একজন উদ্যোক্তা আসিফের গল্প
মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম
আতিকুর রহমান আসিফ, জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়াতে। বর্তমানে তিনি পড়ালেখা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই সংগঠনের কাজ ও লেখালেখি করেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় প্রিয় বন্ধু প্লাবনের সঙ্গে কাজ করেছেন একটি ম্যাগাজিনেও। স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ডিবেট নিয়ে কাজ করেন তিনি। তাই বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ও কথা হয় তার। মানুষকে বুঝতে পারার এক অদ্ভূত রকমের ক্ষমতাও সৃষ্টি হয়েছে আসিফের।
শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসে এক্টিভ ছিলেন তিনি। চিত্রাঙ্কন, অরিগ্যামি (কাগজের তৈরি শিল্প), লেখালেখি, বিতর্ক সব কিছুতেই ছিলেন পারদর্শী। তাই ভার্সিটিতে আসার পর বিভিন্ন ক্লাবসহ নানা ধরনের ভলান্টিয়ারিং কাজে যুক্ত হয়ে যান। ধীরে ধীরে এগুলোর প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা চলে আসে আসিফের।
নিজ ক্যাম্পাসের হয়ে কাজ করেছেন ডিবেটিং সংঘ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্যারিয়ার ক্লাব ও রোভার স্কাউটসসহ বিভিন্ন নাট্য সংগঠনে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বাইরে অলিম্পিয়াড, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মতো সংগঠনেও কাজ করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, আসিফ একজন উদ্যোক্তা। ফ্যাশন ডিজাইনিং করা ও সেগুলো কাস্টমাইজ-এর কাজও করে থাকেন তিনি। নিজের কিছু বলতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস অরিগ্যামি ক্লাব হিসেবে গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি অরিগ্যামি ক্লাব’ এবং জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন ‘পাইওনিয়ার হাব’-যা একটি স্বপ্নের নাম। যেখানে কাজ করছেন দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী। তিনি সবার কাছে আজ পরিচিত বাংলাদেশের অন্যতম লিডিং ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ‘পাইওনিয়ার হাব’-এর সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন ২০১৯ সালে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পাইওনিয়ার হাব উপহার দিয়ে এসেছে অসংখ্য উৎসাহ জাগানো কাজ। তার এই স্বপ্নের সঙ্গী হিসেবে সবসময় পাশে ছিলেন পাইওনিয়ার হাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ আহমেদ, নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড কমিনিউকেশন হেড সায়রা ইসলাম সাকি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হেড অ্যান্ড মিডিয়া এক্সপার্ট জান্নাতুল মাওয়া, সিনিয়র এইচআরএম সাইফ আলম শুভসহ আরও অনেকেই।
পাইওনিয়ার হাব ইয়ুথদের শিখিয়েছে টিম ওয়ার্কের হাতেখড়ি। আয়োজন করেছে রাইজিং ইয়ুথ স্টার, এগ্রিকালচারাল অলিম্পিয়াড ২০২০, ইংলিশ টুইকস, ন্যাশনাল টি শার্ট ডিজাইনিং প্রতিযোগিতা-২০২০, ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ওয়েবিনারস, ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ‘ফুডফিয়েস্তা’র মতো জনপ্রিয় পরিবেশনা।
শুধু কি তাই? ইভেন্টের পাশাপাশি তারা সংগ্রহ করেছে ডোনেশন। বঞ্চিতদের মাঝে বাড়িয়েছে সহযোগিতার হাত। করোনাকালীন সময়ের প্রথম দিকে তারা এগ্রিকালচারাল অলিম্পিয়াডের রেজিস্ট্রেশন ফি’র টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। করোনা আক্রান্ত পরিবার ও বন্যা দূর্গত এলাকায় ফুডফিয়েস্তা ইভেন্টের ডোনেশন ও রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে তারা পথশিশুদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন।
আসিফ মূলত নতুন স্বপ্ন, আইডিয়া নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে ও কাউন্সিলিং করতে ভালোবাসেন। তাই এই কাজগুলো করেন। তিনি কিছু ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ভূটানের একটি মাল্টি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে চাকরি করছেন। ডিজিটাল কন্টেন্ট মেকিং, কন্টেন্ট রাইটিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিটি বিল্ডিং এগুলো আসিফের এক ধরনের নেশাও বলা যায়।
নিজের অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি মোটামুটি সব ধরনের মানুষের কাছ থেকেই শিখি। তাদের বুজতে চেষ্টা করি। ছোট-বড় সবারই ভালো কাজের কদর করি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। অনুপ্রেরণা আসলে অনেক দিক থেকে পাওয়া হয়। যেমন ধরুন, কারো লেখা আমার খুব ভালো লাগে, আমি তার লেখা থেকে অনুপ্রেরণা পাই। আবার কারও ভিডিও কন্টেন্ট, স্কিল, বাচনভঙ্গি, মাঠপর্যায়ের কাজ থেকেও শিখি। তাই আসলে পার্টিকুলারভাবে কারো নাম বলাটা খুব কঠিন।
তবে এটা সত্যি যে, আমার ভালো কাজগুলোর অনুপ্রেরণা পেয়েছি পৃথিবীর সব পজিটিভ মনের ভালো মানুষের কাছ থেকে। তাদের ভালো দিক ও ভালো কাজগুলো আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দেয়। তবে আমার মা, দুজজন বন্ধু (প্লাবন ও রফিকুল ইসলাম সাব্বির), আমার কাজিন শান্তা এদের কাছ থেকে পাওয়া সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কাজ করতে চাই তরুণ ও তাদের দক্ষতা নিয়ে। যদিও আব্বু আম্মুর খুব ইচ্ছে আমি বিসিএস ক্যাডার হবো। কিন্ত আমার ইচ্ছে ক্যারিয়ার জীবনে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইউরোপে যাওয়া। পাশাপাশি ইচ্ছা আছে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। সর্বোপরি সমাজ ও দেশের মানুষকে ভালো ভালো কাজ উপহার দেওয়ার ইচ্ছা আছে।’
আসিফ মুভি দেখতে ভালোবাসেন। অবসরে বেশিরভাগ সময় বই পড়া ও মুভি দেখাও পছন্দ তার। তিনি স্বপ্ন দেখেন তরুণদের নিয়ে পজেটিভ বাংলাদেশ গড়বেন।
ঢাকা/মাহি
আরো পড়ুন