ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আজ ই-কমার্স দিবস’

সালাউদ্দিন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ৭ এপ্রিল ২০২১  
‘আজ ই-কমার্স দিবস’

আজ ৭ এপ্রিল, ই-কমার্স দিবস। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ই-কমার্স দিবস পালন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের মতো এই বছরও দিনটি পালিত হচ্ছে। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কমবেশি সকলেরই ধারণা আছে। বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি বলতে আমি মূলত রাজীব আহমেদ স্যারকেই বুঝি। কেনোনা এই মানুষটি একাগ্রচিত্তে দেশের মাটিতে শতবাধা ও বিপত্তি অতিক্রম করে ই-ক্যাবের মতো জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন দাঁড় করান, যা বর্তমানে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই মানুষটির দিকনির্দেশনায় দেশের লক্ষাধিক মানুষ ই-কমার্সের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ২০১৪ সালে, রাজীব আহমেদ স্যার ও কিছু উদ্যোমী মানুষের সমন্বয়ে দেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয়। ই-কমার্স সম্পর্কে ধারণা বদলাতে এবং স্পৃহা বাড়াতে, তারা বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকরী প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন। যেখানে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয়েছেন হাজারো মানুষ। নারী উদ্যোক্তাদের শক্তিশালী করতে স্যারের দিকনির্দেশনায় সুসংগঠিত হয়েছে “উই” ফোরাম।

কয়েক বছর আগেও অনলাইনে বেচা-কেনার বিষয়টি এদেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হিসেবে আস্থা অর্জন করা বেশ কঠিন ছিল। অথচ সময়ের পরিক্রমায় আজ এটি বহুল আলোচিত ও সময়ের সেরা শিরোনাম। দোকান ঘুরে শাড়ি, গহনা, জুতা,  প্রসাধনীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার জন্য মানুষের অভ্যাস দিন দিন বদলাচ্ছে। মোবাইল কিংবা কম্পিউটার থেকে যে কোনো জায়গায় বসে পণ্য বেছে নিয়ে এক ক্লিকেই দেয়া যায় অর্ডার। ঝামেলাহীন ভাবে পণ্য চলে আসে ক্রেতার দেওয়া ঠিকানায়। আর বিক্রেতাও পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক। খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার তো আছেই।  চাইলে কিনে ফেলা যায় বাড়ি, গাড়ি, বিমান কিংবা ট্রেনের টিকিটসহ যা দরকার সব কিছু। অনলাইনে কেনাকাটার এই বিষয়টিকেই বলা হয় ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স। বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই সেবা গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছেই।

২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসারের একটা বাস্তব চিত্র আমরা দেখেছি। লকডাউনে যখন সবকিছু স্থবির, তখনও মানুষের চাহিদাগুলো বরাবরের মতোই ছিল। তাই ভরসা ছিল অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা। বিরূপ পরিস্থিতির কারণে মানুষ এই ধারার কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। গত একটা বছর অনলাইনে কেনাকাটা বুঝিয়ে দিয়েছে ই-কমার্স মানে প্রতারণা নয়, বরং ই-কমার্স মানে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য। ই-কমার্সের প্রসারের কল্যাণে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁতশিল্প ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন। হাসি ফুটেছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মুখে। শত দুরাবস্থায়ও কতো লক্ষাধিক পরিবার যে চলেছে ই-কমার্সের পণ্য/সেবা বিক্রির মাধ্যমে, তার হিসেব নেই। গত বছর ই-কমার্সের ভীত যেন মজবুত হয়েছে। এবার শুধু সেই ভীতের উপর দাঁড়িয়ে দেশি এবং বিদেশী পণ্য নিয়ে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের ইতিহাস রচনার পালা। অপেক্ষায় রয়েছি দেশে এই সেক্টরের শিল্পবিপ্লব দেখার।

বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি মসৃণভাবে চলতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এটি বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে প্রবেশ করেছে৷ সবকিছু ঠিক থাকলে, এ বছর ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে উন্নীত হওয়া যাবে ইন-শা-আল্লাহ। আশা করে হচ্ছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের ই-কমার্স খাতের আকার হবে ৩ বিলিয়ন ডলার। বার্ষিক ৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সম্ভাবনাময় খাতটি। শুধু মাত্র ২০২০ সালে লকডাউনের সময় দেশে ই-কমার্স খাতের আকার বেড়েছে ১৬৬ শতাংশ। কোভিড-১৯ সংক্রমণ হ্রাসে সামাজিক দূরত্ব মানার কারণে প্রথাগত ব্যবসায়িক খাতসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকাশ লাভ করেছে সেক্টরটি। বর্তমানে ই-কমার্স খাতকে টেকসই করার পাশাপাশি আরও সুসংগঠিত করা ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে মনোযোগী হওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। এটিকে আরও মজবুত করতে প্রয়োজন সততা, শক্ত মনবল এবং অদম্য পরিশ্রম। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পর্যায়ে ই-কমার্সের আলো ছড়িয়ে দেওয়াই হোক সকলের প্রত্যাশা। ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়াই হোক সকলের মূলমন্ত্র।

শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যারের মেধা, মননশীলতা ও দূরদর্শিতার কারণেই দেশের ই-কমার্স আজ এতটা সুন্দর পর্যায়ে এসেছে। এই মানুষটার চিন্তাভাবনা, দিকনির্দেশনা এবং উৎসাহের কারণেই আজ দেশের অজস্র মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছে, দেখেছে সফলতার মুখ। আজ ই-কমার্স দিবসে স্যারের নিকট আমার অশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং আমার বিশ্বাস দেশে ই-কমার্সে জড়িত প্রতিটা মানুষই স্যারের নিকট অশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

সকলকে ই-কমার্স দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

‘জীবন হোক স্বাচ্ছন্দ্যের,
অনলাইনে কেনাকাটা হোক আনন্দের’

ঢাকা/সিনথিয়া/সাব্বির

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়