ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ই-কমার্স : দেশীয় পণ্যের একটি সম্ভাবনাময় খাত

সালাউদ্দিন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ১ এপ্রিল ২০২১  
ই-কমার্স : দেশীয় পণ্যের একটি সম্ভাবনাময় খাত

গতানুগতিক ধারা অতিক্রম করে; আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এখন আমাদেরকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে অন্যদের মত আমরাও পারি, তা প্রমাণিত। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রতিটি সেক্টরেই ডিজিটালের ছোঁয়া; যা করোনার এই দুর্যোগকালীন সময়ে বেশ ভালভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। মানব জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার কত বেশি প্রয়োজন তা এই বৈশ্বিক মহামারি সকলকে দেখিয়ে দিয়েছে।

ডিজিটালাইজেশনের দরুন একদিকে যেমন সকল কাজ দ্রুততর হচ্ছে, অন্যদিকে সব খাতে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান, ঘুচছে বেকারত্ব। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদপুষ্ট দিক হচ্ছে বহুল জনপ্রিয় খাত ই-কমার্স। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় কিংবা সেবা আদান-প্রদানের সুবিধার নামই হচ্ছে ই-কমার্স। প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে কমবেশি সকলেই এখন অনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে আসছেন। ই-কমার্স মূলত গতানুগতিক ব্যবসায়িক ধারণা থেকে ভিন্ন, কারণ পণ্য ক্রয় করতে এখন সরাসরি বাজারে আসতে হয় না। ঘরে বসেই চাহিদামাফিক পণ্য/সেবা পেয়ে যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে৷ বিক্রেতা/সেবাদানকারীরাও পাচ্ছেন সারা দেশজুড়ে তাদের গ্রাহক। এটি আমাদের আধুনিকতার পরিচায়কও বটে। শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ই-কমার্সের আলো। চাকরির পিছনে না ছুটে শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরাও ক্রমেই নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন, দুঃসময় কাটিয়ে হাসি ফুটে উঠছে তাদের মুখে। সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে একেকটি পরিবারে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা ১০-১১ বছরের মত হলেও মূলত এর প্রসার ঘটে ২০২০ সালেই। অর্থনীতির চাকা যেখানে স্থবির হয়ে পড়ছিল, তখনই এটি আমাদের জীবনে অত্যন্ত আর্শীবাদ হয়ে দেখা দেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এসময়ে অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে ৬০-৭০ শতাংশ। এখাতের প্রায় ১,২০০ প্রতিষ্ঠানে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তাছাড়া যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে, তা হচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের হার ক্রমশ বৃদ্ধি। লক্ষাধিক নারী উদ্যোক্তা ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে ইতোমধ্যেই সফলতার মুখ দেখেছেন। তাই বলা যায়, দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ই-কমার্স মানুষের মাঝে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

ই-কমার্সে রয়েছে আমাদের দেশীয় পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা। গভীরভাবে চিন্তা করলে বিষয়টি সহজেই উপলব্ধিতে আসবে। আধুনিকতার নামে পশ্চিমা সংস্কৃতি পালন এবং অন্যের দেখাদেখি গতানুগতিক ব্যবসায়িক ধারনাগুলো আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ এবং দেশীয় পণ্যের বাজার বৃদ্ধিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলেরই রয়েছে স্বকীয়তা, নিজস্ব পরিচিতি এবং আঞ্চলিক পণ্যসামগ্রী যা প্রতিনিয়ত প্রচারনার অভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছে। যেমন- মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি সম্পর্কে কজন জানেন? বান্দরবানে নাগরিকদের জন্য কি আদৌ সেটা জানার কথা? কিংবা উত্তরবঙ্গের সিদল সম্পর্কে মেহেরপুরের লোকেরা কতটুকুই বা জানেন! আমাদের সকলেরই দেশীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। প্রতিটি অঞ্চলের পণ্যগুলোকে যদি ই-কমার্সের মাধ্যমে সঠিকভাবে সকলের নিকট তুলে ধরা যায় তাহলে দেশীয় বাজার হবে অনেক বেশি মজবুত ও শক্তিশালী। ইলিশ, চিংড়ি, পাটজাত দ্রব্য এবং মসলিনের মত বিশ্বে পরিচিতি বাড়াতে ই-কমার্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যা সামগ্রিকভাবে দেশের মোট জিডিপির প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলবে অনেকটা।

শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যারের দূরদর্শীতা, দিকনির্দেশনা এবং ক্রমাগত উৎসাহের কল্যানে বর্তমানে দেশের কয়েক লক্ষ উদ্যোক্তা আজ দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। এক জেলার পণ্য সম্পর্কে অন্য জেলার মানুষ এখন সহজেই জানতে পারছেন, চাহিদামত সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছেন। পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসার দুটোই অনেক এগিয়েছে। বলা বাহুল্য, দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এখন সমৃদ্ধির পথে। দরকার শুধু একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করা এবং যত্নসহকারে লেগে থাকার মানসিকতা। দেশীয় পণ্যের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশে এক শিল্পবিপ্লব ঘটবে বলে আমি আশাবাদী, পাশাপাশি বেকারত্বেরও অবসান ঘটবে। কেনোনা আমার মতো বহু শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম দেশীয় পণ্য নিয়েই তাদের স্ট্যার্ট আপের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এদেরকে যদি একটু নার্সিং করানো যায়, প্রয়োজনমত সাপোর্ট দেয়া যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে এরাই অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে যাত্রা অনেক বেশি সহজ ও মসৃণ হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে এই খাত আরও বেশি শক্তিশালী হবে এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অন্যান্য কাজের মতই ই-কমার্সে সাফল্য পেতে প্রয়োজন ধৈর্য, একাগ্রতা এবং কঠোর পরিশ্রমের। 

লেখক : স্বত্বাধিকারী- বিডিম্যানগ্রোভ ডটকম

ঢাকা/সিনথিয়া/সাব্বির

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়