ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মায়ের ৫০০০ টাকায় উদ্যোক্তা জান্নাত মিষ্টি  

মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মায়ের ৫০০০ টাকায় উদ্যোক্তা জান্নাত মিষ্টি  

নহরে জান্নাত মিষ্টি। বাবা মায়ের ছোট সন্তান তিনি। জন্মস্থান টাঙ্গাইল জেলার সদরেই। বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া টাঙ্গাইলে। ভালো ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও বাবার অসুস্থতার জন্য এইচএসসির পর পরই বিয়ে হয়ে যায় মিষ্টির, সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকে পড়ছিলেন। এক সময় ছেলের অসুস্থতার জন্য লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয় তাকে।

স্বামী ও সন্তান নিয়ে সাংসারিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বর্তমানে সংসারের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগ ও ফেসবুক পেজ ‘আরওয়া’ নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডিতে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া।

রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?

নহরে জান্নাত মিষ্টি:  জি, ভালো আছি। 

রাইজিংবিডি: ব্যবসা শুরুর গল্পটা যদি বলতেন।   

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আসলে শুরু করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। অনেক ভালো ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও যখন লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি, এটা অনেক বড় একটা কষ্টের কারণ ছিল। আমার সব বন্ধু-বান্ধব নিজেদের অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত।  নিজে সবসময়ই কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল, সবসময় মনে হতো আমার নিজের একটা পরিচয় চাই।  আবার সেই সঙ্গে আমার সন্তানদের সবটা সময় আগলেও রাখতে চাই। ঘরে বসে নিজের সন্তানদের সময় দিয়ে অনলাইন বিজনেস করাটা সবচেয়ে পারফেক্ট মনে হতো।  সেখান থেকেই এক আপুর পরামর্শে আমার অনলাইন বিজনেসটা শুরু। 

আমার উদ্যোগের নাম আরওয়া, আমার মেয়ের নামেই নামকরণ। যার অর্থ সবচেয়ে সুন্দর। নিজের বলতে এক টাকাও ছিল না। আম্মুর কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার করে শুরু করি আমার উদ্যোগ। বাবা-মা-ভাই ছিল সবচেয়ে বড় সাপোর্টার। আমার স্বামী বলতো, তুমি পারবে না। নিজে ডুববে, সঙ্গে সবাইকে নিয়ে ডুববে। পরবর্তীতে আমার স্বামীই ১৫ দিনের ব্যবধানে আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্টার হয়ে যায়।

রাইজিংবিডি: আপনার পেজে কি কি পণ্য রয়েছে?

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আমি কাজ করছি টাঙ্গাইলের তাঁত পণ্য নিয়ে। টাঙ্গাইল তাঁতের সব ধরনের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি পিস, ওড়না, শাল এসব নিয়ে। মোট কথা পিওর টাঙ্গাইল তাঁত পণ্যের পেজ আমার আরওয়া।

রাইজিংবিডি: কেমন ভাবনা থেকে টাঙ্গাইল তাঁত পণ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল? 

নহরে জান্নাত মিষ্টি: টাংগাইল তাঁত পণ্য আমার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। আমার কাছে বিয়ের ২/৪টা শাড়ি ছাড়া তাঁত ব্যতীত কোনো শাড়ি নেই। যেহেতু টাঙ্গাইলের মেয়ে আর হাতের নাগালে তাঁত পণ্য, তাই এ পণ্য আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া তাঁত পণ্য পুরোদেশ তথা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে ই-কমার্স ব্যবসায় তাঁত পণ্যকে বেছে নেওয়া।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইন কেন্দ্রিক, নাকি অন্য কোনো উপায়ে ছিল? 

