ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ডিজাইনিং ব্লাউজের সঙ্গেই হোক শাড়ি: রুম্পা 

মিফতাউল জান্নাতি সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২৯ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:০৩, ২৯ নভেম্বর ২০২০
ডিজাইনিং ব্লাউজের সঙ্গেই হোক শাড়ি: রুম্পা 

ইশরাত জাহান রুম্পা। বরিশাল শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। তার বড় কোনো ভাই না থাকায় মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাল্যবিবাহকে মেনে নিতে হয়। এইসএসসি পরীক্ষার আগে বিয়ে হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি।

অনার্স প্রথম বর্ষ ফাইনালের আগে প্রথম সন্তানের মা হন রূম্পা। এরপরও প্রোডাক্ট অ্যান্ড ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিংয়ে এমবিএ করেন তিনি। দুই বছর একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করার পর শুধু মাতৃত্বর জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। বর্তমানে ঘর-সংসার ও বাচ্চা সামলিয়ে অনলাইনে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেছেন তিনি। 

নিজেস্ব ডিজাইনের পোশাক নিয়ে ফেসবুক পেজ ‘রুম্পাস ক্লোজেট’ নিয়েই রুম্পার এগিয়ে চলা। পোশাকের মধ্যে শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজই অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে পরিবারের ছোট বড় সবার জন্য কম্বো পোশাক (একই ধরনের, ডিজাইনের পরিবারের সবার পোশাক)।

রুম্পা বলেন, “ব্যবসার শুরুর দিকে আমি কারও সাপোর্ট পাইনি। আমি (উইমেন অ্যান্ড ই কমার্স) উই’র সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মূল উদ্দেশ্য ছিল সুন্দর সুন্দর শাড়ি কেনা, কারণ আমার প্রচুর শাড়িপ্রীতি আছে। নিজেরও কিছু করার ইচ্ছে ছিল চাকরি ছাড়ার পর। বাচ্চার একটা সাপোর্টের অভাবে চকচকে চাকরিটা নিমিষেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকরি ছেড়ে বছর খানিকের ভেতর দ্বিতীয় বারের মতো মা হলাম। 

উইতে এসে আমার মনোবল আরও বেড়ে গেলো। কিন্তু আমাকে বাসা থেকে টাকা দিলো না ব্যবসা করতে। আমার পরিবারে সবাই চাকরিজীবী, তাই আমি ব্যবসা বুঝব না এই চিন্তা ছিল সবার।

এমন কি আমি সারাক্ষণ অনলাইনে পড়াশুনা করতাম। ব্যবসার টুকিটাকি বিষয়েও পড়তাম, সেটা নিয়েও কটু কথা শুনতে হয়েছে। ফেসবুকে বেকার মেয়েদের নামের পাশে রাত দিন সবুজ বাতি জ্বলে থাকাটা এখনো সমাজে অশোভনীয়। তাদের ধারণা আমার প্রেম আছে। সত্যিকার অর্থেই আমার প্রেম ছিল, তবে সেটা কোনো মানুষের সঙ্গে নয়। ছিল আমার স্বপ্নের সঙ্গে, আমার নিজের নামের একটা ছাউনি হবে সেই স্বপ্নের সঙ্গে। এরপর একদম একা টাকা ম্যানেজ করে শুরু করলাম, যা হয় হবে লাভ অথবা লোকসান।’’

তিনি আরও বলেন, “কাজ করে তখনই স্বস্তি মেলে, যখন কাজে কষ্ট হয় না। আমি বরাবরই আমার জামা কাপড় নিজেই ডিজাইন করতাম। শাড়ি যেমনই হোক, ব্লাউজ চাই সুন্দর। কারণ আমি বিশ্বাস করি, যারা সুন্দর শাড়ি পরে তারা রুচিশীল, আর যারা সুন্দর ব্লাউজ পরে তারা শক্তিশালী রুচিশীলদের অধিকারী। এমন ভাবনা থেকেই ব্লাউজ নিয়ে কাজ শুরু করা। তাছাড়াও মা ও মেয়ে একই জামা পরি সবসময়, তাই কম্বো ড্রেস নিয়ে উদ্যোগ শুরুর পরিকল্পনাও করি। 

মেয়ে হয়ে ব্যবসা করবে এটা আমাদের সমাজের কম মানুষই মানতে পারে। যেহেতু আমার পণ্যের মডেল আমিই, তাই আমাকে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রকম কটু কথার শিকার হতে হয়।’’

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনের কথা বলতে গিয়ে রুম্পা জানান, তার সন্তান দুটোর জন্যই তিনি উদ্যোক্তা হতে পেরেছেন। একদম কোনো সাপোর্ট পাননি তিনি। নিজের নামের একটা পরিচয় গড়তে একা হাতে লড়াই করেছেন তিনি। তার কাজগুলো যেহেতু হাতের কাজ অর্থাৎ সুচিকর্ম। তিনি চান অনেক দরিদ্র নারীর সচ্ছলতা আসুক রুম্পা’স ক্লোজেটের হাত ধরে। নিজ শহরে হোক তার ‘রুম্পা'স ক্লোজেট’-এর প্রথম শাখা অর্থাৎ অফলাইন বিজনেস বা শো-রুম।

‘ব্লাউজকে শাড়ির সঙ্গে নয় বরং ডিজাইনিং ব্লাউজের সঙ্গে হোক শাড়ি’ এমন চিন্তা নিয়ে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করে কাজ করলেই এই সেক্টরে অনেক ভালো করা সম্ভব। মাত্র চার মাসে তার পেজে অর্গানিক লাইক প্রায় ৩০০০, আর বিক্রি আছে এক লক্ষ ১৫ হাজার টাকার।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়