ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শূন্য হাতে মা ছিল তার মূলধন

মানজুরুল ইসলাম সাজিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২৫ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১২:৪৮, ২৫ অক্টোবর ২০২০
শূন্য হাতে মা ছিল তার মূলধন

স্নিগ্ধা কৈশোর থেকেই বিশ্বাস করতেন মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে। তাই তখন থেকেই চিন্তাভাবনা ছিল বাকি দশজনকে নিয়ে নিজ উদ্যোগে কিছু করার। সে ভাবনা থেকেই একদম শূন্য পূঁজি নিয়ে শুরু করেন ‘প্রার্চুয’ নামে অনলাইন ব্যবসা। 

স্নিগ্ধার নিজের টাকা না থাকায় প্রথম প্রথম অর্ডার হলে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য কিনে সাপ্লাই দিতেন। তাই তিনি মনে করেন মা-ই তার মূলধন। ব্যবসার শুরু থেকেই তার শক্তি ছিল মা বর্না রানী দত্ত। 

বাবা-মার বড় কন্যা স্নিগ্ধা দত্ত তিথী বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি চলছে তার ব্যবসা। এসএসসি পরীক্ষার শেষে একটা সরকারি সংস্থা থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এটা ছিল তার অনুপ্রেরণা ও উপলদ্ধি করে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম ধাপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য নারীদের দেখে ব্যবসার পোকাটা তার মাথায় আসে। আজ এই সমাজে পুরুষের মতোই নারীরা সমানভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা একজন নারী হলেও তার চিন্তা করতে হয়নি। সমর্থনে ছিল তার পরিবার। 

বিবিএ প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে পরিকল্পনা করেন নতুন কিছু করার, তাই তিনি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু করেন প্রার্চুয নামের একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রথম বছরে বিক্রি সাড়ে ৩ লাখ টাকারও বেশি। বিভিন্নরকম ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট শাড়ি, ড্রেস, তাতের শাড়ি, খাদি পাঞ্জাবি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছেন স্নিগ্ধা। 

তিনি বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য কিনে আনেন ও তার প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে ছবি তুলে আপলোড করেন, সেখানে ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য অনুযায়ী অর্ডার করেন আর স্নিগ্ধা ঠিকানা অনুযায়ী কুরিয়ার করে দেন। এ বছরে তিনি প্রায় ৪০০-৪৫০টির বেশি পোশাক বিক্রয় করেছে। 

স্নিগ্ধা দত্ত তিথী বলেন, ‘ঘরে ঘরে নারীরা স্বাবলম্বী হোক, পরনির্ভরশীলতা ত্যাগ করুক, নারীদের জন্য একটা স্বাধীন জগৎ তৈরি হোক, এটাই প্রত্যাশা। আমার এই স্বপ্নের রূপ দিতে হয়তো অনেকটা সময় লাগবে, তবে আজ হোক কিংবা কাল স্বপ্ন পূরণ হবেই। শূন্য মূলধন নিয়ে শুরু করা আমি এগোচ্ছি নির্ভয়ে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষ্য ছিল, নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের একটা আলাদা পরিচিতি তৈরি হবে, ৫-১০ জনের জন্য কর্মসংন্থানের সৃষ্টি করবো। একঘেয়ে, ধরাবাঁধা গণ্ডির জীবন কোনো দিনই আমার পছন্দ ছিল না। আমি উদ্যোমী একটা মেয়ে। সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমার একটা আকাশ হবে, যে আকাশ জুড়ে আমার অবাধ বিচরণ থাকবে।  আমার বিজনেসে আমি দেশীয় বিভিন্নরকম শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি এগুলোর পাশাপাশি উলের বিভিন্ন জিনিস রেখেছি। দেশে থেকে দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে চাই আমাদের দেশীয় পণ্য।’

স্মিগ্ধা দত্তের মা বর্না দত্ত বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য গর্ববোধ করি। তার অনলাইন ব্যবসায় সবসময় পাশে থেকেছি। আজ আমাদের সমাজে নারীরা পিছিয়ে নেই। তারাও এগিয়ে চলছে, প্রতিটি নারীর উচিত, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানো। চাকরি যে করতে হবে না তা নয়। তবে, স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, সরকারি পিসি কলেজ। 

বাগেরহাট/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়