দেশি পণ্যে ই-কমার্স
সালাউদ্দীন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম
‘এ তুমি কী পরেছো, এত কম দামের পণ্য! এগুলো ব্যবহার করলে তোমারতো সোশ্যাল স্ট্যাটাস বহাল থাকবে না৷’ এভাবেই একটা সময় দেশীয় পণ্যকে অবহেলা করে কথা বলা হতো। বিদেশি পণ্যের থাবায় দেশীয় পণ্যগুলো ধামাচাপা পড়ে ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে দুঃখের বিষয় হলো, বিদেশি পণ্য নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। বরং বিদেশি পণ্য দিয়ে একচেটিয়া রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে মানুষটি বেশি দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, তিনি হচ্ছেন ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েসন অব বাংলাদেশ) সাবেক প্রতিষ্ঠাতা রাজীব আহমেদ স্যার। ই-কমার্স সেক্টরে দেশীয় পণ্যকে দেশবাসীর সম্মুখে আনতে তিনি দীর্ঘ সময় একাই লড়ে যাচ্ছেন। এজন্য গত এক বছরে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বহুগুণে সমৃদ্ধ হয়েছে।
দেশীয় পণ্য ই-কমার্স সেক্টরের প্রবৃদ্ধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে এর সম্ভাবনা আকাশচুম্বী। দিন দিন মানুষ পুরনো সেই দেশীয় পণ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হচ্ছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন পরিবার ও নিজেদের জন্য। এসব পণ্যের ব্যবহারের ফলে আমরা আমাদের ঐতিহ্য পুনরায় ফিরে পাচ্ছি, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
ই-কমার্স সেক্টরে দেশীয় পণ্য নিয়ে সম্ভাবনার কথা যদি বলতে চাই, তবে চোখ-মুখ বন্ধ করে বলা যায়, সোনালী যুগে পা দিতে যাচ্ছে দেশীয় পণ্য। আর সেটা ২০২১ সালেই৷ গত এক বছরে দেশীয় পণ্য অনেকটা এগিয়েছে, যার পুরো অবদান রাজীব আহমেদের।
ই-কমার্স সেক্টরে কেনাবেচা শহর কেন্দ্রীক হলেও এটি এখন তৃণমূল পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে তৃণমূলের মানুষ নতুন করে দেশীয় পণ্য উৎপাদনে নতুন করে স্বপ্ন বুনছে। ই-কমার্সের কারণে গ্রাম্য ও প্রান্তিক লেভেলের বিলীন হওয়া দেশীয় পণ্যগুলো উঠে আসছে। গ্রামের তৃণমূল মানুষ নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
একটা সময় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে হয়েও যাচ্ছে। আমরা ভৌগোলিক দিক থেকে এমন একটি দেশে বসবাস করি, যেখানে উৎপাদনশীল ক্ষমতা অনেকটা বেশিই বলা চলে। আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যগুলোর সঠিক ব্যবহার করা ও ন্যায্য মূল্য দিয়ে উৎপাদকের কাছ থেকে নিয়ে কাজ করতে পারলে দেশের চাহিদা পূরণ হবে। সেই সঙ্গে দেশীয় পণ্য রপ্তানি করা খুবই সহজ হবে।
বাজার মূল্য নিশ্চয়তা, পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণ, দেশি পণ্যের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করা ও সর্বক্ষেত্রে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে দেশীয় পণ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। যা কিনা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রগতি ভূমিকা পালন করবে। পরিবেশগতভাবে দেশকে বাঁচাতে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার করার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার গত ৪-৫ বছরে বহুগুণ বেড়েছে। এর আগে ই-কমার্স মানুষের মধ্যে এতটা পরিচিত নাম ছিল না। কিন্তু এখন তা বহুল প্রচারিত৷ দেশের বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো ই-কমার্স সেক্টরে ধাবিত হচ্ছে, সেইসঙ্গে দেশীয় পণ্যের দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিচ্ছে।
কোভিডের কারণে দেশ যখন থমকে যায়, তখন বিদেশি পণ্যগুলোর একের পর এক শিপমেন্ট বাতিল হয়। এ পরিস্থিতিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে নতুন করে কাজ করে শুরু করেন কয়েক লাখ উদোক্তা। যারা অধিকাংশই তৃণমূলের নারী। গত বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দেশীয় পণ্যের অবদান অনেক বেড়েছে। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করে একাধারে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি নবীন-প্রবীণ সবাই খুব সহজে এখানে কাজ করতে পারছেন। আর সেটা কিনা ঘরে বসেই৷ ঘরে বসে যখন পুরনো দিনের সব ঐতিহ্যের স্বাদ মানুষ হাতে পায়, তখন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই আনন্দের সঙ্গে দেশী পণ্য নিয়ে গর্ব করে।
অনলাইনে কোভিডের সময় দৈনিক দেশীয় পণ্য কিনেছেন ৩ হাজারের বেশি। প্রায় একই সংখ্যক মানুষ শাক-সবজিসহ পরিবারের গ্রোসারি আইটেম থেকে শুরু করে সব ধরনের দেশীয় পণ্য কিনেছেন।
মানুষ এখন তার দৈনন্দিন জীবনে নিজের প্রয়োজনের তাগিদে নতুন করে সেই পুরনো দিনের স্বাদে গন্ধে ফিরতে চায়। আর সেজন্য ই-কমার্স সেবা সেই চাওয়াটা সহজ করে দিয়েছে। হাতের মুঠোয় এখন ই-কমার্স, যে কারণে খুব সহজেই নিজের পছন্দের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কেনা সহজ হচ্ছে।
লেখক: স্বত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ.কম।
ঢাকা/সিনথিয়া/মাহি
আরো পড়ুন