ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মোতাহহারা-তিশার ব্যবসার পুঁজি সততা 

কামরুল হাসান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৪:৪৯, ১২ অক্টোবর ২০২০
মোতাহহারা-তিশার ব্যবসার পুঁজি সততা 

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে পড়ছেন মোতাহহারা ও তিশা। দুজনই লক্ষ্মীপুরের সন্তান। পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু একটা করার নেশা থেকেই দুজনে শুরু করেছেন দুটি অনলাইন ব্যবসা। মন্দ না, চলছে ঠিকঠাক। দেশব্যাপী চলছে তাদের পণ্য বিক্রি। গুণগতমান আর সততা রেখেই দেশজুড়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে যাচ্ছে পণ্যগুলো। অল্প দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তাদের অনলাইন ব্যবসা।

মোতাহহারা বছরের মাঝামাঝিতে খুলেছেন ‘প্রিয়দর্শিনীর শাড়ির ঘর’ নামক ফেসবুক পেজ। এখানে চলছে জামদানি, কোটা শাড়ি, ধুপিয়ান চেক শাড়ি, পাটি শাড়ি, জুম শাড়ি, চুমকি শাড়ি, হাফসিল্ক শাড়ি, সে সঙ্গে থ্রি-পিস, জামদানি ও পাঞ্জাবির ব্যবসা। 

মোতাহহারা বলেন, যে জেলায় যে পণ্যটি ভালোভাবে তৈরি হয়, সেটি আমি (তাঁতশিল্প) সেখান থেকে আনি। বিশেষ করে পণ্যের গুণগতমান বজায় রেখেই বিক্রি করি। ক্রেতারাও ভালো পণ্য পেয়ে আমার পণ্যের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রথমত মায়ের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মোতাহহারা। তারপর, ব্যবসায় লাভ বাড়তে থাকায় শাড়ি থেকে শার্ট এবং পরে পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করে বর্তমানে রমরমা চলছে অনলাইন ব্যবসা।

নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প তুলে ধরে মোতাহহারা বেগম বলেছেন, জুন মাসে আমি নারীদের সংগঠন ‘উই’ গ্রুপে যুক্ত হই। অলস প্রকৃতির হওয়ায় কখনো কিছু করবো সেটা ভাবতে পারিনি। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা দেখতে শুরু করি মে মাসের দিকে। কিন্তু কোনো ধারণা ছিল না। কী থেকে কী শুরু করবো! তখন প্রথমে আলাপ করি এক ছোট বোনের সঙ্গে। সে আমাকে উইয়ের সন্ধান দেয়। বলে যে ওখানে কিছু দিন সময় দিন।

আমি যুক্ত হই জুনের দিকে। প্রথম প্রথম কিছু না বুঝলেও ওখানে পড়তে-পড়তে কিছুটা বুঝি। এরপর আমার মায়ের সঙ্গে আলোচনা করি ব্যবসাটার ব্যাপারে। মাও সম্মতি দেন। মা-বাবার পাশে দাঁড়ানোর, নিজের একটা পরিচয় তৈরি করার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই আমাকে এ পথে নিয়ে আসে। 

মাত্র ২ হাজার টাকা অবলম্বন করে নিজের কার্যক্রম শুরু করি ‘প্রিয়দর্শনী শাড়ির ঘর’ নামক গ্রুপ দিয়ে। আমার উদ্যোগ আমার স্বপ্ন, সেই স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছি। সততার সঙ্গে আমার প্রিয়দর্শিনী শাড়ির ঘরকে এগিয়ে নিতে চাই। সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী।

একই বিভাগে অধ্যয়নরত শায়েলা তিশা। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পর থেকে শূন্য বসে না থেকে অনলাইনে দূর-দূরান্তের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে জেলার বিখ্যাত বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করেন। বিক্রি করতে-করতে পরিচিতি লাভ করেন এ ব্যবসায়। 

ক্ষুদ্র পুঁজি দিয়ে নিজের মতো করে চালাতে থাকেন ব্যবসা। এতে হাত পাততে হতো না পরিবারের কাছে বরং ছোটো ভাইবোনদের সহযোগিতাও করতেন শায়েলা তিশা। এরপর, বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মাঝখানে থমকে যায় সবকিছু। দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ থাকে তার ব্যবসা। বিয়ের কয়েকমাস পর শাশুড়ির অনুপ্রেরণায় আবারও শুরু করেন ব্যবসা। এবার ব্যতিক্রমভাবেই শুরু করেন। যেখানে সব ধরনের পণ্য রয়েছে এবং ফের নতুন অনলাইন পেজ খুলেছেন, নাম দেন, ‘প্রয়োজনীয় কেনাকাটা’ সম্প্রতি পেজটি খোলেন এবং সেখানে শাড়ি, থ্রি -পিস, টপস, জুয়েলারি এবং বোরকা বিক্রি করেন।

এত বছর কাজ করে তার অভিজ্ঞতা এবং বাঁধা পেরিয়ে সামনে আসার কথা জানতে চাইলে শায়েলা তিশা বলেন, আমি দেখতাম আমার জেলারই অনেক আপু অনলাইনে ব্যবসা করেন। আমি কয়েক দিন থেকে সেটা লক্ষ করি এবং নিজেও করার একটা অদম্য ইচ্ছা কাজ করছিল, কিন্তু পুঁজি ছিল না আমার কাছে। তখন এক পরিচিত দোকানদারের কাছ থেকে অল্প দামে কিছু জুয়েলারি এবং কসমেটিকস নিই এবং অল্প লাভে বিক্রি করতে-করতে একটা পরিচয় হয়ে ওঠে আমার। 

প্রথম দিকে তেমন একটা এগোতে পারিনি আমার পড়াশুনার কারণে। মা-বাবা কেউই জানতো না যে, আমি অবসরে এ কাজটা করি। এমন অভিজ্ঞতা থেকে আমার এটাই মাথায় আসলো যে, অনলাইনে অলস সময় কাটানোর চেয়ে কিছু একটা করা দরকার, সে সূত্রেই আমার অনলাইন ব্যবসা। 

ব্যবসাটা শুরু করার কিছুদিন পরই আমার বিয়ে হয়ে যায়। সংসার সামলানোর কথা চিন্তা করেই সবকিছু বাদ দিয়ে দিই। পরে শাশুড়ির সঙ্গে আলোচনা করলে তিনিই আমাকে ব্যবসার জন্য আবার অনুপ্রাণিত করেন, কারণ ওনাদের পুরো পরিবারই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। 

আমার মনে হচ্ছে, শাশুড়ির অনুপ্রেরণা কাজটা করতে এবং নিজেকে এগিয়ে নিতে আরও সহজ হয়েছে। স্বামীরও সমর্থন পাচ্ছি এবং তিনিও ব্যবসাতে সমর্থন করছেন। আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ।

লক্ষ্মীপুর/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়