ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইকমার্সে টাঙ্গাইলের সম্ভাবনাময় পাটি শিল্প

আফরিন সুলতানা শিল্পী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ১২ জুন ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৯, ১২ জুন ২০২১
ইকমার্সে টাঙ্গাইলের সম্ভাবনাময় পাটি শিল্প

দেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে টাঙ্গাইলের পাটি শিল্প। যারা ব্যবহার করেন বা ধারনা আছে, তারা পাটির খ্যাতি সম্পর্কে বেশ ভালো জানেন। গরমে আরামদায়ক বলে ভোক্তাদের কাছে টাঙ্গাইলের শীতল পাটির চাহিদা সবচাইতে বেশি।

বলে রাখা ভালো, পাটিশিল্পের সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই জড়িত। কারন তাদের অনেকের পূর্বপুরুষদের পেশা ছিলো পাটি তৈরি করা। তাই পরিবারের পরম্পরা জিইয়ে রাখতে তারাও এটিকে বেঁছে নিয়েছেন তাদের পেশা হিসেবে। টাঙ্গাইল জেলার মূলত তিনটি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে শীতল পাটি তৈরি করা হয়। সেগুলো হচ্ছে- দেলদুয়ার উপজেলার হিংগানগর ও মাহমুদপুর গ্রাম; কালিহাতী উপজেলার সিলিমপুর, আউলটিয়া ,মহিষজোড়া ,চাটিপাড়া, পাটিতাপাড়া, খিলদা গ্রাম; এবং ঘাটাইল উপজেলায় বাণীবাড়ি ,পিচুটিয়া ,নাগবাড়ী ও কুতুবপুর। এসব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার এই শীতল পাটি তথা পাটি শিল্পের সাথে জড়িত।

পাটি তৈরীর প্রধান উপকরণ হচ্ছে বেত গাছ। গাছটির সুবিধা হলো, এটি একবার কাটার পর পুনরায় ওই অংশ থেকে আবার নতুন গাছ জন্মে। একেকটি গাছ লাগানোর ৫ বছর পর কাটার উপযোগী হয়। গাছটিতে হওয়া সাদা রঙের ফুলগুলো  খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  ফুল দিয়ে  মজার ও সুস্বাদু বড়া তৈরি করা যায় । তাছাড়া বেত গাছের ডাল ও পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।

পাটি তৈরির প্রসেস সম্পর্কে একটু জানাই। বেতগুলো কাটার পর সেগুলো দুই-একদিন রোদে শুকিয়ে তারপর  ছোট ছোট টুকরো করা হয়। শীতলপাটির ক্ষেত্রে টুকরো করা বেতগুলো প্রথমে সেদ্ধ করা হয় তারপর রোদে শুকাতে হয়। অন্যান্য পাটির ফালিগুলোকে শুধুমাত্র রোদে শুকিয়ে পাটি তৈরি করা যায়। নকশার জন্য ফালিগুলোতে রং করা হয়।

বেতের ধরন এবং নকশার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়। বিভিন্ন প্রকার পাটির মধ্যে রয়েছে; শীতল পাটি, লাল পাটি, ডাল পাটি, বুটকা পাটি, নামাজের পাটি ইত্যাদি।

প্রকারভেদে ডিজাইন হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয় মসজিদ মিনার, বিভিন্ন দৃশ্য, পাখি-জীবজন্তুসহ বিভিন্ন  জ্যামিতিক নকশা।

সাধারণতএকটা পাটি বুনতে ২-৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। তবে সময়টা নির্ভর করে পাটির দৈর্ঘ্য ও ডিজাইন এর উপর।সাধারণত বাড়ির মহিলারা পাটি বুনে থাকেন। বেত কাটা থেকে শুরু করে হাটে নিয়ে বিক্রি করা  পুরুষদের কাজ। হাট ব্যতিত তারা ফেরি করে এবং বিভিন্ন মেলায়ও পাটি বিক্রি করে থাকেন।

দামের কথা বলতে গেলে, প্রকারভেদ ও ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে অনেক পাটির দাম নির্ধারন করা হয়। বিভিন্ন দামের পাটি রয়েছে; তবে ডাল, বুটকা কিংবা লাল পাটির চেয়ে শীতল পাটির দাম তুলনামূলক বেশি।

পাটি শিল্পেও এসেছে নানা রকম ফিউশন ।বর্তমানে পাটি দিয়ে জুতা ,ব্যাগ, গহনা, শো-পিস তৈরি করা হয়। যা  ই-কমার্সে সম্ভাবনাময় একটি জায়গা দখল করতে পারে। পাটি শিল্পীরা আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য বহন করছে। একটি সময় ছিল যখন  শীতলপাটি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হতো। তবে বর্তমানে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং সহযোগীতা না পাওয়ার কারনে অনেকেই এই পেশা থেকে সরে আসছেন । আবার অনেকেই পূর্বপুরুষদের পেশা ছাড়বেননা বলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে কাছে তুলে ধরতে পাটি শিল্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনের ইদানিং পাটির চাহিদা বেড়েছে।তাই বলা যায় ইকমার্সের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারি-বেসরকারীসহ পরিশেষে সবার  সহযোগিতা প্রয়োজন।

লেখকঃ

স্বত্বাধিকারী- কুশিমনা

টাঙ্গাইল জেলা সহ-প্রতিনিধি

উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)

টাঙ্গাইল/জান্নাত/সাব্বির/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়