ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কাজুবাদাম চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে চান অরুনা

সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১১:৪০, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০
কাজুবাদাম চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে চান অরুনা

শিরীন সুলতানা অরুনা, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের হাজী সমন আলীর মেয়ে। গ্রামের স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ার পর চলে যায় ঢাকায়। সেখানে অরুনা তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকতো। ক্লাস ফোরে ভর্তি হয় মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তারপর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ভর্তি হোন। 

ডিগ্রি পড়াকালীন সময়ে বিয়ে হয় অরুনার। স্বামীর চাকরিসূত্রে অরুনা চলে আসেন রাঙামাটি। সেই থেকে আজ অবধি প্রায় ২২ বছর যাবত রাঙামাটিতে আছেন অরুনা।

তার উদ্যোক্তাজীবন শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। এক সময় মুরগির খামার করেছেন তিনি, তারপর মাশরুম চাষ করেছেন। তার দৃঢ় ইচ্ছা ছিল কিছু একটা করার। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে ৫৯৫ টাকার ক্রিস্টালের পুতি কিনে ব্যাগ বানানো শুরু করেন তিনি। এই ব্যাগগুলো তার বাচ্চার স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি। স্কুলে যারা আসতেন, তাদের নিকট বিক্রি করতেন তার বানানো ব্যাগ। আস্তে আস্তে সবাই জেনে যায় আর ফেসবুকে একটা পেজ খুলেন তিনি। এইভাবে দুই বছরে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্রিস্টালের ব্যাগ আর ক্রিস্টালের গহনা সেট বিক্রি করেন অরুনা।

পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে ৫৮০০ টাকার কাপড় কেনেন অরুনা, সেটাও স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি। বিক্রি ভালোই হতো। কেউ কেউ আবার তার বাসায় এসে নিয়ে যেত। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকে তার। এর মধ্যে অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করতো, কেউ বলত ব্যাগওয়ালী, কেউ বলতো কাপড়ওয়ালী, তিনি কোনো কিছুতেই পাত্তা না দিয়ে আপন মনে কাজ করে গেছেন। 

২০১২ সালে হঠাৎই রাঙামাটির বনরুপাতে একটা শোরুম নেন অরুনা। শোরুমে তার বানানো কাপড় ও গহনা-ব্যাগ বিক্রি করেন। এইভাবেই চলতে থাকে। পরে ২০১৭ সালে আরও একটি শোরুম নেন একই এলাকায়। দুইটি শোরুম সমানতালে চলতে থাকে। দেশি থ্রিপিস, কুর্তি, বেড কভার, হ্যান্ডিক্রাফট ভালোই চলে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটা শোরুম ছেড়ে দেন। এখন একটা শোরুম চলমান আছে তার। এর পাশাপাশি অরুনা তার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কাজু বাদাম বিক্রি করে থাকেন।

কাজুবাদাম নিয়ে কেন কাজ শুরু করলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে অরুনা বলেন, ‘‘আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল আমি কৃষিপণ্য বিশেষ করে ফল ফলাদি নিয়ে কাজ করবো। এ জন্য ২০১০ সাল থেকে ট্রেড লাইসেন্সও করে রেখেছি। প্রতিবছর নবায়ন করি কিন্তু কী নিয়ে শুরু করবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চের ২৫ তারিখ রাঙামাটিতে লক ডাউন শুরু হওয়ার পর আমার শোরুম বন্ধ হয়ে যায়। 

আপনারা জানেন পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ী সম্প্রদায়ের সব চাইতে বড় উৎসব বৈসাবি, যা বাংলা নববর্ষের আগের দিন হয়। সেই বৈসাবিতে পার্বত্য এলাকার কাপড়ের ব্যবসা খুব জমজমাট হয়। কিন্তু বৈসাবির আগে আগে শোরুম বন্ধ থাকায় কোনোভাবেই দিন কাটছিল না।  বাসায় এই অলস সময় যখন যাচ্ছিল না, তখন আমার হাজবেন্ড আমাকে ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ ‘উই’র সন্ধান দিলেন। আমিতো কোনোভাবেই কোনো গ্রুপে জয়েন করবো না, উনি তিনদিন বোঝানোর পর উইতে আমি জয়েন করি মার্চ মাসের শেষের দিকে। পোস্ট পড়ি, কমেন্ট করি, অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন উইতে মেম্বার ছিল ৫৭ হাজার। এর মধ্যে ঘোষণা আসলো অনলাইন অডিও আড্ডার। চিন্তা করলাম এইটা আবার কি জিনিস! পরে রেজিস্ট্রেশন করে জয়েন করলাম। 

শুনলাম আমাদের শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যারের কথা। এইভাবে প্রতিটি অডিও আড্ডায় জয়েন করতে লাগলাম আর স্থির করার প্ল্যান করলাম আমি কী নিয়ে কাজ করবো। একদিন এক অডিও আড্ডায় স্যারকে বললাম যে, আমি দেশি কাজুবাদাম আর কফি নিয়ে কাজ করবো। স্যার বললেন ‘খুব ভালো হবে কফি আর কাজুবাদাম নিয়ে কেউ কাজ করছে না, তাই আপনি শুরু করেন। আর এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন আর কাজুবাদামের বিভিন্ন রেসিপি করে উইতে পোস্ট দেন’। 

আমিও স্যারের পরামর্শ মোতাবেক শুরু করলাম। প্রথমেই কয়েকটি পোস্ট দিলাম, এরপর আর এক অডিও আড্ডায় যখন স্যারের পরামর্শ চাইলাম, স্যার বললেন, ‘কপি পেস্ট করে পোস্ট দিবেন না, পারলে নিজ থেকে দুই লাইন লিখে পোস্ট দেন’। সেই থেকে নিজে যা পারি, তাই লিখে পোস্ট দেওয়া শুরু করি ও কাজুবাদাম নিয়ে কাজ শুরু করি, যা এখনো চলমান রয়েছে। আমার স্বপ্ন সত্যি হলো উইর মাধ্যমে। এইজন্য উইর প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং রাজীব আহমেদ স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

কাজুবাদাম নিয়ে কাজ শুরু করি মে মাস থেকে। এই পর্যন্ত প্রায় ৬৮৫টি ডেলিভারি দিয়েছি, উইতেই রিভিউ পেয়েছি ২০৯টি। এছাড়া আমার পেজ আর ইনবক্স মিলিয়ে রিভিউর পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। এপর্যন্ত আমি প্রায় ৬ লাখ টাকার কাজু বাদাম বিক্রি করেছি।’’

পরিবারের সাপোর্ট করার বিষয়ে অরুনা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে পরিবারের সাপোর্ট সবসময় ছিল এবং এখনো আছে। আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমাকে উৎসাহ দিতেন আর আমার হাজবেন্ড সবসময় আমাকে মনেপ্রাণে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন। পরিবারের সাপোর্ট না পেলে হয়তো আমি এত দূর আসতে পারতাম না।’

অরুনা ভবিষ্যতে কাজুবাদামকে একটা শিল্প প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চান, যাতে এই খাতেও ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়। দেশি কাজুবাদামকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে কাজুবাদাম চাষি ও কাজুবাদাম চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফোটাতেও চান তিনি।

লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়