ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আফসানার গুড় খেয়ে মুগ্ধ ইংল্যান্ডের রানি

তানজিন রোবায়েত রোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৬:৩০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০
আফসানার গুড় খেয়ে মুগ্ধ ইংল্যান্ডের রানি

আফসানা আফরিন, সদ্যই ইডেন কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। মানিকগঞ্জের মেয়ে। ছোটবেলা ঢাকাতেই কেটেছে, এরপর মানিকগঞ্জে ছিলেন বেশ কিছু দিন। তারপর আবার ঢাকায় চলে আসেন।   

দুই ভাইবোনের মধ্যে আফসানা সবার বড়। প্রথমে বাবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে নীলক্ষেত কোয়ার্টারে কেটেছে বেশির ভাগ সময়। এখন স্বামীর সঙ্গে থাকছেন বারিধারাতে। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সেখান থেকেই তার উদ্যোক্তা জীবনের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

একটা সময় ছিল যেখানে নারীদের অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। নারীদের সব কাজেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল অনেক প্রতিবন্ধকতা। নারীদের অধিকার নিশ্চিতে ‘বেগম রোকেয়া’ ছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত। সেই থেকেই নারীদের ক্ষমতায়নের পথচলা শুরু। তাতেও সমাজের বেশি একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। নারীদের কোনো কাজে বাধা-বিগ্নতা ঘটানোই হয়ে পড়ে সমাজের পেশা। নারীরা সমাজ ও পরিবারের কাছে একরকম অবহেলিতই বলা যায়। নারীদের সব কাজের আগেই শুনতে হয় অনেক তিরস্কার। 

আর তার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম নয় আফসানা আফরিন। স্বভাবতই একটি মেয়ে বড় হলে সব আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীর মুখের বুলি একটাই ‘মেয়েটা বড় হয়েছে, বিয়ে দিতে হবে’। আফসানার সঙ্গেও এমনটাই গঠেছে। কিন্তু তিনি তো দমে যাওয়ার পাত্রী নন। নিজের বুকে আঁকা নিজের স্বপ্নকে আকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছেন ও স্বপ্ন সত্যি করার পথচলায় অধম্য ছিলেন। সফলও হয়েছেন।

সমাজের নানা বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সম্পন্ন করেছেন নিজের পড়াশোনা। আর পড়াশোনা চলার মধ্যেই উই থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন অনলাইন বিজনেস। তাতে দারুণ সফল ও লাভবান আফসানা। 

তিনি বলেন, ‘‘আমার অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস, দুইটা অনলাইন পেজও রয়েছে। একটা দেশীয় পোশাক নিয়ে, পেজ এর নাম N craft, যেখানে মিরপুরের বেনারসি শাড়িসহ দেশীয় শাড়ি, থ্রিপিস রয়েছে। আরেকটা পেইজ Foodies, যেখানে আমার জেলা মানিকগঞ্জের জেলা ব্র্যান্ড পণ্য হাজারীগুড় নিয়ে কাজ করছি। 

আপাতত কোনো শো-রুম নেই, তবে শিগগিরই আমি আমার এই বিজনেসের শো-রুম উদ্বোধন করছি। অনলাইনে প্রথম বিজনেস ভিত্তিক  পেজ খুলি ২০১৮ সালে।’’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আফসানার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি N craft হবে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডশপ। আর সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ করছি। মিরপুরের বেনারসি নিয়ে আরও কাজ করতে চাই।

N craft এর শুরুতে আমি কাপল ম্যাচিং ড্রেস নিয়ে শুরু করি। ৯ মাস আগে women & e-commerce Forum (we) গ্রুপে জয়েন্ট করি। সেখানে জয়েন করে বেনারসি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ হয়। এরপর উইর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের পরামর্শে বেনারসি নিয়ে বিস্তারিত জেনে কাজ করা শুরু করি। বেনারসি বাঙালির ঐতিহ্য বহন করে, তাই এই পণ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আর মিরপুরের বেনারসি পল্লীর তাতীদের কারখানা ঘুরে, তাদের কথা শুনেই এ নিয়ে কাজ করছি।

প্রথমে পরিবারের সদস্যরা বলতো এত পড়াশোনা করে শেষে অনলাইন বিজনেস? পরে সত্যিই পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। এখন আমি বিবাহিত জীবনে স্বামীর সঙ্গে আছি ও আমার স্বামীও আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে আমার এই কার্যক্রম বিকাশে। তবে পরিবারের বাইরে অনেকে ভালোভাবে দেখে নাই বিজনেস করাকে। বলেছে এত পড়াশোনা করে এখন এসব করছি, কিছুটা হেয় করেছে, এখনো হয়তো ভালো বলে। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় চাকরিটাকেই সম্মানজনক মনে করে। তবে আমি এসব পাত্তা দেই না।

আমার কাছে সফলতা আপেক্ষিক, আমি নিজেকে যেখানে দেখতে চাই, সেখানে পৌঁছাতে পারছি কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। লোকে কাকে সফল ভাবলো তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি ছোটবেলা থেকেই নিজের পোশাক নিজে বিভিন্ন ডিজাইন করে বানাতাম, পোশাক নিয়ে কাজ করাটা আমার ভালোবাসা থেকে করা।’’

অনলাইনে বিজনেস করে তিনি কতটুকু সফল, জানতে চাইলে আফসানা বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এখনও সামনে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, তাই সফল বলা যাবে না।

আর Foodies পেজটা খুলি, আমার মানিকগঞ্জ জেলাকে রিপ্রেজেন্ট করতে জেলার বিখ্যাত পণ্য ‘গুড়’ নিয়ে, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম রয়েছে। ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ এই গুড় খেয়ে মুগ্ধ হয়ে বাংলায় লেখা পিতলের সিলমোহর উপহার দেন, যা দিয়ে এই গুড়ে সিল দেওয়া হয়। এই গুড়কে সারাবিশ্বে পরিচিত করতে চাই।

আমার স্বপ্ন ছিল একজন ভালো মানুষ হবো ও ভালো কিছু করবো। কিন্তু কখনো ভাবিনি একজন উদ্যোক্তা হবো। তবে আমি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই, আর সেটা নিয়েই স্বপ্ন দেখছি। আর উদ্যোক্তা হিসেবে ভালো কিছু করতে চাই। 

নবীন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো, নবীন উদ্যোক্তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমই সফলতার চাবি কাঠি। আর নবীনদের কাজ নিয়ে প্রথমে অনেকেই হেয় করে। তবে আমি বলবো, নবীনদের একটা কথাই মনে রাখতে হবে- কবি কামিনী রায় বলেছেন, ‘সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।’ আর নবীন উদ্যোক্তাদের অধিক সাহস ও দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে। তাহলেই নবীনরা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার শিখরে পৌঁছাতে পারবে।’’      

লেখক: শিক্ষার্থী, ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

কুমিল্লা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়