ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ই-কমার্স নিয়ে কী ভাবছেন উদ্যোক্তারা

মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৮ মার্চ ২০২১  
ই-কমার্স নিয়ে কী ভাবছেন উদ্যোক্তারা

ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ফলে দেশে এখন তৈরি হয়েছে, হচ্ছে অনেক উদ্যোক্তা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়।  

বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে হিমশিম খেয়েছে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসময় ঘর সংসার সামলিয়ে দেশের অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন অনেক নারী উদ্যোক্তা। নিজেদের হাতে বানানো পণ্য, নিজ জেলার ঐতিহ্য ও বিভিন্ন প্রকার পণ্য নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করে সফল হয়েছেন অনেকেই।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে পালন করে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালন করা হচ্ছে এই দিনটি। ঘর, অফিস বা ব্যবসার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একই সঙ্গে পালন করেন অনেক নারী। যারা দেশের বিলুপ্ত প্রায় পণ্যকে নতুন করে তুলে ধরছেন দেশ-বিদেশে। সেইসঙ্গে ই-কমার্স নিয়ে কাজ করছেন অনেক উদ্যোক্তা। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে যেখানে প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন এই অঙ্গনের ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা।

রাজিব আহমেদ, সাবেক প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ই-ক্যাব

বাংলাদেশে ই-কমার্স এমন একটি বিজনেস সেক্টর, যেখানে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিশেষ করে ফেসবুক কমার্সে নারীরা বেশ ভালো করছে। তাদের অনেকের ট্রেড লাইসেন্স নেই, টিআইএন এসব নেই। তাই তাদের বিজনেসে আরো ফর্মাল কাঠামোতে আনার ব্যাপারে আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।

কাকলী তালুকদার, স্বত্বাধিকারি, কাকলী’স অ্যাটিয়ার

করোনার জন্য যখন মানুষ চাকরি হারিয়েছে, ঠিক সে সময় ঘরে বসে থাকা নারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে হয়ে উঠেন উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা আরো গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফান্ড দেওয়া দরকার। যেন তারা তাদের ব্যবসাকে আরো গুছিয়ে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অনেক নারী দেখা যায় তাদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কিছু ফান্ডের জন্য ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না। এখন যদি তাদের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তাদের এই অগ্রযাত্রা আরো গতিশীল হবে।

ফান্ড বলতে আমরা লাখ লাখ টাকার ঋণকে বুঝি। কিন্তু অনলাইনে ফেসবুক পেজ খুলে ব্যবসা করতে মোটা অংকের টাকার বা ফান্ডের দরকার নেই। ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া গেলেও অনেক নারী উপকৃত হবেন।

আমি মনে করি অর্থ বরাদ্দের জন্য একটি সুস্পষ্ট কাঠামো নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ দেখা যায় একজন নারী অর্থের জন্যই তার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভয় পান। তাই তাদের জন্য যদি সুস্পষ্ট অর্থ বরাদ্দের কাঠামো নিশ্চিত করা যায় ও অর্থের সুষ্ঠু বন্টন হয় তাহলে অবশ্যই তারা উদ্যোগ নিতে ভয় পাবেন না।

নিগার ফাতেমা, স্বত্বাধিকারী, আরিয়াস কালেকশন

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের ভূমিকা অনেক। গত বছর প্যান্ডামিকে আমরা দেখেছি নারীরা কীভাবে সংসারের হাল ধরেছিল। একজন নারী যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য, পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। বর্তমান জগতে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় নারীরা ঘরে বসে আয় করছেন। অল্প পুঁজিতে শুরু করছেন নিজ স্বপ্নপূরণে যাত্রা।

