ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পার্বত্য এলাকায় কাজুবাদামের চাষ

শিরীন সুলতানা অরুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১৮ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৬:২২, ১৮ এপ্রিল ২০২১
পার্বত্য এলাকায় কাজুবাদামের চাষ

বাদাম জাতীয় ফসলের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের স্থান শীর্ষে। এই বাদাম খেতে সুস্বাদু, মুখরোচক, পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান একটি পণ্য।

বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষ : থাংচুল বম, তিনি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার মুন্নুনপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। থাংচুল বম ১৯৬৬ সালে রুমার বেথেলপাড়া নামক স্থানে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বেথেলপাড়ায় প্রথম কাজুবাদামের গাছ রোপন করে সীমিত আকারে কাজুবাদামের চাষ শুরু করেন।  এরআগে, ১৯৬২ সালে কাজুবাদামের চারা কাপ্তাই-লেক পুনর্বাসন এলাকায় প্রদান করা হয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু সেটা বানিজ্যিক রূপ লাভ করেনি।

কাজুবাদামের বানিজ্যিক উৎপাদন : ১৯৭৬ সালে বানিজ্যিকভিত্তিতে রুমার বেথেলপাড়ায় ১৫টি পরিবার এবং পাইন্দু এলাকায় ১০টি পরিবার কাজুবাদাম চাষ শুরু করে। এরপর থেকে এর চাষ সমগ্র পার্বত্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।  ১৯৮০ সালে কাজুবাদামের বিক্রি শুরু হয়। 

প্রথমে কাজুবাদাম তেমন বিক্রি হতো না। শুধু কাজু আপেল যা স্থানীয় ভাষায় টাম ফল নামে পরিচিত, সেটা খাওয়া হতো। আর কাজুবাদামের শেলসহ লাকড়ি দিয়ে পুড়িয়ে বাঁশ বা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বাদাম বের করা হতো। আর এই বাদাম লবন, মরিচ মিশিয়ে জুড়ং (হামান দিস্তার স্থানীয় নাম) দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া হতো। আর এই ভর্তা সাধারণত শাক সিদ্ধ বা অন্যকোন সবজির সঙ্গে খাওয়া হতো।  বম সম্প্রদায়ের লোকজন এখনো বাদাম পুড়িয়ে খায়। 

রুমা উপজেলায় কাজুবাদামের বাগান পরিদর্শনকালে বম সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, কাজুবাদাম চাষে তারা এখনো পুরনো পদ্ধতিই ব্যবহার করছেন।

মুনলাই পাড়ার কার্বারী (পার্বত্য এলাকায় গ্রাম প্রধান) বাবু লিয়েন অং বম বলেন, ‘আমরা এখনো আগের দিনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। আমাদেরকে যদি প্রশিক্ষণ আর সরকারি কিছু সুবিধা দেওয়া হতো, তাহলে আমরা আরও ভালো এবং বেশি পরিমানে কাজুবাদাম উৎপাদন করতে পারতাম’।

বর্তমানে পার্বত্য এলাকার কাজুবাদামের চাষাবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্যমতে, এই এলাকায় ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ অর্থ বছরে কাজুবাদামের আবাদ যথাক্রমে ৩,৭৬৭ একর, ৩,৭৬৭ একর এবং ৫,৩০৮ একর।  এই তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় দিন দিন কাজুবাদাম আবাদের পরিমাণ বাড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পরিচালক বাবু পবন কুমার চাকমা জানান, ‘পার্বত্য এলাকায় অনেক আগে থেকেই বানিজ্যিকভাবে কাজুবাদাম চাষ শুরু হয় কিন্তু মাঝে কয়েক বছর বাজারজাত আর প্রসেসিংয়ের অভাবে উৎপাদন কিছুটা কমে গিয়েছিল। বিগত কয়েক বছরে আবার কাজুবাদামের আবাদ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু কাজুবাদাম পচনশীল দ্রব্য নয়, তাই সংরক্ষণ করা যায় সহজেই। বর্তমানে কাজুবাদামের বাজার আবার সৃষ্টি হয়েছে এবং কৃষকরাও এক্ষেত্রে আগ্রহী। তাই আমি আশাবাদী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কাজুবাদামও দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানীযোগ্য একটি অন্যতম পণ্য হিসাবে আবির্ভূত হবে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীন খাগড়াছড়িতে অবস্থিত পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকতা  ড. মুন্সী রাশিদ আহমেদ বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার কাজুবাদামের প্রধান সমস্যা হলো প্রকৃত জাত নির্বাচন, আন্তঃপরিচর্যা এবং প্রসেসিং। কৃষকদেরকে ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা FAO (ফুড অ্যান্ড এগ্রো অর্গানাইজেশন) এই বিষয়ে কাজ করছে। দেশের কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাজ করছে। প্রশিক্ষণ আর সহযোগিতা পেলে কৃষকরা আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে আশা করি।’

দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) যেভাবে দেশি পণ্যকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, এর ফলে দেশের মানুষের কাছে দেশি কাজুবাদামের চাহিদা বাড়ছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে কাজুবাদাম চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে। এক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ভবিষ্যতে কাজুবাদাম হতে পারে বাংলাদেশের রপ্তানীমুখী পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।

লেখক : স্বত্বাধিকারী, এস এস এগ্রো প্রোডাক্ট।

রাঙামাটি/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়