ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জীবনযুদ্ধে জয়ী উদ্যোক্তা রিপা

মিফতাউল জান্নাতি সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৯:৩৮, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
জীবনযুদ্ধে জয়ী উদ্যোক্তা রিপা

ইশরাত জাহান রিপা। সরকারি চাকরিজীবী বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান তিনি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লাতে। রিপা কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ করেছেন। বর্তমানে কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে একই বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভালোবেসে সবার অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন। পারিবারিকভাবে আর্থিক অবস্থান ভালো থাকলেও বেকার ছিলেন রিপার স্বামী। সংসার জীবনের শুরু হতে না হতেই ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। রিপার স্বামী পরবর্তী সময়ে স্ত্রী-সন্তান রেখে জাপান পাড়ি জমান। বিদেশে যাওয়ার পর আর খোঁজ রাখেননি তাদের।

যেহেতু বাবা-মা মেনে নেননি তাদের বিয়ে। এদিকে স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ি থেকে আলাদা থাকতে হয়েছে। ছোট্ট শিশুকে নিয়ে দিনের পর দিন কেটেছে মেয়েদের হোস্টেল বা মেসে। রোজগারের একমাত্র পথ ছিল টিউশন, বাচ্চাদের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকতা ও কোচিংয়ের ক্লাস। এমন সময় করোনায় তছনছ করে দেয় রিপার স্বপ্ন। পড়ে যান আর্থিক সংকটে। চার মাসের ভাড়া দিতে না পাড়ায় এদিকে ঘর ছাড়ার নোটিশ বাড়িওয়ালার।  এতে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন রিপা। 

কে দেবে আশা আর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তিনি। ঠিক এমন সময় চিন্তা করেন কিছু একটা করতে হবে। মাত্র দশ হাজার টাকায় কানের দুল বিক্রি করে পরিশোধ করেন ঘর ভাড়া।

বাকি তিন হাজার টাকায় বাটিকের সাতটি পোশাক নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন রিপা। এভাবেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন তিনি। তার ফেসবুক পেজের নাম ‘ফ্যাশন বাই রিপা’। তার পেজের প্রধান পণ্য কুমিল্লার বিখ্যাত বাটিকের কাপড় ও পোশাক।

নিজের উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে রিপা বলেন, “অনলাইনে ব্যবসা শুরুর পর দেখা পাই উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স) ফেসবুক গ্রুপ ও আমার পথ প্রদর্শক রাজিব আহমেদ স্যারের। আমার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে উই’র ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিংগুলোর জন্য। উইতে এসে মাত্র দশ দিনে এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারি। সেখান থেকেই আমার উদ্যোগ ও পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। খুচরা বিক্রির চেয়ে পাইকারি পণ্যের বিক্রিই ছিল বেশি। 

পরিবার ও আত্মীয়দের কোথাও থেকে কোনোরকম সাপোর্ট পাইনি। সাত বছরের ছেলেকে মেসের মেয়েদের কাছে রেখে বাইরে যেতাম। পণ্য সংগ্রহ, কুরিয়ার ও ডেলিভারির কাজ সব করতে হতো বাচ্চাকে একা রেখে। যখন মেসে কেউ থাকতো না, তখন খাবার রান্না করে বিছানায় রেখে বাচ্চাকে একা রেখে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে চার বছর, কখনো বাচ্চাকে নিয়ে সারাদিন ছুটতে হতো নিজের স্বপ্নের পেছনে।’’

জুন ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২০, এই সাত মাসে তিন হাজার টাকার ব্যবসায় বিক্রি হয়েছে ১৪ লাখেরও উপরে। উইতে পোস্ট ও কমেন্টের মাধ্যমে রিপার ভাই-বোন দেখতে পান তার একলা পথ চলার দৃশ্য। 

এভাবেই রিপা সফলতা দিয়ে সাত বছর পর ফিরে পান নিজের বাবা-মার কাছে আশ্রয়। নিজের পড়াশোনা ও ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া ঘরে বসবাস তার। বাবা টাকা নিতে না চাইলেও নিজের আত্মসম্মানের কাছে হেরে যায়নি রিপা। এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানানো এক নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়