ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জন্মদিন দু’বোনকে উদ্যোক্তা বানালো

ফারহান ইশরাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৫ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৩৭, ২৫ অক্টোবর ২০২০
জন্মদিন দু’বোনকে উদ্যোক্তা বানালো

লকডাউনের শুরুর দিকের কথা। স্কুল, কলেজ, আশেপাশের দোকানপাট সব বন্ধ। চারদিকে থমথমে নিস্তব্ধতা। বাইরে বের হওয়ারও কোনো উপায় নেই। লকডাউনের এই সময়েই আবার তাহিয়াতের জন্মদিন। 

ছোটবেলা থেকেই জন্মদিনের মূল আকর্ষণ ছিল কেক, জন্মদিনের কয়েক দিন আগে থেকেই কেক নিয়ে দু’বোনের জল্পনা-কল্পনা শুরু হতো। কিন্তু এবার লকডাউনের জন্য সেই কেক কেনারও উপায় নেই। তাহিয়াতের বোন তাসনিয়া যেন ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

তাসনিয়া তাই ভাবলেন নিজেরাই কিছু করা যায় কি না। এদিকে আবার বেকিং নিয়ে তেমন ধারণাও তাঁদের নেই। কিছুটা বিপাকেই পড়ে গেলেন দু’বোন। কিন্তু ইন্টারনেটের এই যুগে সবকিছু তো একদম হাতের মুঠোয়। তাই কৌতূহলী হয়ে ইউটিউবের সহায়তায় নিজেরাই একটা কেক তৈরি করলেন। প্রথমবার হিসেবে খুব একটা মন্দ হলো না, বরং পরিবারের সবার প্রশংসাও পেতে থাকলেন দু’বোন। কেকের ছবি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের কল্যাণে বন্ধু আর পরিচিতজনদের কাছেও দ্রুতই পৌঁছে গেলো। তাঁদের কাজের প্রশংসা আসতে থাকলো সবার কাছ থেকেই। সবার উৎসাহের ফলে বেকিং নিয়ে তাদেরও আগ্রহ বেড়ে গেলো, দু’জনেই কাজ শুরু করতে লাগলেন বেকিংয়ের আরও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে। জন্মদিনের কেক নিয়ে ছোট্ট এই বিড়ম্বনা থেকে এভাবেই শুরু হয়েছিল ‘Baking Bee’-এর পথচলা।

বলছিলাম সৈয়দা তাসনিয়া আহমেদ ও সৈয়দা তাহিয়াত আহমেদের কথা। তাসনিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন, আর তাহিয়াত পড়াশোনা করছেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে। লকডাউনের এই অখণ্ড অবসরে সবাই যখন বিরক্ত আর ক্লান্ত, ঠিক সেই সময় নিজেদের শখের কাজের মাধ্যমে উদ্যোক্তা বনে গেছেন এই দুই বোন। সবার প্রশংসার পাশাপাশি কাজের প্রতি লেগে থাকার প্রয়াস থাকায় ভালো কিছু করারও আভাস দিচ্ছেন তাঁরা।

‘বেকিং বি’ এর শুরুটা তাহিয়াতের জন্মদিনের কেক দিয়ে হলেও তখনো এটি নিয়ে বেশি কিছু ভাবেননি দু’বোন। কিন্তু কেকের ছবি দেখার পর থেকে পরিচিত বন্ধু এবং আত্মীয়রা তাঁদের মাঝে মাঝেই বলতেন জন্মদিন বা অনুষ্ঠানের কেক তৈরি করে দিতে। তাসনিয়া, তাহিয়াতও সানন্দেই রাজি হয়ে যেতেন কেকগুলো তৈরি করতে। ছোট ছোট এই কাজগুলোর মাধ্যমে তাঁদের প্রতি সবার আস্থা বাড়ছিল, আবার নিজেরাও বেকিং সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করছিলেন। তাই প্রথম দিকে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করার পরিকল্পনা না থাকলেও নিজেদের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আসায় তাসনিয়া ও তাহিয়াত ফেসবুকে একটা পেজ খুলে তাঁদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেন।

খুব দ্রুতই তারা প্রথম অর্ডারটি পেয়ে যান। এরপর আরও কিছু অর্ডারও কাছাকাছি সময়ে চলে আসে। কিন্তু দুই বোনের কেউই এর আগে অনলাইন বিজনেস নিয়ে কাজ করেননি, পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন কোনো ধারণাও ছিল না তাঁদের। তবে হাল ছেড়ে দেননি কখনো। যেহেতু আগে থেকে কিছু জানা ছিল না, তাই নিজে থেকেই সবকিছু শিখতে শুরু করলেন দু’জন। বেকিংয়ের জন্য কোন কোন উপাদান ভালো, কোথায় সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়, কীভাবে খাবারগুলো সংরক্ষণ করা যাবে-বার বার কাজ করতে করতে এসব নিয়ে তাঁদের ভালো ধারণা তৈরি হয়। ফলে কাজগুলো করতেও তাঁদের সুবিধা হয়। 

শুরুর দিকে দুই বোন নিজেরাই বাসায় বাসায় গিয়ে ডেলিভারির কাজ করতেন। দিনের অনেকটা সময় এই কাজেই চলে যেত। পরে ডেলিভারি এজেন্সির মাধ্যমে তাঁরা বিতরণের কাজগুলো পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে যেমন দ্রুত ডেলিভারি করতে পারছেন, পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায়ও সহজেই তাঁদের প্রোডাক্ট ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

শুরু থেকেই সঠিক মূল্যমান এবং খাবারের গুণগত মান বজায় রাখার ফলে ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেতে থাকে ‘বেকিং বি’। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বড় বড় কিছু অর্ডারও পেয়ে যান তাঁরা। এই কাজগুলো যেমন কঠিন ছিল, তেমনি ছিল চ্যালেঞ্জিং। হঠাৎ করে এতগুলো অর্ডারের কাজ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দু’বোন কিছুটা দ্বিধান্বিত থাকলেও সফলভাবেই কাজগুলো শেষ করেন। ফলে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায় বহুগুণে। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় ‘বেকিং বি’ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন দু’জন।

‘বেকিং বি’ এর যাত্রা ছোট পরিসরে শুরু হলেও দুই বোন স্বপ্ন দেখেন তাঁদের এই উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করতে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নতুন ধরনের কেক নিয়ে এসেছেন তাঁরা। পাশাপাশি পিজ্জাসহ আরও কয়েক ধরনের বেকিং আইটেম নিয়ে কাজ চলছে তাঁদের। 

‘বেকিং বি’র ফেসবুক পেজে গেলে দু’বোনের কাজগুলো দেখতে পাওয়া যাবে। পেজের ইনবক্সে যোগাযোগের মাধ্যমে অর্ডারও করা যাবে খুব সহজেই। তাসনিয়া ও তাহিয়াত মনে করেন, দৃঢ় সংকল্প আর একাগ্রতা থাকলে স্বল্প পুঁজি, ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক কিছু করা সম্ভব। এই বিশ্বাসই তাঁদের পথচলার অনুপ্রেরণা।

‘বেকিং বি’র ফেসবুক পেজ লিংক- https://www.facebook.com/BBBakingBee/

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়