ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্রচারণার গুরুত্ব

আফসানা আফতাব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ৩০ মার্চ ২০২১   আপডেট: ০৮:২১, ৩০ মার্চ ২০২১
দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্রচারণার গুরুত্ব

সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে স্থানীয় পণ্যের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এরফলে বহু উদ্যোক্তা, যারা আগে বিদেশী পণ্য নিয়ে কাজ করতেন তারাও এখন দেশীয় পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন। ২০২০ সালের ৮ই মার্চ দেশে প্রথমবার কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে জনমনে আতংক চলে আসে। প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে সেবছর ২৬শে মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি তথা অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যেখানে সকলেই কমবেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, সেখানে অনলাইনে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে সফল হয়েছেন বহু নারী উদ্যোক্তা। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এই উদ্যোক্তারাও রেখেছেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বাংলাদেশে ই-কমার্স ক্রমেই শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্লাটফর্মে রূপ নিচ্ছে। দেশীয় পণ্যের পসরা নিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও পিছিয়ে নেই কোন অংশে। এমন ব্যবসাতে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বেশ এগিয়ে রয়েছেন। যে কোন ব্যবসাতে “প্রচারেই প্রসার” কথাটি মাথায় রেখে সকলকে এগিয়ে যেতে হয়। অনলাইনের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্রচারনায় গুরুত্ব দেওয়াটাও অতিব জরুরী। কিভাবে অনলাইন ব্যবসাতে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু পরামর্শ দেয়া হলো-

নিজ পণ্য সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে

একজন উদ্যোক্তা যে পণ্যটি নিয়ে কাজ করছেন সেটি সম্পর্কে তার পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। ব্যবসায় অগ্রসর হওয়ার আগে অন্ততপক্ষে একবছর পণ্যটি নিয়ে জানার চেষ্টা করতে হবে। তিনি যে সেবাটি নিয়ে বাজারে আসতে চাচ্ছেন; বাজারে আদৌ সেটির চাহিদা রয়েছে কিনা প্রথমেই তা জানা প্রয়োজন। তাছাড়া কেন পণ্য/সেবাটি নিয়ে আগাতে চাচ্ছেন, পণ্যটির সুবিধা, ত্রুটিগত সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানতে হবে। একজন ক্রেতা যখন তার পণ্যটি ক্রয় করতে চাইবেন, তখন যদি তাকে প্রশ্ন করা হয় এবং তিনি যদি উত্তর দিতে না পারেন তাহলে ক্রেতা তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি ক্রেতার মনে নেতিবাচক ধারনাও জন্মাতে পারে।

তথ্যবহুল কন্টেন্টের দিকে নজর দিতে হবে

বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটির বেশি। সে হিসেবে ধরে নেয়া যায়, ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য এক বিশাল মার্কেট রয়েছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা উদ্যোক্তাগন তাদের কার্যক্রম চালাতে মূলত ফেসবুককেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ব্যবসায়িক পেইজ ও গ্রুপগুলোতে প্রচারণার পিছনে বেশ সময় ব্যয় করলেও, দেশীয় পণ্য নিয়ে যুৎসই কন্টেন্টের অভাবে তারা বিশাল জনগোষ্ঠীর নিকট পৌছাতে পারছেন না। পণ্য/সেবার মূল আকর্ষন হচ্ছে তার তথ্যবহুল কন্টেন্ট ও ছবি। এসমস্যা সমাধান করা গেলে সফল হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

টার্গেট কাস্টমার খুঁজে বের করা

আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন বা করতে চাচ্ছেন, সেটার ক্রেতা কারা সেই সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারনা থাকতে হবে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে মার্কেট এনালাইসিস করা হচ্ছে আপনার প্রথম কাজ। যে বয়সের ক্রেতাদের জন্য আপনি কাজ করছেন; তাদের সঙ্গে আপনাকে মিশতে হবে,  কথা বলতে হবে।  তাদের সমস্যা জানতে হবে ও আপনার উদ্যোগগুলো তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারছে কিনা এসব বিষয় যাচাই করে একটি টার্গেট কাস্টমার ডাটাবেস তৈরি করতে হবে। এতে আপনি আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।

