ (কোভিড-১৯)’। তাঁর এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই গ্রুপে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য প্লাজমার প্রয়োজন হলে রোগীর রক্তের গ্রুপ ও বিস্তারিতসহ পোস্ট করতে হয়। গ্রুপের সদস্যরা প্লাজমা দিতে সক্ষম এমন ব্যক্তির সঙ্গে রোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেন।

প্রয়োজনে সুস্থ ব্যক্তির থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে রোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। ফলে আক্রান্ত রোগীর জন্য দ্রুত প্লাজমা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে, আবার কোনো ব্যক্তি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে প্লাজমা প্রদানে সক্ষম হলে তিনিও সেটি জানিয়ে দিতে পারছেন। এতে দাতা ও গ্রহীতার মাঝে সরাসরি যোগাযোগের চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে। আর এই পুরো কাজটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়। তাঁকে সহযোগিতা করছেন একঝাঁক উদ্যমী স্বেচ্ছাসেবক।

প্লাজমা ব্যাংক, বাংলাদেশ (কোভিড-১৯) গ্রুপটির সদস্যসংখ্যা ইতোমধ্যেই ১২ হাজার পার হয়ে গেছে। গ্রুপের মাধ্যমে ৮০ জন রোগীকে প্লাজমা সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জরুরি রক্ত সরবরাহের জন্যও গ্রুপের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন, ৫০ ব্যাগ রক্তও তাঁরা ম্যানেজ করে দিয়েছেন।

ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয় বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে যদি সবাইকে একত্রিত করা যায়, তবে প্লাজমার একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে বাংলাদেশে। এর মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও একধাপ এগিয়ে যাবে দেশ। আমরাও সেই দিনটিরই প্রত্যাশা করি।’

প্লাজমা ব্যাংক, বাংলাদেশ (কোভিড-১৯) ফেসবুক গ্রুপ লিংক-
https://m.facebook.com/groups/1302764479919404?tsid=0.22342754908563767&source=result

 

ঢাবি/ফারহান/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়