ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারে কনটেন্ট মার্কেটিং

সালাউদ্দিন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ১০ মে ২০২১  
ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারে কনটেন্ট মার্কেটিং

একটা সময় ছিল, যখন সংবাদপত্র পাঠ, সমসাময়িক আলোচনা, বিনোদনসহ যেকোনো বিষয়ের অনুষ্ঠান এবং যাবতীয় বিজ্ঞাপনগুলো টিভিতে একটি চ্যানেলেই প্রচার করা হতো।  এছাড়া কোন বিকল্প ছিল না।

সময়ের সঙ্গে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে চালু হলো একের পর এক দেশি-বিদেশি চ্যানেল। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে টিভি চ্যানেলগুলোতে নতুন-নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে, ভিন্ন ধারার অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হলো।  পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সেগুলোর প্রচারকার্যের জন্য বিজ্ঞাপনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেলো। দর্শকদের আকর্ষণ করতে চটকদার সেই বিজ্ঞাপনগুলো ক্রমাগত প্রচার হতো চ্যানেলগুলোতে।

পরিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে টিভি চ্যানেলগুলি জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করলো। 

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের পাশাপাশি, সামাজিক প্রচারণা ও বিনোদনের অন্যতম জগত হিসেবেও গন্য করা হয় এটিকে। সম্প্রতি ই-কমার্সের জন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাই বিভিন্ন পণ্য/সেবার কোম্পানি এবং বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোও সেখানে তাদের যাত্রা শুরু করেছে।  মানুষের মাঝে সামাজিক মাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা লক্ষ করে ব্যবসায়ীরা এটিকে তাদের প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

তবে যারা টেলিভিশনে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারণে বিরক্ত হয়ে ডিজিটাল প্লাটফর্মে এসেছেন, তাদের হোমপেইজে প্রয়োজনীয় তথ্যের চেয়ে যখন বেশি হরেক পণ্যের বিজ্ঞাপন আসে, তখন তারা বাধ্য হয়ে এড-ব্লক সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরার কারণ হলো, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আপডেট করা।  অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল ফলাফল দেয় না।  মানহীন প্রচারণা মানুষের মনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।  চাকচিক্যময় মানহীন কোন কিছু গ্রহণ করতে তারা নারাজ। মানুষ সবসময় রুচিশীল বিষয়ে আগ্রহী। তারা এখন তথ্যবহুল কিছু দেখতে চায় ও ভিন্ন কোন ধারার সাক্ষী হতে চায়।
আপনাকে যদি বিজ্ঞাপন দেখতে দেওয়া হয়, যেখানে নেই পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা, পরিষেবার বড়াই কিংবা জোর করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস।  কিন্তু আছে সুন্দর একটি গল্প তার সঙ্গে চমৎকার দৃশ্যায়ন এবং মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো ভিজ্যুয়াল কাজ। তাহলে কেমন বোধ করবেন? নিশ্চয়ই সেটি আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং আগ্রহ বাড়াবে। দর্শকদের এমনভাবে আকর্ষন করতে হয় যেন পণ্যের প্রচারণাও হয়, পাশাপাশি দর্শকদের মনে বিরক্তির উদ্রেকও না ঘটে। তথাকথিত ধারার বাইরে বিজ্ঞাপনের এই ধারার নামই হচ্ছে কনটেন্ট মার্কেটিং, যা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে ।  দর্শকরাও এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। আপনার ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারে কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের চাইতে ভালো উপায় আর কী-বা হতে পারে?