প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে

যতই দিন যাচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগ হচ্ছে নতুনসব ফিচার। একজন অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি যদি প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ না হোন, তাহলে আপনাকে সব সময় পিছিয়ে থাকতে হবে এবং অন্যের উপর নির্ভর করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। তাই নিজের উদ্যোগ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই কমপক্ষে এক বছর আইটির বিভিন্ন দিকগুলো জানতে হবে। যারা বুঝে উঠতে পারছেন না যে কিভাবে শুরু করবেন; তাদের উদ্দেশ্যে বলবো “ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ” ফেসবুক গ্রুপট হচ্ছে আপনার জন্য শেখার সঠিক জায়গা। সেখানে বাংলায় সহজভাবে আইটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। আপনি যদি অনলাইন ব্যবসায় টিকে থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আইটির বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

অর্গানিক রিচ কিভাবে আনতে হয় তা জানতে হবে

যেহেতু আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন বা করতে চাইছেন, তাই কিভাবে পণ্য/সেবার পোষ্টগুলোতে কাস্টমার এনগেজমেন্ট বাড়াতে হয় তা জানা জরুরী। অনেকেই পেইজ এবং পোস্টে রিচ বাড়াতে ডলার খরচ করে বুষ্ট করে থাকেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে অনলাইন ব্যবসায়ের মূলভিত্তি হচ্ছে কন্টেন্ট। পণ্যের গুনগতমান ও চাহিদা মাথায় রেখে কাস্টমারদের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।

যত বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট তৈরি হবে, তত বেশি তারা আপনার পেইজে সময় দিতে পছন্দ করবেন। সম্প্রতি ফেসবুক বিভিন্ন গ্রুপগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সেখানে তুলে ধরতে পারেন। যদি আপনি জামদানি বা খেশ(এক ধরণের দেশীয় পোশাক) নিয়ে কাজ করেন, তাহলে এবিষয়ে যত তথ্য আছে তা আপনি আপনার লেখার মাধ্যমে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করুন, তাহলেই আপনার গ্রুপে অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও রয়েছে আপনার পার্সোনাল প্রোফাইল, যা হতে পারে আপনার পণ্য প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আপনি যে পণ্যটি নিয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে আপনার প্রোফাইলে বিভিন্ন ধরনের তথ্য শেয়ার করতে পারেন। কোনপ্রকার সেল পোস্ট না দিলেও মানুষ জানতে আগ্রহী হবে আপনি কোন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। এটি আপনার ব্যাক্তিগত পরিচিতিও বৃদ্ধি করবে।

কিন্তু মূল সমস্যা হলো কমবেশি সকলেই সরাসরি সেল পোস্ট দিতেই বেশি পছন্দ করেন যার জন্য দিন শেষে তাদের কাছে হতাশার কথাই বেশি শুনতে পাই আমরা। যখন আপনি আপনার পণ্য নিয়ে লেখালেখি করবেন তখন জানার জন্য হলেও আপনার পেইজ, গ্রুপ এবং প্রোফাইলে অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। হয়তো সেই এনগেজমেন্ট থেকেই তারা আপনার ক্রেতাও হয়ে যেতে পারেন।

ক্রেতার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন

আপনার ক্রেতা হচ্ছে আপনার বস। তাকে আপনি যত ভালো সেবা দিবেন, আগামীতে তিনি আপনার জন্য আরও দশজন ক্রেতা নিয়ে আসার পথ তৈরি করে দিবেন। কখনই তাদের সঙ্গে বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। ক্রেতার প্রতি আপনি যত বেশি আন্তরিক হবেন, আপনার জন্য ব্যবসায়ে তা ঠিক ততটাই সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।

পরিশেষে এটাই বলতে চাই; আমাদের দেশীয় পণ্যের চাহিদা যেভাবে বেড়ে চলেছে, সেই ক্রমধারা বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের উদ্যোক্তাদের উপরেই বর্তায়।  নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ববোধই পারে এই সামগ্রিক লক্ষ্যকে সুনিপুন ভাবে অর্জন করতে। তাই নিজেদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা/সিনথিয়া/সাব্বির

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়