ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে অনলাইন উদ্যোক্তাদের ঈদের কেনা-বেচা

নহরে জান্নাত মিষ্টি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১৩ মে ২০২১  
টাঙ্গাইলে অনলাইন উদ্যোক্তাদের ঈদের কেনা-বেচা

তাঁতশিল্পের আখড়া হিসেবে টাঙ্গাইলের রয়েছে দেশজুড়ে খ্যাতি। অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানের উদ্যোক্তারাও পিছিয়ে নেই ই-কমার্সে, বরং বলা যায় অনেকখানি এগিয়েই রয়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের পণ্যের পসরা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন নিজেদের অনলাইন শপগুলো, যেখানে রয়েছে ক্রেতাদের একরাশ আগ্রহ। তাঁতশিল্পের পণ্য বাদেও অন্যান্য পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তারা এগিয়ে চলেছেন সদর্পনে। এবারের ঈদে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের প্রভাবে বিপণিবিতানগুলোতে কমবেশি মন্দা চললেও, টাঙ্গাইলের উদ্যোক্তারা তাদের অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাইজিংবিডির আজকের প্রতিবেদনে রয়েছে টাঙ্গাইলের কিছু উদ্যোক্তাদের নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে এবারের ঈদের অভিজ্ঞতার গল্প। চলুন শুনে নেয়া যাক তাদের কাছ থেকেই-

তানজিন তালুকদার তনু, স্বত্বাধিকারী-পিউনি

গতবছর ঈদ-উল-ফিতরের পর থেকে আমার উদ্যোগের কার্যক্রম শুরু হয়। অর্থাৎ অনলাইনে পণ্য নিয়ে কাজ শুরুর পর এবারের ঈদ হচ্ছে উদ্যোক্তা হিসেবে আমার প্রথম ঈদ। টাঙ্গাইলের বিখ্যাত তাঁতপণ্য নিয়ে কাজ করলেও আমার সিগনেচার পণ্য হচ্ছে “তাঁতে বোনা পাটের শাড়ি”। আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবারের ঈদে দারুণ সাড়া পেয়েছি ক্রেতাদের কাছ থেকে। পাটের শাড়ি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম অনেকেই  এটা সম্পর্কে জানেন না। তাই আমি আমার অনলাইন পেইজ পিউনি’র মাধ্যমে এটা সম্পর্কে মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। তারই ফলশ্রুতিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এবার ঈদে নিজেদের জন্য কিংবা উপহার হিসেবে পাটের শাড়ি, পাঞ্জাবী, ওড়না এবং ওয়ান পিসগুলো বেঁছে নিয়েছেন। শুধুমাত্র এবছরের ঈদেই ৪১,৯৫০ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছি। ঢাকা,চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ,নরসিংদী, গাইবান্ধার ক্রেতাদের কাছে গিয়েছে আমার পণ্যগুলো। অভিজ্ঞতার হিসেবে শুধুমাত্র এক বছরেই এমন সফলতা পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় একটি অর্জন।

সুবর্ণা আক্তার, স্বত্বাধিকারী- টাঙ্গাইল ফেব্রিক

আমি কাজ করছি মূলত টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস, এক কালার গজ কাপড়, বিছানার চাঁদর এবং  ব্লক-বাটিকের তৈরি বিভিন্ন পন্য নিয়ে। অনলাইনে ঈদের আয়োজনের পণ্য বিক্রয় বলতে গেলে উইর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম)  রোজার ওয়েভের মাধ্যমে এবং উইর হাটবাজারে এসে ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। এবারের ঈদে বিছানার চাঁদরের প্রতি ক্রেতাদের বেশ সাড়া পেয়েছি। পাশাপাশি ছিলো এককালার গজ কাপড় আর ব্লকের কুশন কভারের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও চাহিদা। এবার বেশ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই সময় পার করছি। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ২৮তম রোজার দিনেও ডেলিভারি দিতে হয়েছে। যেহেতু লকডাউন চলছে, বেশির ভাগ কুরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের সার্ভিস আপাতত বন্ধ রেখেছে। তাই বলা যায়, বিভিন্ন কুরিয়ারে ঘুরে ঘুরে বেশ কষ্ট করেই পণ্যগুলো ডেলিভারি দিতে হয়েছে।

শামীমা সুলতানা, স্বত্বাধিকারী-আনকোরা

ঈদ উপলক্ষে এবছর আনকোরাতে কাজের প্রচুর চাপ ছিল। যদিও আমি কাজ করছি খাবার  আইটেম(আচার,আমসত্ত্ব)নিয়ে, তারপরও কেনাবেচার দিক থেকে কোন কমতি ছিল না। রমজান শুরুর আগ থেকে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে এত আচার কে কিনবে! তবে আমার ধারনাকে ভুল প্রমান করেছে আনকোরার ক্রেতারা। বরং অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এবারের বিক্রয় অনেক বেশিই ছিলো, আলহামদুলিল্লাহ্‌।

প্রথমদিকে অল্পস্বল্প বিক্রয় হলেও শেষের দিকে চাপটা ছিলো অনেক বেশিই। এতটাই বেশি ছিলো যে, ঈদের ১২/১৩ দিন আগেই বাধ্য হয়ে অর্ডার নেয়া বন্ধ করতে হয়েছে। কারন আনকোরা কখনোই পন্যের মান নিয়ে আপোষ করে না। তবে আলহামদুলিল্লাহ্‌, এখন থেকেই ঈদের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রি-অর্ডার জমা হচ্ছে। শুধুমাত্র এই রমজানেই আনকোরার আচার এবং আমসত্ত্ব বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫০হাজার টাকার কাছাকাছি।

আয়শা খান, স্বত্বাধিকারী-টাংগাইল শাড়ি হাউস লিমিটেড

গত বছরের এই সময়টায় আমার কোন কাজ ছিলো না, বাড়ীতেই বসেই ছিলাম। অথচ আজ ঠিক একবছর পর আমার আমার উদ্যোক্তা জীবন নিয়ে লিখছি। সময়ের পরিক্রমায় সবই বদলে যায়, শুধু প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি এবং ধৈর্য। ই-কমার্সে আমার যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। আমি কাজ করছি তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিছ এবং পাঞ্জাবি নিয়ে। যতই সময় যাচ্ছে, দিন দিন ক্রেতাদের মাঝে এগুলোর চাহিদা বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র আমার অনলাইন পেইজের মাধ্যমেই সর্বমোট ১৫ লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছি, আলহামদুলিল্লাহ্‌। এবারের ঈদেও ক্রেতাদের পছন্দ , আগ্রহ এবং চাহিদার তালিকায় রয়েছে আমার পণ্যগুলো। রমজান এবং ঈদকে ঘিরে  তাই অনেক ব্যস্ততার মধ্যে দিনগুলো পার করছি।

টাঙ্গাইল /সাব্বির/সিনথিয়া

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়