ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে ‘কনটেন্ট লেখা’র কদর  

সালাউদ্দিন আহমেদ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে ‘কনটেন্ট লেখা’র কদর  

কনটেন্ট অর্থ বিষয়বস্তু। অর্থাৎ আপনি কোনো একটি বিষয়ে যা জানেন, সেটার উপস্থাপন করাই হলো কনটেন্ট। কনটেন্ট লিখিত, অডিও, ভিডিও আবার কোনো ছবিও হতে পারে। দেশি পণ্যকে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে প্রসারিত করতে কনটেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি।

যে কোনো পণ্য নিয়ে জানানোর বহিঃপ্রকাশই কনটেন্ট। কনটেন্ট যত বেশি হবে, মানুষ তত পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে, বুঝতে পারবে ও এর প্রসার বাড়বে। আপনার পণ্য নিয়ে কেমন হতে পারে কনটেন্ট? কনটেন্টে কোন বিষয়গুলোর উপর নজর দেওয়া উচিত, জেনে নেওয়া যাক।

পরিচিতি: দেশীয় পণ্য নিয়ে কনটেন্টে প্রথমেই পণ্যটির পরিচিতি ফুটিয়ে তুলতে হবে। পণ্যটি কোন এলাকার? পণ্যটি সম্পর্কে জানা বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। কনটেন্ট লেখার সময় অবশ্যই পণ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কেননা এই কনটেন্টের উপরই পণ্যের ব্র্যান্ডিং হওয়াটা নির্ভর করবে। পণ্যের পরিচিতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমাদের দেশীয় পণ্যের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। অনেক পুরনো সভ্যতা সংস্কৃতি আমাদের দেশীয় পণ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কোনো পণ্য সম্পর্কে যখন সঠিক ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়, তখন সেটার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। সেই সঙ্গে পণ্যটি সম্পর্কে মানুষের অনেক ধারণা পেয়ে যাবে। যেমন মেহেরপুরের ১৫০ বছরের ঐতিহ্যের প্রসিদ্ধ সাবিত্রী মিষ্টি। এ নিয়ে হয়তো অনেকেই জানে না। যখন এটা নিয়ে কেউ জানাবে, তখন মানুষ আগ্রহের সঙ্গে মিষ্টি খেতে চাইবে। এমনিভাবে প্রতিটি পণ্যের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।

একই পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হয়ে থাকে। তবে আপনি কোথা থেকে পণ্যটি উৎপাদন করছেন, সেটা জানানো মুখ্য বিষয়। যশোর খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত বলে আপনার এলাকার খেজুরের গুড় যশোরের গুড় বলে চালিয়ে দিলে সেটা অকপটে ভিন্নতা প্রকাশ করবে। কাজেই আপনি যে পণ্য নিয়ে কনটেন্ট লিখবেন, সেই পণ্যটি কোথায় উৎপাদিত, সেটা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।

পণ্যের গুণগত মান অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যে পণ্য নিয়েই কনটেন্ট লিখেন না কেনো, সেটার গুণগত মান সঠিকভাবে তুলে ধরে দিতে হবে। যেমন আমি মধু নিয়ে কাজ করি। আমি বাসক তুলসী রেণুর মধু নিয়ে একটা কনটেন্ট লিখছি। সেখানে এই মধুটির গুণগত মান, পণ্যটি কীভাবে তৈরি হয়, সার্বিক দিকগুলো যদি তুলে না ধরি, তবে সেটা কাস্টোমারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কাজেই গুণগত মানের দিক থেকে কোনো ধরনের তারতম্য করা যাবে না।

আমাদের দেশের অনেক পণ্য আছে, যেগুলো এক অঞ্চলে হয় কিন্তু অন্য অঞ্চলে হয় না। যেমন কুমড়োর বড়ি সব অঞ্চলে হয় না। আমি এটা নিয়ে যখন কনটেন্ট লিখবো, তখন অবশ্যই এটার কীভাবে রান্না করতে হয়, সেটা আমাকে উল্লেখ করে দিতে হবে। দেখবেন অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের মধ্যেই ব্যবহার বিধি নোট করে লিখে দেয়, এটাও কোটেশন কনটেন্ট।  
অনেক পণ্য আছে, যেগুলো একবার কিনলে বাড়িতে অনেক দিন রাখা যায়। এখন কীভাবে রাখলে পণ্যটি ভালো থাকবে বা নষ্ট হবে না, তা কনটেন্টে উল্লেখ করতে হবে। পণ্যের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জানলে কাস্টমার বিভ্রান্তিতে পড়বে না। যেমন আচার দীর্ঘ দিন বাড়িতে রাখা যায়, কিন্তু সেটা সংরক্ষণ করে রাখতে হলে কাচের জারে রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে রোদে দিতে হয়, তা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনও অনেক পণ্য আছে, যেগুলো নিয়ে কনটেন্ট লেখার সময় এই বিষয়গুলো নজর রাখতে হবে।

আপনি ই-কমার্স সেক্টরে কাজ করেন, আপনি একজন উদোক্তা। আপনার পেজ, ফেসবুক গ্রুপ বা ওয়েবসাইট আছে। এখন আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করেন, সেটা নিয়ে কোনো কনটেন্ট নাই, তাহলে আপনি জিরো। আপনার পণ্য সম্পর্কে যত জানাতে পারবেন, তত কাস্টমার এদিকে ফোকাসড হবে। আর এজন্য কনটেন্টের কদর অনেক বেশি। আপনার কনটেন্ট যত মজবুত হবে, তত বিপণন কৌশল সহজ হবে।

কনটেন্ট হতে হবে গল্পের মতো করে। পাঠকদের কনটেন্ট পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে হবে। এজন্য স্টোরি টেলিং অনেক প্রয়োজন। গল্পের ছলে বিক্রি এটাই কিন্তু এখন বেশি হয়। আপনার স্টোরি টেলিং যত মজবুত, কনটেন্ট তত ভালো হবে, পাঠক তত কনটেন্টে মনোযোগী হয়ে পড়বে। সবসময় কনটেন্ট লিখতে হবে গল্প আকারে।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য কনটেন্ট এখন অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এখন সবকিছু অনলাইন নির্ভর। নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য কনটেন্টের কোনো জুড়ি নেই। আপনার কনটেন্ট যত মজবুত, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং তত মজবুত। ইন্টারনেটে আপনি যত বেশি কনটেন্ট প্রকাশ করবেন, তত ইউজার বাড়বে। মানুষ আপনাকে চিনবে, আপনার প্রসার-প্রচার বাড়বে ও পারসোনাল ব্র্যান্ডিং মজবুত হবে।

ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক অনেক পণ্য বাংলাদেশে আছে, যা দিয়ে আমরা সহজে ই-কমার্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি বিরাট বাণিজ্যিক প্রসার ঘটাতে পারি। বড় একটি মার্কেট প্লেস তৈরি করতে পারি দেশ ও দেশের বাইরে। এর মাধ্যমে অনেক বেকারত্বের হার কমিয়ে ও আত্মকর্মসংস্থান বাড়িয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে পারি।

দেশীয় পণ্যের কনটেন্ট ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দিন দিন প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনাময় একটি দেশ। যেখানে অনেক পণ্যের সমাহার, পুরনো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতা আছে। সেগুলো নিয়ে আমরা যত বেশি কনটেন্ট লিখতে পারবো, ততই দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়বে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেরও চাহিদা পূরণ করতে ও দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে কনটেন্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় পণ্যকে এগিয়ে নিতে কনটেন্টের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: স্বত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ ডটকম।

সিনথিয়া/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়