সব প্রতিবন্ধকতা নারীদেরই সমাধান করতে হবে। নারীদের নিজের ও নিজের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস থাকতে হবে এবং ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজের ভয়ে পেছানো যাবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীদের সব রকমের সুবিধা নিশ্চিত করছেন আমাদের সরকার। ই-কর্মাসের মাধ্যমে নারীরা ঘরে বসেও কাজ করতে পারে অল্প পুঁজিতে। শুধু তাই নয় ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘরে  বসে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। প্রতিনিয়ত নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার অংশ গ্রহণের মাধ্যমে  বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জানতে হবে। আজকাল নারীদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা আছে, সেই সব ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হবে। সর্বোপরি নারীরা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করছে সামনে  আরো করবে। লাখো নারী ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবে। নিজের ও নিজের দেশকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।

রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া, স্বত্বাধিকারী, পরিধান শৈলী

নারীদের জন্য নারী দিবস উদযাপনের পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথ ও প্রশস্ত করা প্রয়োজন। ই-কমার্স নারীদের কর্মসংস্থান ও আত্মনির্ভরশীলতার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক পন্থা। ই-কমার্স সবদিক থেকেই নারীদের জন্য উপযোগী কর্মক্ষেত্র। বর্তমানে ই-কমার্সের মাধ্যমে নারীরা ঘরে বসেই নিজস্ব বিজনেস পরিচালনা করে নিজের পরিচিতি তৈরির পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে নিজের পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে। 

তবে ই-কমার্সে নারীদের সম্পৃক্ততার ইতিবাচক দিকসমূহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, ই-কমার্স সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় স্কিলের অভাব, পুঁজি, সামাজিক ও পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের ই-কমার্স উদ্যোক্তা হওয়ার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এ প্রতিবন্ধকতাসমূহ পার করে ই-কমার্স নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা ও দেশের অর্থনীতিতে।

উম্মে সাহেরা এনিকা, স্বত্বাধিকারী, তেজস্বী 

একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সে নারীদের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীরা সব ভয়, শঙ্কা কাটিয়ে কাজ করায় আগ্রহী হচ্ছেন। এটি অবশ্যই ভালো দিক।

এতে করে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং পরিবারকেও সময় দিতে পারছেন। এর ফলে পরিবারসহ চারপাশের মানুষের কাছে তারা সম্মান পাচ্ছেন।

নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে তাদের নজর দিতে হবে। ই-কমার্স হলো শিক্ষিত মানুষের জায়গা। তাই নারী উদ্যোক্তাদের বেসিক স্কিল বৃদ্ধি করার সময় এসেছে। দেশীয় পণ্যের এই ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়, অনেকে একই পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তাই নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে হলে নিজের পণ্য নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, কাস্টমারদের দ্রুত রিপ্লাই দিতে হলে বাংলায় দ্রুত লেখা খুব জরুরি। এছাড়া ও আইটি বিষয়ে জ্ঞান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনার সেরা জায়গা ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ (ডিএসবি) গ্রুপ। এখানে যদি কেউ প্রতিদিন নিয়মিত সময় দেন, তাহলেই নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারবেন।

পরিবারের সাপোর্ট পেলে একজন নারী যে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন, তা বর্তমানে অনেকেই দেখিয়ে দিয়েছেন। 

সালমা নেহা, স্বত্বাধিকারী, টেস্ট বিডি

৩৬৫ দিনের ১ বছরের মধ্যে ১ দিন নারী দিবস। এটা আমাদের পুরো নারী জাতিদের জন্য আমি মনে করি সম্মানের। বর্তমানে ই-কমার্সসহ সবখানে নারীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। বিশেষ করে ই-কমার্স সেক্টরে। তবে পরিবার, সমাজসহ প্রতিটা পদক্ষেপে নারীদের অনেক প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়। আমরা নারী আমরা সবকিছুই সামলে এগিয়ে যেতে পারি। এই আত্মবিশ্বাস থেকেই মূলত নারীরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মতো অনেক কাজই করছে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি সরকারের আগে পরিবার সাপোর্ট আসে, তাহলে নারীরা অনেকাংশে এগিয়ে যাবে। আজকের নারী দিবসে আমার একটাই চাওয়া, পরিবর্তন হোক এবং স্বচ্ছ হোক আমাদের নারীদের চারপাশ।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়