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আমার ব্যবসা শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৩ মে। শুরুটা পুরোপুরি অনলাইন কেন্দ্রিক ছিল। এখন অবধিও তাই। 

রাইজিংবিডি: আপনার উদ্যোগের সফলতার কথা জানতে চাই।

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আমার উদ্যোক্তা জীবনে আমি বলবো সফল।  নিজের পাশাপাশি আরো অনেকের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি। সফলতার খাতায় আরো যুক্ত হয়েছে নিশা আপুর দেওয়া দায়িত্ব টাঙ্গাইল জেলার উইর ডিস্ট্রিক্ট হেড। আসলে নিশা আপু আর শ্রদ্ধেয় রাজিব স্যারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্যারের দেখানো পথে হেঁটেই আমি আজকের টাঙ্গাইলের মিষ্টি আপু। আমার উদ্যোগের কারণে ও উইর মাধ্যমে হাজার হাজর মানুষ আমাকে চিনছে, আমার উপর ভরসা করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করছে।  এই দিক দিয়ে আমি সফল, তবে আরো অনেকটা পথ হাঁটা বাকি।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সমস্যার কথা যদি বলেন। 

নহরে জান্নাত মিষ্টি: সাধারণত মানুষের ব্যবসার বাধা হয় পরিবার বা সমাজ। আমার ক্ষেত্রে কখনো এমন হয়নি। তবে সময় ছিল আমার সবচেয়ে বড় বাধা। সংসার-সন্তান সব এক হাতে সামলিয়ে একাই প্রডাক্ট সোর্সিং থেকে শুরু করে ডেলিভারি করেছি। যাকে বলে ওয়ান ম্যান আর্মি। তবে সেই সময়টাকে জয় করতে পেরেছি। অল্প সময়ে ভালো করায় পেছনে লোক লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আমারও এমন হয়েছিল। ৫০০০ লাইকের পেজ এবং আমার ফেসবুক আইডি হারাতে হয়েছিল। কিছুই করার ছিল না। এটা ছিল একমাত্র বিব্রতকর অবস্থা আমার উদ্যোক্তা জীবনের।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?   

নহরে জান্নাত মিষ্টি: পরিবারের সাপোর্ট সবসময় সেরা আমার জীবনে। বাবার বাড়ি শ্বশুর বাড়ি দুদিক থেকেই। আমার মা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছেন। শুরু থেকেই স্বামীর সাপোর্টও পেয়েছি।  তবে শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার,  নাসিমা আক্তার নিশা আপু ও উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) আমার সফল উদ্যোক্তা জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। স্যারের কাছ থেকে ই-কমার্স নিয়ে অনেক শিখেছি।

রাইজিংবিডি: ব্যবসা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?    

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আমি চাই আরওয়া একটা ব্র্যান্ড হোক। দেশের মাটি ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে টাঙ্গাইল তাঁত পণ্য এক্সপোর্ট করতে চাই। আমার উদ্যোগের মাধ্যমে অসংখ্য মানু্ষের কর্মসংস্থান হোক। 

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কত দিন ধরে ও আয় কেমন?

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আমার উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৩ মে। বর্তমানে উদ্যোগের বয়স ২ বছর ৮ মাস। রেভিনিউ সন্তুষ্ট জনক। শুধু উইর কথাই যদি বলি, ১ বছরে আমার উইতে সেল ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।   

রাইজিংবিডি: নতুন উদ্যোক্তারা এই পেশায় আসতে চাইলে, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

নহরে জান্নাত মিষ্টি: আসলে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের মতো ই-কমার্স কেন্দ্রিক হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। নতুনরা আসবেই।  তবে নতুন উদ্যোক্তারা এই পেশায় আসতে চাইলে তাদের আগে বলবো ভালোভাবে স্টাডি করে নেবেন। তাতে আপনাদের উদ্যোক্তা জীবনে রিস্ক কম হবে। ভালো করে জেনে বুঝে তারপর মাঠে নামবেন। সোর্সিং যেন অথেনটিক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই।

রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে।

নহরে জান্নাত মিষ্টি: অসংখ্য ধন্যবাদ রাইজিংবিডি ও আপনাকে।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়