‘সুতোর পরশে’ আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তা শামীমা
মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম
শামীমা নাসরিন আঁখি। দুই বোনের মধ্যে বাবা-মায়ের আদুরে ছোট সন্তান তিনি। নিজ জেলা ময়মনসিংহ হলেও বাবার চাকরির সুবাদে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে জন্ম তার। বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে শামীমা এক ছেলে ও এক মেয়ের মা। তার স্বামী একজন প্রকৌশলী হলেও নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন অনলাইন উদ্যোক্তা।
‘সুতোর পরশ’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে তার উদ্যোগ। তার পেজের পণ্যের মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে হাতের কাজের বিভিন্ন ধরনের নকশি থ্রি-পিস ও শাড়ি।
শামীমার ইচ্ছা ছিল পুলিশ অফিসার হওয়া। ব্যবসা করবেন এটা কখনো চিন্তাও করেননি তিনি। তবে কিছু একটা করার ইচ্ছেটা অনেক আগে থেকেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন। নিজের প্রতি একটা আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ছিল তিনি কিছু করতে পারবেন। কিন্তু কী নিয়ে কাজ করবেন, কীভাবে শুরু করবেন এটা বুঝতে পারেননি। এমনকি এসব বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার মতোও কেউ ছিল না তার। ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই- কমার্স ফোরাম) থেকেই মূলত ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা পান তিনি।
শুরুতেই পরিবার থেকে সাপোর্ট পাননি শামীমা। তাই নিজে টাকা জমিয়ে এমন লুকিয়ে লুকিয়েই সংগ্রহ করেন ব্যবসার পুঁজি। যতটুকু ভয় কাজ করছিল, ঠিক ততটাই আত্মবিশ্বাস ছিল তার। ইনভেস্ট করার পর অনেক দিন পণ্যগুলো ঘরে পড়েছিল। তারপরেও হাল ছাড়েনি শামীমা। শুধু ভেবেছেন ধৈর্য ধরে লেগে থেকে শেষটা দেখার অপেক্ষায় কাজ করে গেছেন দিনের পর দিন।
নিজের উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে শামীমা বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা জীবনের হাতেখড়ি হয়েছে উই এবং রাজিব আহমেদ স্যারের মাধ্যমে। যখনই হতাশ হয়ে যেতাম, ঠিক তখনই স্যারের কথাগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম। ব্যবসার ক্ষেত্রে পড়াশোনায় ফেসবুক গ্রুপ ডিএসবি (ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ) আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। একটা অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে জানার জন্য ডিএসবি গ্রুপের তুলনা নেই। আরো একজনের কথা না বললে অন্যায় করা হবে, সে হচ্ছে আমার স্বামী। তার সাহায্য ছাড়া আমি অনেকটা অচল।
সুই সুতার এই কাজগুলোর প্রতি অনেক আগে থেকেই আমার একটা ভালো লাগা কাজ করতো। ছোটবেলা থেকেই আমার মাকে এসব কাজ করতে দেখেছি। আর সেখান থেকেই আমার এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার চিন্তা ভাবনার শুরু হয়। শুরুতে অনেক ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। পড়াশোনা করে কাপড়ের বিজনেস করছি। এছাড়াও মেয়েদের কত ধরনের সমস্যাই হয়ে থাকে। আমি আমার পণ্যকে তুলে ধরার জন্য একটু পরিপাটি হয়ে ছবি অথবা ভিডিও দিচ্ছি, সেটা নিয়ে ট্রল শুরু হয়ে যায়। কিংবা আমার ছবি দিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তবে সবকিছু কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে বলে এখনো থেমে যাইনি।
মাত্র এক বছরে ক্রেতাদের মন জয় করতে পেরেছেন শামীমা। তিনি চান তার উদ্যোগের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে দেশীয় নকশি পণ্য ছড়িয়ে পড়বে। তার সুতার পরশের ভালো মানের পণ্যের জন্য তাকে সবাই চিনবে। একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারার ইচ্ছা পোষণ করেন শামীমা নাসরিন।
ঢাকা/মাহি
আরো পড়ুন