ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নারীদের উদ্যোক্তা বানাচ্ছেন প্রভাষক শিউলি

খুরশিদ জামান কাকন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৪৩, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
নারীদের উদ্যোক্তা বানাচ্ছেন প্রভাষক শিউলি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবারে বিবাহিত নারীদের ঘর-সংসার সামলানোই প্রধান কাজ। এর বাইরে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না তাদের। 

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও অনেক নারীকে ঘরের কোণে বসে থাকতে হয়। ফলে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ নেই। চলতে-ফিরতে সবসময় পরনির্ভরশীল থাকতে হয়। মূলত এই ভাবনা থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন শিউলি বেগম।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা শিউলি বেগম পেশায় একজন মানুষ গড়ার কারিগর। তিনি সৈয়দপুর মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন। চাকরির পাশাপাশি ঘর-সংসার সামলানোর কাজটাও নিজে করে থাকেন। এর ফাঁকে যতটুকু সময় পান শখের বশে বিভিন্ন ধরনের উল সুতার ডোরমেট, রুম সেটাপ, কাপড় ও পুতির তৈরি ব্যাগ বানাতে মনোযোগ দেন।

চলমান দুর্যোগে ঘরবন্দি সময়টাতে শিউলি বেগম তার এই হস্তশিল্পের কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেন। একে একে অনেকগুলো পণ্য তৈরি করেন। প্রতিবেশী গৃহিণীদেরও একাজে উৎসাহিত করেন। কলেজের ছাত্রীদেরও নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দেন। ধীরে ধীরে তার এই কাজে স্বামী-সন্তানের পূর্ণ সমর্থন পান।

সৈয়দপুরের উদ্যোমী এই নারী উদ্যোক্তা এতেই ক্ষান্ত থাকেননি। পিছিয়ে পড়া নারীদের সঙ্গে নিয়ে ‘সৈয়দপুর উইম্যান ই-কমার্স ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে হস্তশিল্পে পারদর্শী নারীদের একত্রিত করেন। অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের তৈরিকৃত পণ্যসামগ্রী ক্রেতাদের নিকট বিক্রির বন্দোবস্ত শুরু করেন।

নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করা তার এই সংগঠনের উদ্যোগে প্রতি দুইমাস অন্তর অন্তর সৈয়দপুরে বেশ ঘটা করে গৃহিণী ও ছাত্রীদের তৈরিকৃত পণ্যসামগ্রী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সৈয়দপুর উইম্যান ই-কমার্স ফোরামের প্রদর্শনীতে স্টলজুড়ে পাওয়া যায় হ্যান্ড এমব্রয়ডারির জামা কাপড়, হ্যান্ড পেইন্টেড জামা ব্লাউজ পিস, কুশন কাভার, কুরুশ কাটার তৈরি জামা, টুপি, নকশি কাঁথা, টেবিল ম্যাট, ডোর ম্যাড। আরও রয়েছে সুতার ডোর ম্যাট, রুম সেটাপ, সো পিছ, রূপচর্চার হোম মেড ফেস প্যাকসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী।  

প্রভাষক শিউলি বেগমের একান্ত প্রচেস্টায় পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এরইমধ্যে সৈয়দপুর ফোরামের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যেখানে নামমাত্র ২০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মহীন নারীরা হাতের কাজ শেখার পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে সংগঠনটির প্রদর্শনী ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে পারছেন। 

সৈয়দপুর উইম্যান ই-কমার্স ফোরামের সদস্য গৃহিণী কাকুলী আক্তার বলেন, ‘আগে থেকে টুকটাক হাতের কাজ জানতাম। অবসর সময়ে বিভিন্ন কিছু বানাতাম। কিন্তু কখনও ভাবিনি যে আমার এই কাজটাকে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে পারবো। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু শিউলি ম্যাডামের কল্যাণে।’  

সংগঠনটির আরেক সদস্য সৈয়দপুর মহিলা কলেজের ছাত্রী রূপা আক্তার বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছে হাতের কাজ শিখবো। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এ সময়টা কাজে লাগিয়ে শিউলি ম্যাডামের কাছে কাজ শিখে খুদে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।’

সৈয়দপুর উইম্যান ই-কমার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা শিউলি বেগম বলেন, ‘লোকে কী ভাবলো, কে কী বলল, তাতে যায়-আসে না আমাদের। মুখে নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিয়ে অনেককেই গলাবাজি করতে দেখা যায়। কিন্তু নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে কারোরই মাথাব্যথা নেই। নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটলে শুধু পরিবারের স্বচ্ছলতা নয়, দেশেরও উন্নতি ঘটবে। এ লক্ষ্যেই আমরা দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছি।’

সৈয়দপুর মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের এই প্রভাষক আরও বলেন, ‘পিছিয়ে থাকা নারী সমাজের যারা ঘরে বসে হাতের কাজ করে ইনকাম করতে চায়, তাদের নিয়েই আমাদের পথচলা। যেকোনো উদ্যোমী নারী আমাদের সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভাব ঘটাতে পারবেন। অদূর ভবিষ্যতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে নারী উদ্যোক্তা গড়ে তোলার এই কার্যক্রম বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার চেস্টা থাকবে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়