ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডিবিসি উদ্যোক্তাদের প্রচারে আমার ওয়েবসাইট 

তমাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১৫ মার্চ ২০২১  
ডিবিসি উদ্যোক্তাদের প্রচারে আমার ওয়েবসাইট 

গত বছরের শুরুটা আমার জন্য চমৎকারভাবে হয়েছিল। বছরের শুরুতেই ছিল বান্দরবন ট্যুর। এরপর একটা রিসার্চের কাজ হাতে পেয়েছিলাম। কাজটা করতে পারলে ব্যক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও উপকৃত হওয়া যেত। সেইসঙ্গে নতুন এক অভিজ্ঞতা পেতাম। ঠিক তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই শিক্ষাবৃত্তির জন্যও নির্বাচিত হয়ে যাই। এত এত ভালো লাগা দিয়ে বছর শুরু হচ্ছে, ভেবেছিলাম জীবনের সেরা একটা সময় যাবে ২০২০ সাল।

কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। দু’মাস পার হতে না হতেই শ্রাবণের কালো মেঘ জমা হতে থাকে আশার আকাশে। হুট করেই সব কাল বৈশাখি ঝড় এসে ধ্বংস করে দিয়েছে। করোনা নামক ভয়াবহ মহামারি আমার আশার আলো নেভানোসহ পুরো দুনিয়াতেই নিজের ভয়ানক একনায়কতন্ত্র বিস্তার করে বসেছে। মাত্র কয়েক মাসেই বিশ্বের বুকে যে ভয়ানক তাণ্ডব চালিয়েছে, তা পৃথিবী কখনোই ভুলবে না।

করোনার প্রকোপ তখন দেশেও শুরু হয়ে গেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তখন বাধ্য হয়েই হল বন্ধ ঘোষণা করে। যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো হয়েছে। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার রিসার্চের কাজটাও বন্ধ হয়ে যায়। আবার অ্যালামনাইয়ের শিক্ষাবৃত্তির ভাইভা তখন সবে শুরু হয়েছে, এর মাঝেই লকডাউন। এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেটাও কর্তৃপক্ষকে বন্ধ করে দিতে হয়।

আমি বাড়ি চলে আসি ১৭ মার্চ। আমি তখন বাড়ি এসেছিলাম এক দিনের প্রস্তুতি নিয়ে। তখনো জানতাম না এটাই শেষ বাড়ি ফেরা এক বছরের জন্য। জামা-কাপড়, বই-পত্র সবই রেখে আসি তখন। বাড়ি আসার পরই শুনি হল বন্ধ ঘোষণা! ভেবেছিলাম হয়তো শুধু বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রাখবে কিন্তু হল খোলা থাকবে। হয়তো দু’সপ্তাহ বাদেই করোনা মানবতার খাতিরে চলে যাবে। আমরা আবার প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরব। কত দু’সপ্তাহ পার হলো, এক বছর হতে চললো। আর হলে ফেরা হলো না।

শুরুতে বাড়ি এসে পুরো বেকার। গ্রামে আসলাম, কিছু দিন থাকলাম। তখন বিরক্ত লাগতে শুরু হলো। বাধ্য হয়েই সময় কাটাতে কৃষি কাজের দিকে গেলাম। যদিও এই কাজে আমি দক্ষ না, বলতে গেলে এই কাজ করাই হয়নি তেমন। তাও করতে লাগলাম সময় কাটাতে। এক পর্যায়ে বেশ উপভোগ্য লাগতে শুরু হলো। এভাবে মাস দু’এক যেতে লাগলো। তখন একমাত্র অনলাইনই ছিল যোগাযোগ করার মাধ্যম বন্ধুদের সঙ্গে। সবাই গৃহবন্দী তখন।

কৃষি কাজ আর কত দিন করা যায়। এরপর মাঝখানে চীনা ভাষা শেখা শুরু করি। আমি তখন দুই মাসে নিজে নিজেই অল্প করে চীনা ভাষার HSK-1 শেষ করে ফেলি। তার আগে কিছু দিন জার্মান ভাষা শিখেছিলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি শুধু প্রতি ১৫ দিন পর পর বাড়ছেই। এদিকে আমিও একবার চীনা ভাষা, একবার জার্মান, একবার কৃষি কাজ এইগুলো করেই সময় কাটাচ্ছি। মাঝখানে একবার ইউটিউব দেখে কালোজাম মিষ্টিও বানিয়েছিলাম। সেটা খেতেও ভালো হয়েছিল।

