জীবনযুদ্ধে জয়ী উদ্যোক্তা তানজিনা আফরোজ নীশো
মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম
তানজিনা আফরোজ নীশো, বাবার বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও জন্ম রংপুরে নানার বাড়িতে। কিন্তু বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা তার। বর্তমানে ঢাকার খিলগাঁও এলাকাতেই অবস্থান করছেন নীশো।
১৯৯৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর চলে যান ইতালিতে। এরপর ইতালির ত্রেভিসো শহরের মাস্মিমো আলবেরিনি ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৪ সালে হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়ালেখা করেন তিনি।
দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় ব্যবসা করলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ব্যবসা বন্ধ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে নিজ দেশে ফিরে অনলাইন এবং অফলাইনে নিজের তৈরি করা খাবার নিয়ে পুনরায় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন তিনি। এমন একজন পরিশ্রমী-সংগ্রামী নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া।
রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
তানজিনা আফরোজ নীশো: আমার ব্যবসার গল্পটা একটু বিস্তারিত বলি। ২০১৪ সালে ইতালি থেকে মালয়েশিয়াতে যাই ব্যবসার উদ্দেশ্যে। সেখানে একটা সুপার শপের ব্যবসা করি। কিন্তু ২০১৭ সালে ভিসাগত কিছু সমস্যার জন্য মালয়েশিয়ায় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। অনেক টাকা লোকসান দেওয়ার পর দেশে ফিরে আসি। দেশেই কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই। ২০১৮ সালে খিলগাঁও এলাকায় একটা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার সময় আবার অনেক বড় লোকসানের সম্মুখীন হই। সেটাও বন্ধ করে দিতে হয়।
আমি ২০২০ সালের ২১ মার্চ উই’র (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) সন্ধান পাই। এর পরপরই লকডাউন শুরু হয়। সেই সময়টায় আমি একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। একদিন উইর অনলাইন কার্যক্রমে যোগ দেই। সেখানে বিভিন্ন আপুদের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনি ও নিজের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার রাস্তা বা সাহস খুঁজে পাই।
এরপর রাজিব আহমেদ স্যারের কথা শুনে আবার অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জানি। এরপর নিজের গতানুগতিক অনলাইন ব্যবসাটা চালু করি। অবশ্য আমার বন্ধ হয়ে যাওয়া রেস্টুরেন্ট এখন আবার চালু করেছি বনশ্রী এলাকাতে।
রাইজিংবিডি: কী ধরনের খাবার নিয়ে ব্যবসা করছেন?
তানজিনা আফরোজ নীশো: সব ধরনের খাবার নিয়ে কাজ করছি। রান্না করা খাবার তো আছেই (ইতালিয়ান, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, বাংলা) এছাড়াও কেক, বেকারি আইটেম, ফ্রোজেন ফুড, মিষ্টি করে থাকি। উইর কালারফুল ফেস্টে আমার তৈরি ঘি দিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই এবং রেডিমিক্স মসলা (বিরিয়ানি, তেহারি, রোস্ট, রেজালা, হালিম) এক্সপোর্টের জন্য রেডি করি।
রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কী অনলাইন কেন্দ্রিক ছিল?
তানজিনা আফরোজ নীশো: ব্যবসার শুরুটা যদিও অফলাইনেই ছিল। কিন্তু করোনাকালে সেটা অনলাইন হয়ে যায়। বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইন দুইভাবেই ব্যবসা চালাচ্ছি।
রাইজিংবিডি: আপনার উদ্যোগের সফলতার কথা জানতে চাই।
তানজিনা আফরোজ নীশো: আমি একটু এক্সেপশনাল খাবার নিয়ে কাজ করি। আমার ব্যবসার প্রধান খাবার হলো পেঁপের লাড্ডু ও দই বড়া। কেউ কেউ আমাকে পেঁপের লাড্ডু আপু নামেও চেনেন। সেটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।
রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?
তানজিনা আফরোজ নীশো: এখন পর্যন্ত যতটুকু সফল হতে পেরেছি, তার পুরো কৃতিত্ব রাজিব আহমেদ স্যারের। স্যারের দেখানো পথে চলার পর থেকেই মানুষ আমাকে চিনতে শুরু করে। এছাড়াও আমার স্বামী সবসময় আমাকে সাপোর্ট করে ও ভাই বোনের সাপোর্ট পেয়েছি সবসময়।
রাইজিংবিডি: বর্তমানে ব্যবসা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
তানজিনা আফরোজ নীশো: আমি চাই আমার ঘি-এ ভাজা লাচ্ছা সেমাই ও মসলা বিদেশে রপ্তানি করতে। আমার রেস্টুরেন্টের শাখা থাকবে বিভিন্ন এলাকায়। বিশেষ করে কক্সবাজারে আমার রেস্টুরেন্টের একটা শাখা থাকবে, এটা আমার স্বপ্ন।
রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা কতদিন ধরে?
তানজিনা আফরোজ নীশো: অনলাইনে আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু করোনার সময় থেকে। এর আগেও আমি অফলাইনে ব্যবসা করেছি। তবে এখন ফেসবুক গ্রুপ উই থেকেই বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে।
রাইজিংবিডি: কাজ করতে গিয়ে কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
তানজিনা আফরোজ নীশো: জীবনে চলার পথে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়া তো স্বাভাবিক। এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
রাইজিংবিডি: নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
তানজিনা আফরোজ নীশো: উদ্যোগ শুরু করার আগে সেটা নিয়ে জানতে হবে, শিখতে হবে। তারপর উদ্যোগ শুরু করতে হবে। আর আমি মনে করি, আমি যা পারি, সে বিষয় নিয়ে উদ্যোগ শুরু করলেই ভালো করতে পারবো। তাই আগে শিখি। শিক্ষার কোনো শেষ নেই।
রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে।
তানজিনা আফরোজ নীশো: আমার উদ্যোগকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য রাইজিংবিডিকেও অনেক ধন্যবাদ।
ঢাকা/মাহি
আরো পড়ুন