ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জেদ থেকেই আঁখির ‘তরঙ্গিনী’

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ৮ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:০৮, ৮ নভেম্বর ২০২০
জেদ থেকেই আঁখির ‘তরঙ্গিনী’

‘‘সবুজের চাদরে ঢাকা এ দেশটা ভ্রমণ করতে চাই। কিন্তু পরিবার থেকে প্রথমত বাঁধা আমি মেয়ে। পারিবারিকভাবে মেনে নিলেও পুরো অর্থনৈতিক প্রেশার বাবাকেই দিতে হবে। বাবা হয়তো চাপ মনে করবেন না, তবে আমি নিজের উপার্জিত অর্থে এ স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। শিক্ষাজীবনই আমার কাছে বেশি স্বাধীন মনে হয়। জবাবদিহিতা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। 

প্রিয়জনদের জন্য কিছু করা যায়। নিজের ইচ্ছামতো মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। এখন বাবার পরিচয়ে বেঁচে আছি। ভবিষ্যতে আরেকজনের পরিচয়ে বাঁচবো। জীবনে বাঁচতে হলে নিজের একটা পরিচয় থাকা খুবই জরুরি। আর সেই ইচ্ছা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। আর আমার বরাবরই জেদ বেশি। আমি বিশ্বাস করি, পরিশ্রম কখনো ঠকায় না।’’

বলছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আঁখি খানম। তবে আরোশি আঁখি বলেই পরিচিত। জন্ম নড়াইল জেলার দূর্গাপুর গ্রামে। পড়াশোনার পাশাপাশি মনে লালন করছেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। অনলাইনে বিক্রি করেন বিভিন্ন অর্গানিক পণ্য। তার প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু ‘তরঙ্গিনী’ নামে। তরঙ্গ অর্থ ঢেউ। নিজের প্রতিষ্ঠান মানুষের জীবনে ঢেউয়ের মতোই প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্বাস করেন আঁখি। বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই ব্যবহার করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন আঁখি।

তার পণ্য মূলত প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ভেষজ হেয়ার অয়েল ও হেয়ার প্রোটিন প্যাক। এছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হলো মরিংগা রেডিটি। এটি এমন ঔষধি গুণসম্পন্ন পাতা, যার ব্যবহার মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বিষয়টি অজানা। তাই এই ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ সরবরাহের লক্ষ্যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি হয় বিশেষ এই রেডিটি। সিংহভাগ পণ্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিজস্ব ফরমুলায় তৈরি করেন আঁখি। এসব পণ্যের ৯৮ শতাংশ ইতিবাচক রিভিউ দেন ক্রেতারা। অনেকেই আবার পুণরায় ক্রয় করেন। এসব ক্রেতাই তার অনুপ্রেরণার মূল উৎস। 

একটা সময় নারীরা শুধু গৃহিণীর কাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরির বাজারেও আজকের নারীরা অনেক এগিয়ে। কথায় আছে, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।’ এদিকে বাংলাদেশে সরকারি চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ সমতূল্য। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে অনেকেই দেখছেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।

নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় উদ্যোক্তাদের জীবনী পড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন শুরু। স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে এবছরই। উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম প্রতিবন্ধকতা পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা হবে আঁখির পরিবার তা মেনে নেয়নি। মায়ের সাপোর্ট পেলেও বাবা কখনোই সাপোর্ট দিত না। তার বাবা মনে করেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে পড়াশোনায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া শুরুর দিকে প্রতিবেশীরাও নানা ধরনের কটু কথা বললেও পাত্তা দেয়নি আঁখি। যারা কটু কথা বলতো বর্তমানে তারাই আঁখির পণ্য ব্যবহার করে ও সুনামও করে। আঁখির অনুপ্রেরণার জায়গা, ভালো কাজের অন্যতম সমর্থক ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার হাতিয়ার তার মা।

মহামারি করোনা জনমানুষের জন্য অভিশাপ হলেও কারো কারো জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঁখির জন্যও করোনা আশীর্বাদরূপে ধরা দিয়েছে। ক্যাম্পাস খোলা থাকার সময় ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, পরীক্ষার জন্য ফাঁকা সময় খুব কম পেতেন তিনি। পড়ার পাশাপাশি পণ্য তৈরি করা কঠিনই হয়ে উঠতো। 

করোনার দীর্ঘ ছুটিতে অবসর পেয়ে পুরোদমে চলছে তরঙ্গিনীর কাজ। বর্তমানে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আঁখির কাজ চলছে। যথেষ্ট সাড়াও পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আঁখি। প্রতি মাসে ১০ হাজারেরও অধিক আয় করছেন। সফল উদ্যোক্তা হয়ে নিজের কাজের মাধ্যমে অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কাজে অংশ নিতে চান আঁখি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 

কুষ্টিয়া/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়