ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পণ্য ডেলিভারি কন্যা তানজিমার গল্প    

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:০৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
পণ্য ডেলিভারি কন্যা তানজিমার গল্প    

কোনো কাজই ছোট নয়, তা প্রমাণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী তানজিমা আকতার। তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পার্সেল ডেলিভারি দেওয়ার মতো কাজ করে তা দেখিয়েছেন। কষ্টকর এবং চ্যালেঞ্জিং কাজকে তিনি উপভোগ্য মনে করেন। 

তানজিমা চট্টগ্রামের প্রথম ডেলিভারি গার্লদের একজন। সাইকেল চালনায় সুদক্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্রী শত শত ডেলিভারি ম্যানের মধ্যে একমাত্র নারী হিসেবে সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পার্সেল ডেলিভারি দিচ্ছেন। আর চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়ীরা পরম নির্ভরতার সঙ্গে আস্থা রাখছেন তানজিমা আকতারের উপর। তার ডেলিভারি গার্ল হয়ে উঠার গল্প শুনিয়েছেন রাইজিংবিডির পাঠকদের।

তানজিমা বলেন, ‘‘পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জনের মধ্যে কখনো লজ্জাবোধ নেই, আমি কখনো কোনো কাজকেই ছোট মনে করি না, বরং চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। সেই মানসিকতা থেকে গত দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীতে শুরু করেছি প্রোডাক্ট ডেলিভারির মতো কঠিন পরিশ্রমের কাজ। চট্টগ্রামের সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতক শ্রেণীতে পড়ছি। ভালোবাসি সাইক্লিং। নিয়মিতই সাইকেল নিয়েই শহরময় ঘুরে বেড়াই। শখের এই সাইকেল চালানোকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি।

যেহেতু আমি ভালো সাইকেল চালাতে পারি এবং নগরীর সব অলিগলি-পথ আমার চেনা, তাই পার্সেল ডেলিভারি দেওয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটি শুরু করার ব্যাপারে আমার ভেতর ইতিবাচক মানসিকতা কাজ করেছে। এখানে অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করেন কিন্তু বিশ্বস্ত ডেলিভারি সার্ভিস না থাকায়, তারা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। এসব নারী উদ্যোক্তাদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজেকে একজন ডেলিভারি সার্ভিসের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। 

আমি অর্থাভাবে এই ধরনের একটি কঠিন কাজ করছি বিষয়টি এমন নয়। আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস দেওয়ার মতো কঠোর পরিশ্রমের একটি কাজ করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি, এটা প্রমাণ করার জন্য যে নারীরা সব ধরনের কাজই করতে সক্ষম, কখনো কোনো কাজ ছোট হতে পারে না। আর পার্সেল ডেলিভারি দিয়ে প্রতিমাসে যে অর্থ আয় হয়, তা নিঃসন্দেহে একটা বড় অঙ্ক।’’ 

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাসরত তানজিমা পুরো নগরজুড়েই পার্সেল সংগ্রহ ও ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। তার সার্ভিস এরিয়ার মধ্যে রয়েছে নগরীর সিটি গেট, অলংকার থেকে শুরু করে, বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড, কোতোয়ালি পাথরঘাটা থেকে চান্দগাঁও, অক্সিজেন কুয়াইশ পর্যন্ত। প্রতিদিন গড়ে ৬/৭টি পার্সেল ডেলিভারি দেন নিজেই সাইকেল চালিয়ে। প্রতিটি পার্সেলে ডেলিভারি চার্জ নেন ৭০ টাকা। তবে প্রোডাক্টের ধরন অনুযায়ী এই চার্জ কখনো কম-বেশি হয়ে থাকে। 

তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে নিজের অনলাইন বিজনেসের পণ্য নিজেই ডেলিভারি দিয়ে গত নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করি। পরে নগরীর নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার কাজ আসতে থাকে। এখন নারী-পুরুষ সব উদ্যোক্তাই ডেলিভারির জন্য আমার উপর আস্থা রাখছেন।’ 

কাজ করতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে তানজিমা বলেন, ‘আমি যখন প্রোডাক্ট পিকআপ করতে বা ডেলিভারি দিতে যাই, তখন আমাকে সবাই উৎসাহিত করেন। আমি অনেকের কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। সব ধরনের কাজেই নেতিবাচক ভাবনার কিছু মানুষ থাকেই-এই বিষয়টিকে আমি গুরুত্ব দেই না। আমার কাছে আমার কাজই মুখ্য এবং আমি ভালোবাসা দিয়েই আমার কাজ করে যেতে চাই।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তানজিমা বলেন, ‘হোটেল ট্যুরিজম নিয়ে পড়ালেখা করলেও আমি আগামী দিনে কোনো চাকরি করবো না, নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আরো অনেক নারীর কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। ‘সব কাজেই নারীরা এগিয়ে যাবে দৃঢ়তার সাথে’-এই মানসিকতা নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েই কাজ করে যেতে চাই।’

তানজিমার প্রোডাক্ট ডেলিভারি পেজের নাম ‘ডেলিভারি ফর উইমেন’। পেজ লিঙ্ক- https://web.facebook.com/Deliveryforwomenn

লেখক: ব্যুরো প্রধান, রাইজিংবিডি ডটকম।

চট্টগ্রাম/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়