ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনাকালে যেভাবে উদ‌্যোক্তা হয়ে ওঠেন ৬ নারী

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:৩৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনাকালে যেভাবে উদ‌্যোক্তা হয়ে ওঠেন ৬ নারী

করোনা একদিকে অনেক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আবার অনেকে হারিয়েছেন চাকরি। কর্মসংস্থান হারিয়ে অথবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে আছেন।

কারোনার এই সঙ্কটকালে গৃহবন্দি থাকতে থাকতে অনেকে যেমন হতাশায় ভুগছিলেন আবার অনেকেই এই সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নতুনভাবে বিকশিত করেছেন।

অনেক নারী নিজের প্রতিভা, মেধা, কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন ‌ব‌্যবসা নাম লিখিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এমন ৬ প্রতিভাবান নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে রাইজিংবিডি’র বিশেষ প্রতিবেদন।

মাহমুদা হোসাইন নিপা

করোনার লকডাউন সময়ে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। ফেসবুক পেজভিত্তিক এফ কমার্সে নিজেকে যুক্ত করে চলতে শুরু করেছেন সাফল্যের পথে।

নিপা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাকালে নিজেকে হতাশায় বন্দি করে না রেখে নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করার চেষ্টা করেছি। মূলত সেই চেষ্টা থেকেই শিশুদের পোষাক, ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্লিপিং ড্রেস, মেয়েদের হ্যান্ড পেইন্ট ব্লক, হাতের কাজের থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের পোষাক অনলাইনে বিক্রি করছি।’ শুরু থেকেই সবার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান নিপা।

উম্মে হাবিবা 

একজন শিক্ষক। ২০১১ সাল থেকেই টিউশনি করেই চলতেন তিনি। করোনা সব কিছুরই ছন্দপতন ঘটিয়ে দিলো। কিন্তু সময় যেমনই হোক জীবনকে থামিয়ে রাখা যাবে না। করোনা সঙ্কটে টিউশনি বন্ধ। কিন্তু নিজে কিছু করার পরিকল্পনা থেকেই ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত ভেজালহীন হলুদ গুঁড়া আর স্পেশাল মাংসের মসলা নিয়ে অনলাইনে বিক্রি করতে কাজ শুরু করেন উন্মে হাবিবা। ঘরেই নিজের হাতে তৈরি করেন ১৬ রকম গরম মসলা দিয়ে স্পেশাল মাংসের মসলা।

উম্মে হাবিবা বলেন, ‘মসলার ক্রেতা সব সময়ই কম থাকে। মশলা কেউ শখ করে কেনেন না। তারপরও আত্নীয়-স্বজন ও পরিচিত যারা আছেন, সবার কাছে বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। আমি হতাশ নই। ধীরে ধীরে আমার এই ব্যতিক্রমী বিজনেসের ক্রেতা বাড়বে, ব্যবসার বিস্তৃতিও বৃদ্ধি পাবে।’

নার্গিস ফেরদৌস কলি

কলি, চট্টগ্রামের তরুণী। মাস্টার্স শেষ করেছেন সফলতার সঙ্গে। কিন্তু দুই বছর ধরে চাকুরির পেছনে ছুটেছেন তিনি কিন্ত কাঙ্ক্ষিত চাকুরিটা পাওয়া হয়নি। করোনা সঙ্কটে নার্গিস ফেরদৌস কলি নিজেকে আবিস্কার করেছেন নতুন করে। অনলাইন বেস বিজনেসের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।

রাইজিংবিডিকে কলি জানান, করোনার এই কঠিন সময়ে হোম মেইড পিঠা-পুলি, ফ্রেজেন ফুড, আচারসহ নানা স্বাদের খাবার তৈরি এবং তা অনলাইনে বিক্রি করছেন। গত জুলাই মাসে শুরু করার পর তিনি বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন। চাকরি না পাওয়ার যে হতাশা মনের মধ্যে ছিলো তা বর্তমানে কেটে গেছে। কলির পেইজের নাম এনকে হোম মার্ট।

আসমা আফরিন

আসমা অনলাইনে বিজনেস শুরু করেছেন দেশীয় পোশাক নিয়ে। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী জামদানি, তাঁতের শাড়ি বিক্রি করছেন ফেসবুক ভিত্তিক পেজের মাধ্যমে। এছাড়া নিজের হাতে করা হ্যান্ড পেইন্ট ড্রেস আসমার সিগনেসার প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।

আসমা আফরিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ‌ব‌্যবসা শুরু করেছি। এখন ক্রমে এই বিস্তৃতি ঘটছে। সাড়া মিলছে সবার। চলতি মাসের শুরু থেকে হোম মেইড পিৎজা নিয়েও কাজ করছেন বলে জানান আসমা। এতেও সবার ভালো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে।’

ফারহানা কিবরিয়া

চট্টগ্রামের মেয়ে ফারহানা। এক সন্তানের মা তিনি। একজন এমবিএ গ্র্যাজুয়েট। চাকরি করার ইচ্ছে থাকলেও নানা কারণে চাকরি করা আর হয়ে উঠেনি।

ফারহানা কিবরিয়া বলেন, ‘সংসার সামলে ঘরে বসে কিছু করার স্বপ্ন মাথায় কাজ করছিলো। করোনা পরিস্থিতি সেই স্বপ্নকে ডানা মেলতে সহায়তা করেছে। মাত্র তিন মাস হলো নারীদের বিভিন্ন ধরনের পোষাক অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ফারহানা বলেন, ‘আমার পেজের নাম এইচ আর এফ কালেকশন, চট্টগ্রাম। শুরু থেকে কাছের মানুষদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি। ধীরে ধীরে ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটানের মাধ্যমে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’

শাহানা সোনিয়া

সোনিয়া পেশায় একজন শিক্ষক। চট্টগ্রামের একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। করোনা সঙ্কটকালে স্কুল বন্ধ। ঘরবন্দি জীবন। কিন্তু এই সময়কে হেলায় নষ্ট না করে নিজেকে তৈরি করেছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।

সোনিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লকডাউনের শুরু থেকেই ভাবছিলাম কি করা যায়? কি করবো? এমন একটা কিছু করতে চাই যার প্রতি আমার ভালবাসা আছে এবং শিক্ষকতার পাশাপাশি করতে পারব। ঠিক এই ভাবনা থেকেই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুণিপুরী শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। মাত্র দুই মাস হলো অনলাইনে মনিপুরী শাড়ি নিয়ে বিজনেস।’ শুরুর পর থেকেই বেশ সাড়া মিলছে বলে জানান সোনিয়া।

চট্টগ্রাম/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়