ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ফেসবুক প্রোফাইলই ব্যবসার শক্তি উদ্যোক্তা সাদিকার

শিরীন সুলতানা অরুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২৪ মে ২০২১   আপডেট: ১১:৪৩, ২৪ মে ২০২১
ফেসবুক প্রোফাইলই ব্যবসার শক্তি উদ্যোক্তা সাদিকার

সাদিকা আক্তার, বাবা মার একমাত্র সন্তান তিনি। জন্মস্থান নরসিংদীতে হলেও বেড়ে ওঠা ও বসবাস ঢাকাতেই। ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন তিনি। ইচ্ছা থাকলেও স্নাতক শেষ করতে পারেননি সাদিকা। বর্তমানে শ্বশুরবাড়ি খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। সংসার জীবনের পাশাপাশি সবার কাছে একজন উদ্যোক্তা হিসেবেই পরিচিত হতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।

আসলে কোনরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়ায় উদ্যোক্তা জীবনে পদার্পণ করেন সাদিকা। হঠাৎ করে গতবছর লকডাউনের আগে বাবার থেকে মাত্র ১৩০০ টাকা নিয়ে শুরু করেছিলেন কাপড়ের ব্যবসা। কিন্তু এতে কেন যেন মন থেকে উৎসাহ পাননি তিনি। এরপর লকডাউনের মাঝেই হঠাৎ করে ঢাকা থেকে চলে আসেন খাগড়াছড়ি শ্বশুরবাড়িতে। এখানেই এসে গ্রামের হতদরিদ্র মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন হাতে বোনা বাঁশ টায়ার ও রেক্সিনের সমন্বয়ে তৈরি বসার মোড়া তৈরির কাজ।

প্রথমে অবশ্য ঝুঁকি নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। কারণ মোড়া তৈরি সময় সাপেক্ষ কাজ। মেয়ে হয়ে এমন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকেই কটু কথা শুনইয়েছেন। কিন্তু লোকমুখের সেসব কথাগুলিকে শক্তিতে পরিনত করেই নিজের কাজে এগিয়েছেন সাদিকা।

ইন্টারনেটের যুগে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর মধ্যে ফেসবুক মাধ্যম অন্যতম। অনেকেই এখন ঘরে বসে ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি কোনরকম ফেসবুক পেজ ছাড়াই সাদিকা ব্যবসা করছেন। এক্ষেত্রে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলই তার একমাত্র শক্তি। তার পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাহাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ টায়ার ও রেক্সিনের সমন্বয়ে হাতের তৈরি বসার মোড়া, কুরআন ও জায়নামাজ রাখার স্ট্যান্ড ও এই জেলার বিভিন্ন রকমের সিজনাল ফল নিয়ে।

নিজের ব্যবসা নিয়ে বলতে গেলে সাদিকা আক্তার বলেন, ‘ব্যবসা শুরুর আগে শুধু একটাই চিন্তা ছিল, আমাকে কিছু একটা করতে হবে। নারী বলেই যে ঘরে বসে থাকব,সবাই অবহেলা করবে এমনটা নয়। একটু সুযোগ পেলে নারীরা অনেক কিছু করতে পারে এটা প্রমান করতে চেয়েছিলাম। অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি নারী বলে। অনেকেই ইনবক্স ও ফোন করে উপহাস এবং বাজে ইঙ্গিত করত। এখনো এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পাইনি’।

তিনি আরো বলেন, ‘ কখনোই একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারতাম না, যদি একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম না পেতাম। ব্যবসা নির্ভর ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) হচ্ছে আমাদের সেই প্লাটফর্ম। উই’র উপদেষ্টা  শ্রদ্ধেয় রাজিব স্যার, প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং  ডিস্ট্রিক্ট হেড শিরীন সুলতানা অরুনা আপু আমাদেরকে সর্বদা দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে মা-বাবার দোয়া তো আছেই। আর একজনের কথা না বললেই নয়, তিনি আমার স্বামী। উনার সহযোগিতায় আজ আমি এতদূর আসতে পেরেছি।

সাড়ে ৯ মাসের উদ্যোক্তা জীবনে, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার অধিক মোড়া বিক্রি করেছেন শুধুমাত্র উইতে। এই পর্যন্ত দেশের ৪৪ টি জেলায় পৌঁছে গেছে সাদিকার হাতে বানানো ৪২০ জোড়া মোড়া। দেশের বাইরেও ৭ টি দেশ থেকে অর্ডার পেয়েছেন তিনি। পার্বত্য জেলার এমন ঐতিহ্যকে আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতির স্বপ্ন দেখেন সাদিকা। দেশ ও দেশের বাইরে বিলুপ্তপ্রায় এই পণ্যের প্রসারের লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

লেখকঃ স্বত্বাধিকারী, এসএসএগ্রো প্রোডাক্ট

খাগড়াছড়ি/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়