দেখে নেয়া যাক কেন কনটেন্ট মার্কেটিং করা উচিৎ-

গ্রাহকের চিন্তা-ভাবনায় প্রবেশ-
মানুষ কিন্তু হুট করেই ই-কমার্সের পণ্য দেখে কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠবে না।  তারা আগে অনলাইনে সার্চ করে; অন্যের কাছ থেকে রিভিউ জানতে চায়, তারপর ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়। আপনি যদি আপনার পণ্য/সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা, ইতিহাস কিংবা কোন গল্প আপনার পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে শেয়ার করেন, তাহলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্রেতা/ভোক্তাদের চিন্তা-ভাবনায় সহজেই ইতিবাচক স্থান করে নিতে পারবেন।

প্রোফাইল বিল্ডিং ও ইমেজ তৈরি-
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে ইমেজ তৈরি করে ব্র্যান্ড ভ্যালু ধরে রাখা।  না হলে নতুন গ্রাহক পাওয়ার সূচকটা নিম্নমুখী হবেই। কনটেন্ট মার্কেটিং আপনার ব্যবসায়ের ইমেজ তৈরি করতে এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি সার্চ ইঞ্জিনের র্যাংকিংয়ে আপনার অবস্থান উপরের দিকে রাখে ও দর্শকের সঙ্গে কানেশন বাড়ায়।  যার মধ্যে থেকে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা বেরিয়ে আসে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনার ই-কমার্স সাইটটির শক্ত প্রোফাইল এবং ইমেজ তৈরি হয়ে যায়।

দর্শক যখন গ্রাহক আর গ্রাহক যখন উপকারী বন্ধু-
কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে এটাই যে, এখানে দর্শকই আপনার গ্রাহক এবং সেই গ্রাহকই হচ্ছে আপনার বিজ্ঞাপন প্রচারক। অর্থাৎ, আপনার কনটেন্ট যদি দর্শক বা গ্রাহকের পছন্দর হয়, তাহলে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা কমিউনিটি সমূহে সেটি শেয়ার করে থাকে। ফলে এক শেয়ার থেকে গড়পড়তা সর্বনিম্ন ১০০ জন পর্যন্ত নতুন দর্শক পাওয়া সম্ভব। কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো কমিউনিটি তৈরি হওয়া। অন্যান্য মার্কেটিংয়ের চাইতে কনটেন্ট মার্কেটিংয়ে অতি দ্রুত ক্রেতাদের কমিউনিটি তৈরি করা যায়।

স্থায়ী এবং সাশ্রয়ী-
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি ঘটে তা হচ্ছে, আপনি ডলারের বিনিময়ে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য পণ্যের প্রচারণা চালালেন যা দর্শকদের এনগেজমেন্টে রাখে। নির্দিষ্ট সময় শেষে বুস্টিং বন্ধ হয়ে যায় এবং নতুন করে আবার অর্থের বিনিময়ে তা চালু করতে হয়। কিন্তু কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের বিষয়টা একদমই ভিন্ন। একবার যদি আপনি একটি ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করেন তবে সেটাই ৩/৪ বছর অতিবাহিত হলেও হাজার হাজার ভিউয়ার নিয়ে আসতে সক্ষম। এটা আজীবন আপনার বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করবে যা সাশ্রয়ীও বটে।

ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারের জন্য কনটেন্ট মার্কেটিং কী বা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ন্যূনতম একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সঠিক কৌশল জানা না থাকলে বিফলতার পাশাপাশি ই-কমার্স সাইট ধসে পড়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

জেনে নেয়া যাক সফলতার জন্য কীভাবে শুরু করা উচিৎ-
প্রথমেই চিন্তা করুন কীভাবে আগাতে চান। কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো পন্থা রয়েছে, যেমন- ব্লগিং, অডিও পডকাস্ট, ভিডিও কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ফ্যান পেজ, জনপ্রিয় ব্লগে গেস্ট পোস্ট,  রিভিউ বা রিসার্চ পেপার কিংবা গ্রন্থ প্রকাশ, ওয়েবিনার ইত্যাদি।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিগুলো থেকে দু-একটা কিংবা আপনার পছন্দসই ক্যাটাগরিসমূহ বাছাই করুন এবং সেগুলোতে নিয়মিত সক্রিয় থেকে দক্ষতা অর্জন করুন। আপনার ব্যক্তিগত গবেষণার উপর ভিত্তি করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

পরিশেষে, দক্ষতা এবং জ্ঞানের বাইরে কোন কিছু না করাই ভালো।  এতে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি।

লেখক : স্বত্ত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ ডটকম

ঢাকা/সাব্বির/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়