ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মেহেরুন কুইনের স্বপ্নজুড়ে জামদানি  

ইসমাইল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
মেহেরুন কুইনের স্বপ্নজুড়ে জামদানি  

নিজের প্রতি আমাদের যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে, তেমনি সমাজের প্রতিও রয়েছে কিছু কর্তব্য। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি যেমন আমার পণ্য নিয়ে সবার সামনে প্রতিনিয়ত উপস্থিত হচ্ছি, ঠিক তেমনি কর্তব্যের জায়গা থেকে অন্য উদ্যোক্তাদের পণ্য মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এতে আমার কাজের প্রতি এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। আমি যেহেতু জামদানি নিয়ে কাজ করছি, তাই আজ আমার পণ্য জামদানি নিয়ে কাজ করে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন মেহেরুন কুইন। তাকে নিয়েই আজকের ফিচার।

মেহেরুন কুইন একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। তার ফেসবুক পেজের নাম ‘কুইন্স ড্রিম’। তিনি কাজ করছেন একমাত্র দেশীয় পণ্য জামদানি নিয়ে। কুইন্সের সিগনেচার পণ্য এই জামদানি।

মেহেরুন কুইন নিজেকে এখন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি গর্ববোধ করেন। তার জন্মস্থান পাবনাতে, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে দীর্ঘ দিন বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। তারপর নতুন কিছু করার নেশা, কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাই কুইনকে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে। 

মেহেরুন কুইন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম উইতে যোগদান করার পর থেকে কেবল শিখেই যাচ্ছেন এবং নিজেকে তৈরি করে যাচ্ছেন। তারপর ২০২০ সাল থেকে মূলত তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু। উই থেকে তিনি শিখেছেন কীভাবে অনলাইন পেজ খুলতে হয়, ডোমেইন, হোস্টিং, পডকাস্ট ও ওয়েবসাইট চালাতে হয়। উইতেই তিনি বেশি সাড়া পেয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘‘শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই উইর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপা ও সংগঠনটির উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারকে। আমাদের দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দেশি পণ্যের এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের। 

আমার উদ্যোগের নাম কুইন্স ড্রিম, স্বপ্নের আরেক নাম এই প্রতিষ্ঠান। কুইন্স কাজ করছে জামদানি শাড়ি, হাফ সিল্ক জামদানি থ্রি পিস, জামদানি কটন থ্রি পিস, জামদানি তসর ওয়ানপিস ও কটন ওয়ান পিস নিয়ে। সম্পূর্ণ নিজস্ব তাঁতে ১০০ শতাংশ কোয়ালিটিসম্পন্ন ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই জামদানি শাড়ি উল্লেখযোগ্য।

আমার পরিকল্পনা হচ্ছে কুইন্স ড্রিমকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানো। আমি চাই কুইন্সের পণ্য সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাক এবং বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ুক।’’

আসল ঢাকাই জামদানি শাড়ি তাঁতিরা হাতে বুনন করে বলে এগুলো তৈরি করতে অনেক কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। তাই যে কোনো শাড়ির তুলনায় এ শাড়ির দামটা একটু বেশি হয়। একটি তাঁতে প্রতিদিন দুইজন তাঁতি ১২/ ১৪ ঘণ্টা শ্রম দেন। ডিজাইন ভেদে পুরো শাড়ি তেরি করতে ৭ দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে।

আসল জামদানি শাড়ির সুতা কোনো অংশ বের হয়ে থাকে না। আসল জামদানি শাড়ির ডিজাইন দু’পাশেই এতটা মসৃণ থাকে যে, কোনটা সামনের অংশ আর কোনটা ভেতরের অংশ, তা পার্থক্য করা বেশ কঠিন। মেশিনে বোনা জামদানি শাড়ির উল্টো পিঠের সুতাগুলো কাটা কাটা হয়ে থাকে এবং খসখসে হয়।

কুইন আরো বলেন, ‘‘উই থেকে পেয়েছি অনেক, যা বলে শেষ করা যাবে না। আন্তর্জাতিক মানের কোর্সে ট্রেনিং করার সুযোগ পেয়েছি, ওয়ার্কশপ করার সুযোগ পেয়েছি। উইতে আমার এই পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে, তার জন্য উইকে আমার এক টাকাও দিতে হয়নি। শুধু উই থেকে নিচ্ছি আর নিচ্ছি।

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে লক্ষ্য অর্জনের যথেষ্ট আগ্রহী হতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। একজন মানুষের পক্ষে সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়া সম্ভব নয়, তাই টিম গঠন করে টিমের উপর নির্ভর করতে শিখতে হবে। সততা ও কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে হবে।

আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং বলতে অর্থনৈতিক সামাজিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি আমরা নানাদিক থেকে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। উদ্যোক্তা জীবনে আমার স্বামী আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমি মনে করি একজন উদ্যোক্তার মূলধন বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং না, কারণ ইচ্ছাশক্তি থাকলে কম মূলধনেও উদ্যোক্তা হওয়া যায়। আসলে যে পণ্য নিয়ে কাজ করবেন, সেই পণ্য সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে ও ধৈর্য্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আমার প্রথম মেসেজ থাকবে, কোনো কিছুকে একদম হুবহু অনুকরণ না করা। কারণ, কারো একটা বিজনেস ভালো হচ্ছে, ঠিক আছে আমিও সেটা নিয়ে কাজ করি। এটা না করে তরুণ উদ্যোক্তাদের করা উচিৎ, তারা যেটাতে পারদর্শী এবং নিজে যেটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেইটা করা। আমি বলবো, কোনো কাজে শর্টকাট না খোঁজা। সৎ হতে হবে ও কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। 

কুইন্স আগামীতে কলকাতায় জামদানি কটন শাড়ি রপ্তানি করবে, তার জন্য বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই নিশা আপুকে।

লেখক: উদ্যোক্তা, জামদানি কাব্য।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়