ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল উদ্যোক্তা তানিয়া

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২৫ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৮:৩৭, ২৫ মার্চ ২০২১
ই-কমার্স ব্যবসায় সফল উদ্যোক্তা তানিয়া

তানিয়া সুলতানা, ময়মনসিংহের মেয়ে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা গফরগাঁও উপজেলার পাচুলী গ্রামে। শিক্ষক বাবা ও চাকরিজীবী মায়ের ছোট সন্তান তিনি। স্বামী, তিন সন্তান ও যৌথ পরিবার নিয়ে নিজ বাড়ি ময়মনসিংহেই তার বসবাস।  পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যেখানে লোভনীয় চাকরি করে জীবন যাপন করেন, সেখানে তানিয়া স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হওয়ার। দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে বলেছেন তার উদ্যোগের গল্প। তানিয়ার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাইজিংবিডি ডটকমের উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া।

রাইজিংবিডি : কেমন আছেন?
তানিয়া সুলতানা :
ভালো আছি।

রাইজিংবিডি : আপনার পড়ালেখা ও কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই?
তানিয়া সুলতানা :
পাচুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত এরপর ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করি। স্কুলে পড়াশোনারত অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে পড়াশোনাতে কিছুটা গ্যাপ তৈরি হয়। এরপরেও পড়াশোনা বন্ধ করিনি। বর্তমানে আমি বিএসএস পরীক্ষার জন্য অধ্যয়নরত আছি।
কর্মক্ষেত্রে আমি একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা এবং এই পরিচয়টি দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।  আমার ফেসবুক পেজ বা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিরাজবৌ’। পাশাপাশি উদ্যোক্তা বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ উই’র (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স এন্ড ই-কমার্স ফোরাম) ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের যৌথ প্রজেক্ট ‘এসএমই ডিপি টু’ ময়মনসিংহ বিভাগের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

রাইজিংবিডি : ব্যবসা শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
তানিয়া সুলতানা :
আমি মনে করি প্রতিটা কাজ শুরু করাটা অনেক বেশি কঠিন। ছেলেমেয়েদের রেখে ব্যবসায় সময় দেওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। পরিবার থেকেও খুব সহজে মেনে নিবে কি না সেটা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। কারণ অনলাইনে ব্যবসা গতানুগতিক কাজ থেকে কিছুটা আলাদা। আবার আমি ময়মনসিংহ থেকে নারায়ণগঞ্জের পণ্য নিয়ে কাজ করি। তাছাড়া অন্য জেলা থেকে সেখানে কাজ করাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমি শুরুতে এটা নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হলেও বর্তমানে ম্যানেজ করে নিয়েছি। ব্যবসা কীভাবে শুরু করব, কেমন করে পণ্য সংগ্রহ করব, এসবের তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল অন্যতম বড় বাঁধা। কিন্তু আমার স্বামী এসব ব্যপারে আমাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন।

রাইজিংবিডি : কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?
তানিয়া সুলতানা :
আমার উদ্যোগের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জামদানি পণ্য নিয়ে কাজ করছি। জামদানিতে না না ফিউশন আনার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়তই।

রাইজিংবিডি : জামদানি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা কেন ছিল?
তানিয়া সুলতানা :
আসলে শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিল শাড়ি নিয়ে কাজ করার। নিজের যেহেতু শাড়ির প্রতি চরম দুর্বলতা কাজ করে, তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে শাড়িটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। উই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলাম। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল জামদানি নিয়ে কাজ করার। কিন্তু শুরু করার জন্য সঠিকভাবে পরামর্শ পাইনি। আমি উইতে যুক্ত হই ২০২০ সালের জুন মাসের ২৪ তারিখে। গ্রুপে সবার পোষ্ট দেখে অনুপ্রাণিত হই।  কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কী নিয়ে কাজ করব। আমার স্বামী আমাকে বলল তোমার তো জামদানি শাড়ি অনেক পছন্দ। তুমি এটা নিয়ে আরও জানার চেষ্টা কর এবং জেনে বুঝে কাজ শুরু কর। সেই থেকে আমি দীর্ঘ দেড় মাস জামদানি শাড়ি সম্পর্কে গুগোলে সার্চ করে পড়াশোনা শুরু করি। এভাবেই জামদানি পণ্য নিয়ে আমার কাজ করা।

রাইজিংবিডি : ব্যবসার শুরুটা কী অনলাইনকেন্দ্রিক না কী অন্যকোন উপায়ে ছিল?
তানিয়া সুলতানা :
আমার উদ্যোগের শুরু থেকেই আমি অনলাইনে ব্যবসা করছি। আমার উদ্যোগের নামে ওয়েবসাইটের কাজ চলছে। শীগ্রই ফেসবুক পেজের পাশাপাশি ওয়েবসাইটেও আমার পণ্য পাওয়া যাবে।

রাইজিংবিডি : আপনার ব্যবসার সফলতার কথা জানতে চাই।
তানিয়া সুলতানা :
আমার ব্যবসার সবচেয়ে বড় সফলতা নিজের নামের পাশে জামদানি শব্দটা যুক্ত হয়েছে। আমার সঙ্গে প্রথম দেখায় অনেকেই বলে, আপু আপনি তো জামদানি নিয়ে কাজ করেন! নিজের নামের চেয়ে উদ্যোগের নাম ‘বিরাজবৌ’ নামেই বেশি চেনে।

রাইজিংবিডি : উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?
তানিয়া সুলতানা :
শুরু থেকেই দুই পরিবারের (বাবা ও শ্বশুর বাড়ি) অকল্পনীয় সহযোগিতা পেয়েছি। আমার কাজের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার আমার স্বামী। আমার প্রত্যেকটি সাফল্যের পিছনে তার অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার ভাসুর ও জা প্রত্যেকটা কাজে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার বাবা-মা ও ভাই-ভাবিকে স্বপ্ন পূরণে সব সময় পাশে পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি উই’র প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুর প্রতি।

রাইজিংবিডি : ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনা কী?
তানিয়া সুলতানা:
আমি যেহেতু করোনাকালীনে ই-কমার্স উদ্যোক্তা হই, তাই ই-কমার্স নিয়ে আরও বেশি জানতে চাই। অনলাইনেই জামদানিকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমার স্বপ্ন বিশ্বের সব দেশের লোক আমার দেশের ঐতিহ্যকে চিনুক এবং জানুক।

রাইজিংবিডি : উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কতদিন ধরে এবং রেভিনিউ কেমন?
তানিয়া সুলতানা :
আমি ব্যবসা শুরু করেছিলাম ২০২০ সালের জুলাইয়ের ১৮ তারিখ।  ১০ মাসে জামদানি শাড়ির মোট বিক্রি প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। আমি বিশ্বের ৮ টি দেশে আমার জামদানি শাড়ি পাঠিয়েছি। এর মধ্যে বিদেশি একজন নাগরিক জামদানি শাড়ি নিয়েছেন। এটা আমার অন্যতম বড় সাফল্য।

রাইজিংবিডি : কাজ করতে গিয়ে কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?
তানিয়া সুলতানা :
কাজ করতে গিয়ে খুব বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আমি পরিনি। আমার ব্যবসাকে সবাই খুব সহজভাবে গ্রহণ করেছে। বরং সবার উৎসাহ পেয়েছি।

রাইজিংবিডি : ধন্যবাদ আপনাকে।
তানিয়া সুলতানা :
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমার কথাগুলো বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি রাইজিংবিডি কর্তৃপক্ষকে। আশা করি আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন ও নারী উদ্যোক্তাদের কথা তুলে ধরবেন দেশের মানুষের কাছে।

ঢাকা/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়