এভাবে আর চলে না, পার্মানেন্ট কিছু করা দরকার। এই সময়টা কাজে লাগিয়ে ভিন্ন কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু কী করব, তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। এর মাঝে আমি বাংলাদেশ সরকারের LEDP প্রকল্প থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সের জন্য আবেদন করি। সেটাও প্রায় আবেদন করার দু’মাস পর কনফার্মেশন মেসেজ আসে। নভেম্বরের দিকেই আমাদের ডিজিটাল মার্কেটিং ক্লাসটা শুরু হয়। ভালোই শিখছিলাম ক্লাসগুলো থেকে। সরকারের এই উদ্যোগটা চমৎকার এবং যুগোপযোগী। ওটা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংটা শিখে নিয়েছিলাম। যদিও পরে আর ব্যস্ততার জন্য পুরো কোর্স শেষ করা হয়নি। তবে যেটুকু শিখেছিলাম ভালোই শিখেছিলাম।

আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তখন একটা উদ্যোক্তা শ্রেণি সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কমিউনিটি (ডিবিসি) নামে আমাদের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে, যেটাতে এখন ২২ হাজার সদস্য। এখানে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাই যুক্ত হতে পারবে। এই গ্রুপের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উদ্যোক্তারা নিজেদের ছোট ছোট উদ্যোগগুলো প্রমোট করতে পারে। এই গ্রুপে আমি যুক্ত ছিলাম কিন্তু কোনো দিন পোস্ট করা হয়নি। শুধু অন্যের উদ্যোগ দেখতাম আর কমেন্টে শুভ কামনা জানাতাম।

ডিসেম্বরে আমি নিজের একটা ওয়েবসাইট চালু করি বাস্তব সময় (bastob somoy) নামে। শুরুতে চিন্তা ছিল সাধারণ নিউজ পোর্টালগুলোর মতোই নিউজ সংগ্রহ করব। একদিন নিজের ওয়েবসাইটের প্রচার করতেই ডিবিসি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কমিউনিটি) গ্রুপে একটা পোস্ট দেই। পোস্টে তখন উল্লেখ করেছিলাম কোনো উদ্যোক্তা যদি নিজের গল্প, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আগ্রহী হয় তারা যেন যোগাযোগ করে। সেই পোস্টের মাধ্যমেই আমার ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু। কিন্তু আমি তখনো ভাবিনি ওরা এত চমৎকার সাড়া দেবে। এত আগ্রহ দেখাবে আমার সদ্য নতুন ওয়েবসাইটকে এত সাপোর্ট দেবে, সেটা কল্পনা করিনি।

সেই থেকে শুরু, এখন বেশ জনপ্রিয় আরো পরিচিত আমার বাস্তব সময়। উদ্যোক্তারা আমাকে নিয়মিত সহযোগিতা করছে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আগ্রহী হচ্ছে। আমার ওয়েবসাইটের বয়স এখন মাত্র ৫০ দিন। এই কয়দিনে আলহামদুলিল্লাহ ১৫ হাজার ভিজিটর পেয়েছি। নিয়মিত উদ্যোক্তাদের নিয়ে লিখে যাচ্ছি। সবাই আমার লেখা খুব পছন্দ করছে এবং ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। ক্যাম্পাসের উদ্যোক্তাদের কাছে আমি এখন খুবই পরিচিত মুখ। সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গেই আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমিও চেষ্টা করছি আমার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ছোট ছোট উদ্যোগকে প্রমোট করতে। তাদের মানসিক সমর্থন দিতে।

স্বপ্ন দেখি আমার ওয়েবসাইট একদিন উদ্যোক্তা প্রমোটের একটা বড় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হবে। আমার মাধ্যমে বিনামূল্যেই নিজের উদ্যোগের প্রমোশন করতে পারবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি উদ্যোক্তা। ডিবিসিতে বাস্তব সময় এখন একটা ব্র্যান্ড হয়ে গেছে।

ক্যাম্পাস থেকে করোনার সময় রিক্তহস্তেই ফিরে ছিলাম এক বছর আগে। মাঝখানে অনেক বারই ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়েছে। এখন নিজের আলাদা একটা পরিচয় হয়েছে, পরিচিতি বেড়েছে। উদ্যোক্তারা দেখলে আন্তরিকতার সঙ্গে ডাকে। সবার ভালোবাসা এতটা পাব, তা ভাবিনি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়