ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শখ থেকে আয় করছেন ঢাবির নারী উদ্যোক্তারা

মেহেরাবুল  ইসলাম  সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৫:২৯, ২৮ নভেম্বর ২০২০
শখ থেকে আয় করছেন ঢাবির নারী উদ্যোক্তারা

দিন দিন যেমন শিক্ষিতদের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বসে চেষ্টা ও আন্তরিকতা নিয়ে লেগে থাকলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায় এটা তরুণ শিক্ষার্থীরা ভাবতে পারছেন। তাই, বর্তমানে অনেক তরুণের মনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। তারা চান পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই চাকরির আশায় না থেকে নিজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে।

এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সন্ধান মেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে। তারা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। তাদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

সৈয়দা আফসারা তাসনিম ঐশী

ছোটবেলা থেকেই মেহেদির প্রতি ছিল অন্যরকম এক ভালোবাসা। চাঁদরাতে আম্মু মেহেদি কিনে দেওয়ার পরই শুরু হয়ে যেতো আমার ঈদ। নিজেরটা নিজেই দিতাম, সেইসঙ্গে ছোট বোনদেরও দিয়ে দিতাম। 

ভার্সিটিতে প্রথমবর্ষে থাকাকালীন ঈদের পর হাতের মেহেদি দেখে ক্লাসমেটরা পছন্দ করে দিতে চাইলে অনেককেই দিয়ে দিলাম ফ্রিতেই। এরপর সবার উৎসাহে কিছু না ভেবেই ২০১৯ সালের ২২ জুলাই আমি একটা পেজ খুলে ফেলি! একমাস পরই আমার বুকিং আসতে শুরু করে। 

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসতো ব্রাইডাল (বিয়ের) সিজন, প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করতে হয় তখন। বিভিন্ন ইভেন্টে কাজ করার জন্য ছোট্ট একটা টিমও আছে আমার। মেহেদির প্রতি ভালোবাসা থেকে অনেক রিসার্চের পর একজন হেনা আর্টিস্টয়ের পাশাপাশি আমি এখন একজন কেমিক্যাল ফ্রি অর্গানিক হেনা সাপ্লাইয়ার। দেশ পেরিয়ে সুদূর নিউইয়র্কেও পাড়ি জমিয়েছে আমার মেহেদি। 

কিছু দিনের মধ্যে চুলের জন্য হারবাল হেনাও আসছে আমার পেজে। আর আমার এতদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার আম্মু আর ছোট বোনদের। ইনকাম করা কখনই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল না। বাংলাদেশের হেনা ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় বড় আর্টিস্টদের সঙ্গে অনেকে যখন আমার নামটাও বলেন, সেখানেই আমার স্বার্থকতা।

স্বপ্নবাজ এই তরুণের প্রতিষ্ঠানের নাম- Mehedi_Art by Oishi

পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/Mehedi_Art-by-Oishi-471081010382995/

জোহরা মাহজাবীন সৃষ্টি

অনেক দিন ধরেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছা ছিল, হাতে সময়ও ছিল কিন্তু কী নিয়ে কাজ করবো বুঝতে পারছিলাম না। অনেক দোটানার পর সিলেটের মেয়ে হওয়ার সুবাদে মনিপুরী শাড়ি আর ওড়না নিয়ে কাজ করাটাই শ্রেয় মনে হলো। তাই আর দেরি না করে শুরু করে দিলাম আমি আর আমার বান্ধবী রুকাইয়া সালিহা নুসরাত এই স্বপ্নপূরণের যাত্রা। 

মনিপুরী কাপড় আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে অনেককাল ধরে। তাঁতিরা হাতে তৈরি করেন বলে একটি শাড়ি তৈরিতেই বেশ কয়েক দিন সময় লেগে যায়। নিপুণ সুতোর কাজ কোনোটিতে কম, আবার কোনোটিতে বেশি হয়, যার উপর শাড়িগুলোর দামও নির্ভর করে। কাপড়গুলো তৈরি করার পর এগুলোতে মাড় দেওয়া হয়, এতে অনেক সময় কাপড়ে মাড়ের দাগ থাকতে পারে এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

প্রতিষ্ঠানের নাম- NusTy

পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/nuSty101/

রেজওয়ানা শারমিন স্বর্না

শুরুটা ছিল আকস্মিক। লকডাউনে ঘরে বসে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল কিছু একটা করে সময়টা কাজে লাগাব। টুকটাক আঁকিবুঁকি শুরু করলাম, রান্নার হাতটা ঝালাই করে নিলাম। তবুও মনে হচ্ছিল সময়টা বুঝি বিফলে যাচ্ছে। হুট করে একদিন মনে হলো ফেব্রিক পেইন্টিংয়ের কথা। আম্মু রঙ কিনে দিলো। এরপর যেন আমার ভেতরের সুপ্ত কিছু জেগে উঠল। একের পর এক পেইন্ট করতে থাকলাম ছোটো ছোটো কাপড়ে। 

এ সময় সবার উৎসাহ ও সাহস পেয়ে পেজটা খুলে ফেললাম ‘আমার ভালোবাসার কলাকুঠরি’। কুর্তি, ব্লাউজ, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি ইত্যাদি পোশাক, কুশন, কাঠের কিছু গহনা তুলির আঁচড়ে রাঙাই। রঙের মায়া ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসি। তুলির প্রতিটি আঁচড় যেন আমার অনুভূতিগুলো প্রকটভাবে প্রকাশ করে। ফেব্রিক পেইন্টিং শখ থেকে কখন যে প্যাশন হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। প্যাশন নিয়ে কাজ করছি বলে খুব প্রশান্তি কাজ করে। 

প্রতিষ্ঠানের নাম- kolakuthori (কলাকুঠরি)

পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/KolaKuthori/

জেরিন তাসনিম দিশা

পথচলার একবছর হতে চলল। শুরুটা হুট করে হলেও প্ল্যান ছিল অনেক দিনের কী করবো, কীভাবে সাজাবো তা নিয়ে। ছোটবেলা থেকে আঁকিবুঁকি আর ক্রাফটিংয়ের প্রতি ছিল অন্যরকম একটা ভালোবাসা, সঙ্গে ছিল কিছু করার একটা ইচ্ছা; এই দুই সমীকরণ মিলিয়েই যাত্রা শুরু করলাম। একসঙ্গে অনেক কিছু নিয়েই আমাদের কাজ। হ্যান্ডপেইন্ট, গহনা, এমব্রয়ডারি, পেপার ক্রাফট। মেয়েদের জিনিস ছাড়াও নতুনভাবে আমরা কাজ করছি ছেলেদের পাঞ্জাবি নিয়ে।

প্রতিষ্ঠানের নাম- Winter berry

পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/Winter-berry-101441704601780/

ঢাকা/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়