ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ক্রেতার শখ পূরণে ঐশীর ‘শখ’ 

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০  
ক্রেতার শখ পূরণে ঐশীর ‘শখ’ 

সবাই এমন কাজ করতে চান, যা তাকে উপার্জনের পাশাপাশি আনন্দ দেবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ জাকিয়া নূর ঐশীও এমন একজন। তিনি তরুণ উদ্যোক্তা। হাতে তৈরি কাঠ ও মেটালের গয়না নিয়েই তার ব্যবসা।

শুরুটা আকস্মিকভাবে হলেও ভালোই চলছে ব্যবসা। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ফেসবুকে একটা পেজ খুললেন কোনো কিছু চিন্তা না করেই। ব্যবসা করার কথা মাথায় আসার আগেই ভেবেছিলেন এমন একটা পেজ খুলবেন, যেখানে তার ভালো লাগার কাজগুলো শেয়ার করবেন। যেমন তিনি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। মেহেদী পরাতে আর ক্রাফট বানাতেও পছন্দ করেন। এসব টুকটাক কাজ শেয়ার করবেন এই ভেবেই এ পেজ খোলা।

কী নামে পেজ খোলা যায়? ‘শখ’ নামটা এলো তার মাথায়। পরবর্তীতে দেখা গেলো এই নামে নতুন অনেক পেজ হয়ে গেছে৷ তাই ‘শখ’-এর সঙ্গে নিজের নাম জুড়ে রাখলেন ‘Shokh by Jakia’। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তার এমন কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল, যার ফলে সে নিজের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভর করতে পারেন।

টিউশন করে জমানো ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু ‘শখ- Shokh by Jakia’-এর যাত্রা। ছবি আঁকা, ক্রাফটিং, ডিজাইন এসব নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগতো তার। ঐশীর বিশ্বাস ছিল কাঠের গয়নায় এর সবকিছুই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। শৌখিন মানুষের জন্য হাতে তৈরি কিছু শৌখিন জিনিস নিয়ে এসেছে শখ। বিশেষ করে হাতে তৈরি এই গয়না। তাই নিজের রুচি ও নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করতে লাগলেন কাঠ ও মেটালের গয়না।

বর্তমানে তিনি মালা, কানের দুল, আংটি, পায়েল, চোকার, খোপার কাটা, চাবির রিং নিয়ে কাজ করছেন। 

তিনি মনে করেন, তার মায়ের সাপোর্টেই এই সাহসটা পেয়েছেন। এত দূর আসতে পেরেছেন। তার বাবা অনলাইন বিজনেস করার ব্যাপারে কখনোই একমত ছিলেন না। তবে, এখন বুঝতে পারছেন সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তার বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন। সহযোগিতা করছেন ভাইও।

তার বন্ধুরাও সবসময় পাশে ছিল। তৌসিফের সাহায্য না পেলে হয়তো একার পক্ষে শুরুটা আরও কঠিন হতো। প্রথম আড়াই মাস কাজের পরিধি ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। এখন তার ব্যবসা ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এমনকি দেশের বাইরে নিউইয়র্কেও পাড়ি জমাতে সক্ষম হয়েছে ‘শখ- Shokh by Jakia’, যা তার উদ্যোক্তা জীবনের সবচেয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতা।

সাধারণত প্রোডাক্টগুলোর ছবি মূল্যসহ পেজে দেওয়া হয়। ক্রেতা যদি কোনো প্রোডাক্ট অর্ডার করতে চান, তাহলে সেই মূল্যসহ ছবি দেখেই অর্ডার করতে পারেন। পণ্যটি পর্যাপ্ত আছে কি-না, তা কনফার্ম করার পর ক্রেতার নাম, পুরো ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিলেই নিশ্চিত করা হয়। ক্রেতা যদি কোনো প্রোডাক্ট বুকড করে রাখতে চান, তাহলে তা সর্বোচ্চ ১৫ দিন রাখা হয়। তবে যদি অ্যাডভান্সড পেমেন্ট করে দিতে পারেন, তাহলে সেটা ক্রেতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। ক্রেতা তা যখন ইচ্ছা নিতে পারেন।

শখের সব প্রোডাক্টই হাতে তৈরি। তাই হাতে ৫-৭ দিন সময় নিয়েই অর্ডার করতে হয়। প্রোডাক্ট রেডি থাকলে ৩ দিনের মধ্যেই পৌঁছে দেওয়া হয়। ব্যবসায় সফল হওয়ার মূলে থাকে ক্রেতার বিশ্বাস অর্জন। শখ সেটা ধরে রাখতে পারছে। শখের প্রোডাক্টের প্রাইজ ফিক্সড থাকে। হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। থাকে ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থাও।

ঢাকার বাইরে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আগেই পেমেন্ট করতে হয়। ২ শতাংশ বিকাশ চার্জ প্রযোজ্য থাকে। ডেলিভারি চার্জ; ঢাকার যেকোনো জায়গায় ডেলিভারির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। ঢাকার বাইরে ১৩০ টাকা।

ক্রেতার সন্তুষ্টিই জাকিয়ার শখের উদ্দেশ্য। এই মূলমন্ত্র নিয়ে প্রতিটি ধাপে নিজেকে ক্রেতার জায়গায় রেখেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভবিষ্যতে দেশীয় আরও অনেক পণ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তার। বিশেষ করে হাতে তৈরি বিভিন্ন রুচিসম্মত পণ্য সুলভমূল্যে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে চান ঐশী। 

তিনি বলেন, ‘যেদিন অন্তত একজনের জন্য হলেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো, সেদিন মনে করবো ‘শখ- Shokh by Jakia’ উদ্যোগ সফল হয়েছে।’  

লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জবি/মাহফুজ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়