ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্কুলজীবনের স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন 

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৮:১৭, ৩ অক্টোবর ২০২০
স্কুলজীবনের স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন 

করোনায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। মহামারিতে বন্ধ রয়েছে সবকিছু। এই সময়ে কাজ, পড়ালেখা ছাড়া জীবনে যেন এক অস্থির অবস্থা চলছে সবার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঠিক এ সময়ই তিন বান্ধবীকে উদ্যোক্তা হওয়ার সুবর্ণ এক সুযোগ দিয়েছে করোনা। 

বান্ধবীরা হলেন নুসরাত জাকিয়া, কাকলি আক্তার ও শামা রহমান। সবাই পড়াশুনা করছেন যথাক্রমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও বুটেক্সে। পড়াশোনার চাপে তেমন কোনো কিছু করার সুযোগ হয়নি তাদের। করোনা মহামারিতে সবার বাসা কাছাকাছি হওয়ায় তাদের মধ্যে কাজের ঝোঁক আরও বেড়ে যায়। তারা ছিলেন স্কুল জীবনের তিন বান্ধবী। তখন থেকেই কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে নিজেদের মধ্যে কথার ফাঁকে কথা উঠতো তিনজন মিলে একদিন এমন একটা রেস্টুরেন্ট দেবেন, কিংবা কোনো জায়গায় শপিং করতে গেলে ভাবতেন তাদেরও এমন একটা শপিংমল থাকবে, নিজেদের শো-রুম থাকবে। অপেক্ষাটা ছিল সঠিক সময়ের।

তিনজনই স্কুল, কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে উঠলেন। এই অবসর সময়ে তারা তাদের স্বপ্ন একধাপ একধাপ করে বাস্তবতায় নিয়ে যেতে শুরু করলেন। তারা বিশ্বাস করতেন, যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম মূলমন্ত্র হলো একটি সঠিক পরিকল্পনা। ঘরে বসে পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে ঢাকার ভেতর সব পাইকারি মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বোঝার চেষ্টা করলেন। গত ২৪ আগস্ট তিন বান্ধুবী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেসবুকে একটি পেজ খুললেন। নাম দিলেন SKS Divas, নামকরণ করা হয়েছে তিন বান্ধবীর নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে।

দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে দেখে-শুনে সব থেকে ভালো মানের ও সাধ্যের মধ্যে দামের ড্রেস নিয়ে আসেন তারা। ঘুরেফিরে ভালো ড্রেস পেলে প্রি-অর্ডারও দেন তারা। সেল করার জন্য পোস্ট দেওয়া হয় তাদের পেজে। সেখান থেকে ক্রেতার পছন্দ হলে পেজে ম্যাসেজ দিয়ে কথা বলে কনফার্ম করেন ক্রেতারা। শুধু পেজেই নয়, সেল করার জন্য তাদেরকে পোস্ট দিতে হয় বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপেও। ড্রেস কেনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তারা তিনজন মিলে করেন। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে খুব অল্প লাভে ড্রেস বিক্রি করেন তারা। তাদের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে উদ্যোগটাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাওয়া।

তাদের পেজের বয়স এক মাসের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু এই ক’দিনে এত ড্রেসের অর্ডার পাওয়া ও ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করার ব্যাপারটা ছিল অকল্পনীয়। তারা কখনো ভাবেননি এত কম সময়ে এত ভালো সাড়া পাবেন। পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ করায় তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা, ভালোবাসা। এগুলো তাদের কাজের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান তারা।

ডেলিভারিও দেওয়া হচ্ছে সময়মতো। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সর্বত্র ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে কুরিয়ারের মাধ্যমে। তাই ১ দিনের মধ্যেই কাস্টমার প্রোডাক্ট হাতে পান। আর টাকাও ওদের মাধ্যমেই আদান-প্রদান হয়। ফলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ঢাকার মধ্যে ৬০ টাকা, ঢাকার আশেপাশে ১০০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ১৫০ টাকা। ডেলিভারি খরচ রাখা হয়। আগামীতে দেশের বাইরেও প্রোডাক্ট পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। 

নুসরাত জাকিয়া বলেন, অনলাইন ব্যবসা সত্যিই আমাদের কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করেছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ভালো কিছু করার। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের সবটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও প্রথমে অনেক কষ্ট হতো, সবকিছু সামলানো কঠিন ছিল। আস্তে আস্তে সবকিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন আমরা সবাই আমাদের উদ্যোগটা নিয়ে খুবই খুশি।’

কাকলি আক্তার বলেন, উদ্যোগটা নেওয়ার পর আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমাদের আশেপাশের মানুষদের জন্য ভালো মানের ড্রেস এনে দেওয়া। সেখান থেকে আমরা আস্তে আস্তে সারাদেশে ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেছি। আমাদের এ উদ্যোগের পেছনে আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিলেন দেশ-বিদেশের নামিদামি উদ্যোক্তারা। ভবিষ্যতে আমাদের এই উদ্যোগটাকে আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা করছি, যেন সেখান থেকে আস্তে আস্তে অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি।

শামা রহমান বলেন, আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতায় আমরা খুব অল্প সময়েই অনেক দূর এগিয়ে গেছি। সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে চাই। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় খুললে একটু চাপ পড়ে যাবে, তবুও চেষ্টা করবো উদ্যোগটা ধরে রাখার। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছি, তা বাস্তবায়ন হবে মনে করি।’

পরিবার, বন্ধুমহল, শিক্ষক, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই তাদেরকে সাপোর্ট করছে সবসময়। এভাবে সবার ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে একদিন তাদের বাস্তবায়ন হবে। পড়াশুনা শেষে তাদের এই উদ্যোগটাকে অনলাইন থেকে অফলাইনেও এনে একটা শো-রুম করারও চিন্তা রয়েছে। তাদের বিশ্বাস, এভাবেই হাজারো উদ্যোক্তাদের পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এ দেশে ঘুচবে বেকারত্ব।
পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/sksdivas/

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

জবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়